প্রথম পাতা

‘ফের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে’

মিজানুর রহমান

১৮ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১০:২৮ পূর্বাহ্ন

জাতিসংঘে বাংলাদেশ উত্থাপিত প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ফের ভোট দিয়েছে চীন ও রাশিয়া। রাখাইনে গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তে জাতিসংঘ থার্ড কমিটিতে প্রস্তাব উঠেছিল। যার কো-স্পন্সর ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসিসহ ১০৩টি দেশ। বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়া যৌথভাবে প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। শুক্রবার নিউ ইয়র্কে এ নিয়ে ভোটাভুটিতে ১৪২টি দেশ পক্ষে ভোট দেয় এবং চূড়ান্তভাবে প্রস্তাবটি পাস হয়। তবে বরাবরের মতো চীন, রাশিয়াসহ মিয়ানমারের সহযোগী ১০টি দেশ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে এবং বিপক্ষে ভোট দেয়। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটাভুটির ফল জানানো হয়। এ নিয়ে মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গভীর হতাশা ব্যক্ত করেন। বলেন, আমাদের চেষ্টায় কো-স্পন্সরের সংখ্যা এবং প্রস্তাবের পক্ষে ভোটের সংখ্যা বেড়েছে। গত বছরের রেজ্যুলেশনে ৯৭টি দেশ কো-স্পন্সর ছিল। এবার সেটি ১০৩-এ পৌঁছেছে। থার্ড কমিটিতে ২০১৭ সালে পক্ষে ভোট ছিল ১৩৫, এবার এটি ১৪২। গতবার স্পন্সর হয়নি, সেশনেও অংশ নেয়নি এবার এমন অনেকে রাষ্ট্র পক্ষে ভোট দিয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, দুর্ভাগ্য, গতবার যারা বিরোধিতা করেছিল এবারও তারাই ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে’ ভোট দিয়েছে।

ওই কূটনীতিকের ভাষ্য মতে, আসিয়ান জোটে থাকা কম্বোডিয়া, লাউস ও ভিয়েতনামও প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। গত এক বছর ধরে আসিয়ান জোটের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ঢাকার চেষ্টায় কোনো কমতি ছিল না। দেশগুলো সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়ানো, সফর বিনিময় হয়েছে। সর্বশেষ আসিয়ানের চেয়ার সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি সরজমিন দেখানো হয়। বিদ্যমান সংকট সমাধানে আসিয়ান জোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে গত সপ্তাহে খোদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন! কিন্তু ফল কী হয়েছে- এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে কূটনৈতিক অঙ্গনে। অবশ্য বরাবরের মতো ভারত, ইন্দোনেশিয়াসহ ২৬টি দেশের প্রতিনিধি থার্ড কমিটির নির্বাচনকালে সেশনে উপস্থিত থাকলেও তারা ভোট প্রদান থেকে বিরত ছিলেন। গত বছরেও ওই ২৬টি দেশ সিদ্ধান্ত নিয়ে কারও পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নেয়নি, তারা অ্যবস্টেইন করেছিল।

পাস হওয়া রেজ্যুলেশনে যা আছে: শুক্রবার পাস হওয়া থার্ড কমিটির রেজ্যুলেশনে বলা হয়, রাখাইনে মুসলিমরা মিয়ানমারের স্বাধীনতার আগে থেকে প্রজন্মান্তরে বসবাস করছে। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন পুনর্বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব প্রদানের আহ্বান জানিয়ে মিয়ানমার সরকারকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর যারা অত্যাচার করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য। বর্তমান  রেজ্যুলেশনে মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘন তদন্তের জন্য দ্রুততার সঙ্গে নিরপেক্ষ মেকানিজম প্রতিষ্ঠার উপর  জোর দিয়ে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের মিলিটারির ওপরে  যেন বেসামরিক সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। রাখাইনে সামরিক অভিযানের কারণে নিয়মতান্ত্রিকভাবে  রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানানো হয়, এই অভিযান বন্ধের এবং এর জন্য যারা দোষী তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য।

আরও বলা হয়, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যেন নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে ফেরত যেতে পারে এবং রাখাইনে যেন জাতিসংঘসহ অন্যান্য সাহায্য সংস্থা কাজ করতে পারে। রেজ্যুলেশনে জাতিসংঘের মহাসচিবের ‘মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত’ নিয়োগের প্রশংসা করে বলা হয়, জাতিসংঘ যেন মিয়ানমারকে সহায়তার প্রস্তাব করে। এছাড়া, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনসহ সব সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সহযোগিতাকে উৎসাহিত করা হয়। রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন, নাগরিকত্ব প্রদান, কফি আনান কমিশন রিপোর্টের পূর্ণ বাস্তবায়ন, রোহিঙ্গাদের নিজগৃহে প্রত্যাবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয় এই রেজ্যুলেশন অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া,  রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্রুত যাচাই-বাছাই করে ফেরত নেয়ার জন্য এবং এ বিষয়টিও এই  রেজ্যুলেশনে উল্লেখ আছে। রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মধ্যে অস্থিতিশীল ও নিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতি যাতে করে সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ  নেবারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

২০১৭ সালের আগস্টে আচমকা রোহিঙ্গা ঢলের আগেও থার্ড কমিটিতে এ নিয়ে রেজ্যুলেশন হয়েছে। ২০১৫ সালে অং সান সুচি সরকার গঠনের আগে একই শিরোনামে  ‘মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি’- শীর্ষক একটি রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়েছিল। পশ্চিমা দুনিয়া উত্থাপিত ওই রেজ্যুলেশনে মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের ওপর জোর দেয়া হয়েছিল। সেখানে ১৯টি প্যারা ছিল, যার মধ্যে রোহিঙ্গা বিষয়ে শুধুমাত্র একটি প্যারা ছিল। ২০১৫ সালে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা রেজ্যুলেশনটির পক্ষে ১০৪টি দেশ ভোট পড়েছিল। চীন, রাশিয়া, ইরান, উজবেকিস্থানসহ ১৩ টি  দেশ ছিল ওই রেজ্যুলেশনের বিপক্ষে। সেই সময়ে বাংলাদেশসহ ৩৭টি রাষ্ট্র কারো পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট  দেয়নি। ঢাকা অ্যাবস্টেইন করেছিল। সেই তালিকায় ছিল ভারত, ইন্দোনেশিয়াও।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status