শেষের পাতা

এখনো সরেনি নির্বাচনী পোস্টার

মরিয়ম চম্পা, জিয়া চৌধুরী ও পিয়াস সরকার

১৯ নভেম্বর ২০১৮, সোমবার, ১০:১৫ পূর্বাহ্ন

দরজায় কড়া নাড়ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচারণা চালানো যাবে না। আর ইসির আদেশ অনুযায়ী গতকালই ছিল ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড সরানোর শেষদিন। কিন্তু কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন 
নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ইসির নির্দেশনা পুরোপুরি প্রতিপালিত হয় নি। কিছু এলাকায় পোস্টার-ব্যানার তুলে ফেলা হলেও তা করা হয়েছে অনেকটা দায়সারাভাবে। আবার কিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রঙিন পোস্টার ও ব্যানার এখনো রয়ে গেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই সরকারি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের।

বিকাল পর্যন্ত কাজীপাড়া, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর, আনসার ক্যাম্প, মিরপুর-১, জোনাকী আবাসিক এলাকা, লাভ রোড, স্টেডিয়াম এলাকা, পল্লবী, রূপনগর, কচুক্ষেত, বাউনিয়াবাঁধ ও ইসিবি চত্বর ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ওইসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইসির নির্দেশনা ও সতর্কতার পর দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের পরিচিত প্রার্থীরা পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন সরিয়ে ফেললেও তুলনামূলক কম জনপ্রিয় ও নতুন প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বেশি। সরজমিন ঘুরে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবারের মধ্যে মূল সড়ক ও আশেপাশের এলাকার দেয়ালে ও রাস্তার ওপর টাঙানো পোস্টার ও ফেস্টুন তুলে নিয়েছেন অনেক প্রার্থী। তবে, গলিপথ ও মূল সড়কের আশেপাশের এলাকায় এখনো পোস্টার ও ফেস্টুন দেখা গেছে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সারির প্রার্থীরাই আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন বেশি। মিরপুর সনি সিনেমা হল এলাকায় কথা হয় চা দোকানি সোহেল রানার সঙ্গে। তিনি বলেন, গত শনিবারের আগেও মিরপুর-১ ও রাইনখোলা এলাকায় বেশকিছু পোস্টার দেখেছি। শুক্র-শনিবার দু’দিনে অনেককে পোস্টার খুলে নিয়ে যেতে দেখেছি। তবে, গলির রাস্তা ও বিভিন্ন মহল্লায় এখনো কিছু কিছু পোস্টার আছে। সনি সিনেমা হল ধরে মিরপুর-৬ নম্বর এলাকা ও রূপনগরের সড়কে রোববার বিকালেও বেশকিছু পোস্টার দেখা গেছে।

ঢাকা-১৬ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন চান ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। এসব এলাকায় থাকা বেশির ভাগ পোস্টারই তার। এ ছাড়া নৌকার মনোনয়ন চেয়ে কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলহাজ মাকসুদুল ইসলামের পোস্টার ও ফেস্টুনও দেখা গেছে বেশ। মিরপুর-৬ নম্বর এলাকার বাসিন্দা ও বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আশরাফুল আলম বলেন, গত কয়েক দিনে অনেক প্রার্থীর পোস্টার খুলে ফেলতে দেখেছি। তবে কোথাও কোথাও এখনো পোস্টার লাগানো আছে। মিরপুর-১২ এলাকা থেকে কাজীপাড়া এলাকা পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পে দেয়া নিরাপত্তা বেষ্টনী, পল্লবী ও কালশী, ইসিবি এলাকায় দেখা গেছে ফকির মহিউদ্দিন ও তোফায়েল আহমেদের প্রচারণার পোস্টার। তারাও নৌকায় ভোট চেয়ে নিজেদের অবস্থানের কথা জানান দিয়েছেন ভোটারদের। রূপনগর এলাকায় সাবেক তারকা ফুটবলার ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আমিনুল ইসলামের কিছু পোস্টার দেখা গেছে। তবে ঢাকা-১৬ আসনেই পোস্টার দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি। কালশী থেকে ইসিবি চত্বর এলাকা পর্যন্ত মূল সড়কের দুই পাশে ও বাউনিয়াবাঁধ-কালশী, তালতলা এলাকায় ছেয়ে গেছে এসএ মান্নান কচির পোস্টার। এ ছাড়া ইসিবি চত্বরে নৌকায় ভোট চেয়ে পোস্টার টাঙিয়েছেন এম মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি মনোনয়ন চান বরিশাল-২ আসন থেকে।

আর ঢাকা-১৭ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী মেজর অবসরপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেনের কিছু পোস্টার দেখা গেছে। কচুক্ষেত, কাজীপাড়া ও আগারগাঁও তালতলা এলাকায় দেখা গেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম সাইফুল্লাহ ও গাজী মেজবাহুল হক সাচ্চুর বেশকিছু পোস্টার। এসব বিষয়ে কথা হয় ইসিবি চত্বর এলাকার বাসিন্দা ও সংগীতশিল্পী ইদ্রিস আনোয়ার পরাণের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভিআইপি ও আলোচনায় থাকা বেশির ভাগ প্রার্থী নিজেদের প্রচারণার পোস্টার- ফেস্টুন তুলে নিয়েছেন। অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় ও দ্বিতীয়-তৃতীয় সারির নেতারা নিজেদের আলোচনায় রাখতেই পোস্টার সাঁটিয়েছেন।’

গতকাল দুপুর ১টা বেজে ২৫ মিনিট। রাজধানীর ফার্মগেটের তেজতুরি বাজারের গলি থেকে বের হতেই চোখে পড়লো স্থানীয় নির্বাচনী এলাকার স্বল্প পরিচিত কয়েকজন নেতার বড় আকারের ৪টি পোস্টার। ফার্মগেটের সিনেমা হলের আশেপাশে কোনো পোস্টার না দেখা গেলেও পান্থপথের দিকে আগাতেই চোখে পড়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ৪ থেকে ৫টি পোস্টার। গ্রীনভিউ সুপার মার্কেটের বড় পিলারে সারিবদ্ধ দুই ডজনেরও বেশি পোস্টারের মুখচিত্র একজন শ্রমিককে তুলতে দেখা গেছে। এ সময় তেজগাঁও কলেজের ছাত্রলীগ নেতা সাকিব শুধুমাত্র পোস্টারের মুখচিত্র তুলে ফেলতে নির্দেশ দেন। আলাপকালে তিনি বলেন, আগামীকাল (আজ) পর্যন্ত সময় আছে। তাই ইসির নির্দেশ মোতাবেক আগামীকাল সকালের মধ্যে আমাদের সকল নেতাকর্মীর পোস্টার তুলে ফেলা হবে। পান্থপথ সিগন্যালে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারসহ বেশক’জন নেতার ছবি সংবলিত ১৫ থেকে ২০টি পোস্টার দেখা গেছে।

সরজমিন দেখা যায়, কাঁঠাল বাগান বাজারের গলির পথ ধরে আগাতেই চোখে পড়েছে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অর্ধশত পোস্টার ও ফেস্টুন। হাত পাখা মার্কায় ভোট দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে এই পোস্টারে। ১০ গজ সামনেই একটি আবাসিক বিল্ডিং কাম অফিসের দেয়ালে জাতীয় পার্টির নেতাদের ১৭টি পোস্টার। আরেকটু সামনেই মোড় নিতে ইউনিহেলথ নার্সিং কলেজের দেয়ালে সরকারি দলের নেতাদের ছবি সংবলিত বড় একটি ব্যানার দেখা গেছে। প্রায় ৫০ গজ সামনে গিয়ে একই চিত্র চোখে পড়েছে। বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দেয়ালগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের প্রায় শতাধিক পোস্টার দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রত্যেকের ফেস্টুন-ব্যানার ও পোস্টারে সরকারের উন্নয়ন, নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান এবং তাদের এমপি হিসেবে দেখতে চাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। পরিবাগ মসজিদের সামনে যেতেই মোতালেব প্লাজার পেছনের দেয়ালে ছাত্রলীগ নেতার অর্ধশত’র বেশি পোস্টার দেখা গেছে। সামনেই বিদ্যুৎ অফিসের দেয়ালে এবং অপর পাশে মডিউল হাসপাতালের পাশে একটি ডেভেলপার কোম্পানির দেয়ালে কয়েক শ’ পোস্টারের ধরন দেখে মনে হয়েছে কোনো দলীয় অফিসের চিত্র এটি। ফার্মগেটের তেজগাঁও সরকারি কলেজের সামনে বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার ফরিদুর রহমান খান ইরানের ছবি সংবলিত কিছু পোস্টার চোখে পড়েছে।

গতকাল ধানমন্ডি, ঝিগাতলা, শংকর, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেখেরটেক, কলাবাগান, শুক্রাবাদ ও রাজাবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায় ওই এলাকার দেয়ালে পোস্টার ও ব্যানার এখনো ঝুলছে। এরমধ্যে মধ্যে বেশির ভাগ ব্যানার ও পোস্টার ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নামে। ওই সব এলাকায় সড়ক সংলগ্ন ভবনের দেয়াল, বিদ্যুতের খুঁটি, টেলিফোন লাইনের খুঁটিতে এখনো ঝুলতে দেখা গেছে ব্যানার ও পোস্টার।

ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর এলাকার বিভিন্ন দেয়ালে চোখে পড়েছে ছিঁড়ে ফেলা পোস্টারের অবশেষ অংশ। পাশাপাশি নতুন পোস্টারও চোখে পড়েছে। ধানমণ্ডি লেকপাড়ে বড় পোস্টারে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড-এর পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে টানানো পোস্টারগুলোতে বড় করে লেখা ‘নৌকায় ভোট দিন’। এ ছাড়াও দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পোস্টার। পোস্টারগুলোর বর্তমান অবস্থা দেখে বোঝা গেছে এগুলো লাগানো হয়েছে কিছুদিন আগে যা এখনো তোলা হয়নি।
পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় সরকারি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছবি সংবলিত পোস্টার যে কারো নজরে পড়বে। তবে দেখা যায় রাস্তায় ছেঁড়া পোস্টারও যা পুরোপুরি তুলে ফেলা হয়নি। আবার বিভিন্ন সড়কের পাশে শোভা পাচ্ছে বড় ব্যানার। পোস্টারের আধিক্য দেয়া গেছে আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডিস্থ কার্যালয় ও তার আশপাশ এলাকায়। পোস্টারের রং আর অবয়ব দেখে বোঝা যায় তা লাগানো হয়েছে সম্প্রতি। ঢাকা-১৩ নির্বাচনী এলাকার মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেখেরটেকসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রায় সব পোস্টারই তুলে ফেলা হয়েছে। তবে গলির ভেতরের কিছু কিছু দেয়ালে পোস্টার রয়ে গেছে। এই এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাদেক খানের নামে বিচ্ছিন্ন কিছু পোস্টার চোখে পড়েছে। মোহাম্মপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় এই চিত্র কিছুটা বেশি। রাজধানীর কলাবাগান এলাকা ঘুরে দেখা যায় একই চিত্র। বিভিন্ন সড়কে বিদ্যুতের খুঁটি, গাছ, টেলিফোন লাইনের খুঁটি, সড়ক-সংলগ্ন ভবন ও বিভিন্ন স্থাপনার দেয়ালে টাঙ্গানো হয়েছে গুটিকয়েক পোস্টার। এখানে অন্য কোনো দলের পোস্টার চোখে না পড়লেও বর্তমান সংসদ সদস্যের ছবি সংবলিত পোস্টার চোখে পড়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status