প্রথম পাতা

মামলার বাদী যখন খুনি

স্টাফ রিপোর্টার

১৮ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১০:২৭ পূর্বাহ্ন

ঢাকার আশুলিয়ায় বাসে নারী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌্‌ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলার বাদী জামাতা নূর ইসলাম নিজেই শাশুড়িকে খুন করতে বাসচালকের সঙ্গে ১০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন। ঘটনার এক সপ্তাহ পর বাসটি জব্দ এবং তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই বেরিয়ে আসে ঘটনা। গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান, পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মো. নুর ইসলাম (২৯), মো. স্বপন (৩৫) ও মোছা আমেনা বেগম (৪৮)। গত ৯ই নভেম্বর সন্ধ্যায় আশুলিয়ায় টাঙ্গাইলগামী একটি বাসে হত্যা করা হয় জরিনা খাতুনকে (৪৫)। বাস থেকে ফেলে দেয়া হয়েছিল তার বাবা আকবর আলী মন্ডলকে (৭০)। আকবর আলীর কাছে খবর পেয়ে ওইদিন রাতেই মরাগাং এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের পাশ থেকে তার মেয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

বনজ কুমার মজুমদার বলেন, শাশুড়ি খুন হওয়ার পর অজ্ঞাতদের আসামি করে আশুলিয়া থানায় অভিযোগ জমা দেন জামাতা ও নিহতের মেয়ে রোজিনার স্বামী নূর ইসলাম। কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে আসে নূর ইসলাম নিজেই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এই অভিযোগে নূর ইসলাম ও তার মা আমেনা বেগমকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। পাশাপাশি স্বপন নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ছিলেন নূর ও রোজিনার বিয়ের ঘটক। তিনি বলেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে ওই বাসে তুলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।

নিহত জরিনা সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী থানার খাস কাওলিয়া গ্রামের মহির মোল্লার স্ত্রী। তিনি নিজের বাবাকে নিয়ে আশুলিয়ায় জামাতা নূরের বাড়িতে এসেছিলেন। সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জে ফেরার জন্য আশুলিয়ার ইউনিক এলাকা থেকে টাঙ্গাইলগামী বাসে ওঠেন আকবর ও জরিনা। কিছুক্ষণ পর বাসে থাকা চালকের সহকারী আকবর আলী মন্ডলকে আশুলিয়া মরাগাং এলাকায় নামিয়ে দিয়ে জরিনা খাতুনকে নিয়ে চলে যায়। আকবর আলী তখন ঘটনাটি তার আত্মীয়স্বজনকে জানান। খবর পেয়ে জরিনার মেয়ের জামাই নুরল ইসলামসহ অন্যান্য আত্মীয়স্বজন আশুলিয়া ব্রিজের ৫০০ গজের মধ্যে জরিনাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।  পরে পুলিশ এসে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে।  জরিনার শরীরে কোনো ক্ষত না থাকলেও গলায় কালো দাগ ছিল।

ডিআইজি বনজ জানান, ৫ বছর আগে জরিনার মেয়ে রোজিনার সঙ্গে আশুলিয়ার নুরুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল। তার জামাতা, শাশুড়ি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা খুব নির্যাতন করে আসছিল। জরিনা প্রায়ই তাদের বাড়িতে গিয়ে সবকিছু মিটমাট করে দিতেন। কিন্তু গত সপ্তাহে তাদের ঝগড়াঝাটি চরম আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে রোজিনাকে তার স্বামী প্রচুর মারধর করে। ঘটনাটি জানাজানি হলে উভয় পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের বেশ অবনতি হয়। রোজিনার স্বামী ও তার শাশুড়ি তাদের পারিবারিক কলহের জন্য তার মাকে দায়ী করেন। তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে রোজিনার মাকে তাদের মধ্যে থেকে কীভাবে সরিয়ে দেয়া যায়, সেই পরিকল্পনা করতে থাকেন। পরিকল্পনামাফিক তারা ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে একটি মিনি বাস (ঢাকা মেট্রো জ-১১১৭৯২) এবং ওই গাড়ির চালক ও তার সহকারীসহ চারজনকে ভাড়া করেন।

তারা আগে থেকেই সেই বাসটি ওই এলাকার শিমুলতলা বাসস্ট্যান্ডে দাড়ি করিয়ে রাখেন। পরে জরিনা ও তার বাবাকে ওই মামলার আসামি স্বপন তাদের বাসে উঠিয়ে দেয়। বাসটিতে ভুক্তভোগী জরিনা ও তার বাবা ছাড়া অন্য কেউ না থাকায় আশুলিয়া এলাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরিয়ে রাত সাড়ে সাতটার দিকে আশুলিয়া ব্রিজের উত্তর পাশে প্রথমে আকবর আলী মণ্ডলকে মারধর করে ফেলে দেয়। পরে কিছু দুর যাওয়ার পর জরিনাকে তারা মারধর শুরু করে। বনজ কুমার বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ঘাতকরা জরিনাকে মারধর করে এবং তাদের মধ্যে অনেক ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে তারা তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status