প্রথম পাতা

গোলটেবিলে বক্তারা

সংখ্যালঘু নির্যাতনকারীদের নির্বাচনে মনোনয়ন না দেয়ার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার

১৮ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার ও সাম্প্রদায়িকতা নিষিদ্ধের আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেন, যেসব রাজনৈতিক দলের সদস্যরা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন করেছে তাদের মনোনয়ন দেয়া যাবে না। একই সঙ্গে ধর্মীয় উপাসনালয়কে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের বাইরে রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা। গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে নাগরিক সমাজের আয়োজনে ‘জাতীয় নির্বাচন: সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব দাবি করেন বক্তারা। নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান আলোচকরা।

বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসন ও পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। গোলটেবিল আলোচনায় আমন্ত্রিত সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অনুপস্থিত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সুলতানা কামাল বলেন, এতে করে প্রমাণ হয় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি তেমন একটা গুরুত্ব পায় না। সামনের নির্বাচনসহ যেকোনো নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক শক্তিকে নিষিদ্ধের প্রস্তাব করে তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িকতার চেতনায় ফিরে যেতে হবে।

সুলতানা কামাল আরও বলেন, সব মানুষের মর্যাদা ও সমানাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আলোচনায় মানবাধিকার কর্মী ও নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবির বলেন, যেসব রাজনৈতিক দলের সদস্যরা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন করেছে তাদের মনোনয়ন দেয়া যাবে না। আর যেসব সদস্য নির্যাতন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়নি তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম পরস্পর বিরোধী অবস্থান থেকে সরে এসে পুরোপুরি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান জানান তিনি।
খুশি কবির বলেন, নির্বাচনে দল দেখে নয় বরং যেসব প্রার্থী সংখ্যালঘুদের পাশে থাকবে, অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকবে তাদের ভোট দিতে হবে। অধিকার আদায়ের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বারবার জোর দাবি তুলতে হবে।

দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, দেশের প্রায় শতকরা ১২ ভাগ ভোটার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। এরপরও কোনো রাজনৈতিক দলই তাদের অধিকারের বিষয়ে সচেষ্ট নয়। তিনি বলেন, ভোট দিলে এক দল মারে, ভোট না দিলে আরেক দল মারে। এমন অবস্থায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের পরামর্শ দেন শ্যামল দত্ত। বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলই সংখ্যালঘুবান্ধব প্রার্থী চান না, তারা চান জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী। তাই রাজনীতির মধ্যদিয়েই সংসদে অংশ নেয়ার মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমস্যার সমাধান করতে হবে। আলোচনায় নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা মিনু বলেন, দেশের সব রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে শুধু সংখ্যালঘুদের অধিকারের কথা উল্লেখ থাকে। কার্যত কোনো দলই ক্ষমতায় গিয়ে তা বাস্তবায়ন করে না।

ইশতেহারের পাশাপাশি ক্ষমতায় গিয়ে যাতে অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করে সে জন্য দলগুলোকে চাপ দিতে হবে। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন আইনজীবী রানা দাস গুপ্ত। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে নারী সংরক্ষিত আসনের পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের জন্যও কমপক্ষে ৭০টি আসন  রাখতে হবে। সেই সঙ্গে অতীত সময়ে হিন্দু, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনার দৃষ্টামূলক শাস্তি কার্যকরের আহ্বান জানান এই মানবাধিকার কর্মী। গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। বিগত সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং আসন্ন নির্বাচনে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিসহ কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয় মূল প্রবন্ধে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status