দেশ বিদেশ

মেলার মতো আন্তরিকতা কর কার্যালয়গুলোতেও চান করদাতারা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৬ নভেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

নবমবারের মতো রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে চলছে আয়কর মেলা। রিটার্ন জমাসহ অন্য সেবা মিলছে অল্প সময়েই। মেলায় কর কর্মকর্তাদের আন্তরিকতায় খুব সহজেই আয়কর দিতে পারছেন করদাতারা। তাদের আক্ষেপ এমন আন্তরিকতা কর অফিসগুলোতে থাকলে সরকারের রাজস্ব আদায় আরো বাড়তো। মানুষেরও আস্থা বাড়তো কর অফিসের প্রতি। আয়কর মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে ব্যক্তি শ্রেণির বিভিন্ন করদাতার সঙ্গে কথা বলে তারা এই মন্তব্য করেন। নবমবারের মতো আয়োজিত আয়কর মেলা গতকাল ছিল তৃতীয় দিন। প্রথম দুদিনের মতো এদিনও মেলার প্রাঙ্গণে বুথগুলোতে ছিল প্রচুর ভিড়। এ ছাড়া মেলা প্রাঙ্গণে মুক্তিযোদ্ধা-সিনিয়র সিটিজেন বুথে হয়রানিমুক্তভাবে সেবা পেয়ে বেশ খুশি মুক্তিযোদ্ধারা। কর দিতে পেরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন তারা। সরজমনি দেখা গেছে, হাজার হাজার করদাতা সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে আয়কর দিচ্ছেন, আয়কর বিবরণী দাখিল করছেন; হাসিমুখে তাদের সেবা দিচ্ছেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মীরা। এ সময় অনেক করদাতাকে মেঝেতে বসেও রিটার্ন ফরম পূরণ করতে দেখা গেছে।
মেলায় আরিফ নামের একজন ফ্লোরে বসে রিটার্ন ফরম পূরণ করছেন। তিনি বলেন, ফ্লোরে বসে পূরণ করেও শান্তি। কারণ মেলায় যে পরিবেশ পাওয়া যায়, কর কার্যালয়গুলোতে সেরকম আচরণ পাওয়া যায় না। এখানে কর দেয়া সহজ। এমন পরিবেশ ও আন্তরিকতা কর অফিসগুলোতে থাকলে সরকারের রাজস্ব আদায় আরো বাড়তো। মেলায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও সহজে কর দিতে পারছেন। সাধারণ করদাতাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের উন্নয়নে প্রতিবন্ধীরা অংশ নিচ্ছেন।
প্রতিবন্ধী বুথের দায়িত্বে থাকা এনবিআরের সহকারী কমিশনার জানান, আয়কর মেলার প্রথম দিনে রিটার্ন দাখিল করেছেন নয়জন প্রতিবন্ধী করদাতা। দ্বিতীয় দিনে সেবা নিয়েছেন ১৫ জন। গতকালও ১৫ জন পার হবে বলে জানান তিনি। প্রতিবন্ধী বুথে কর প্রদানকারী আশরাফ উল্লা বলেন, কর দিতে পেরে আমি আনন্দিত। সামনে বছরে আরো বেশি কর দিতে চাই। কারণ, আমার দেয়া অর্থ দেশের উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে। নাম প্রিন্স মাহমুদ একটি বহুজাতিক কোম্পনিতে চাকরি করেন। তিনি বলেন, এবারই প্রথম নিজের ফরম নিজেই জমা দিতে এসেছি। এখানে এসে হেল্পডেস্ক থেকে শুনে নিয়েছি কি কি করতে হবে? সে অনুযায়ী রিটার্ন ফরম পূরণের জন্য কোনো জায়গা না পেয়ে মেঝেতে বসেই করছি।
তাসলিমা আক্তার বলেন, ফরম পূরণে ভুল হচ্ছে কিনা সন্দেহ হলেই সেটা হেল্পডেস্ক থেকে দেখিয়ে নেয়া যায়। তাই মেলাতেই রিটার্ন দাখিল করতে এসেছি। তাছাড়া কার্পেট বিছানো থাকায় মেঝেতে বসে ফরম পূরণে তাদের কোনো অভিযোগও নেই। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সিটিজেনরা কর প্রদান করছেন। কর দিতে পেরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। সামনের বছরে আরো বেশি কর দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন অনেকেই। কর দিতে আসা সিনিয়র সিটিজেন করদাতা আবু তাহের বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও কর দিয়েছে। বেঁচে থাকলে সামনেও দিব। আমার উপার্জনের অর্থ দেশের কাছে লাগবে, এটাই আমার শান্তি।
আয়কর বিবরণী দাখিলের পর বেঙ্গল গ্রুপের কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম বলেন, আমি সবসময় মেলায় এসে রিটার্ন দাখিল করি। কারণ মেলায় এসে কর দিলে সঙ্গে সঙ্গে প্রাপ্তিস্বীকারপত্র পাওয়া যায়। কিন্তু কর অঞ্চলে গেলে অনেক রকমের প্রশ্ন ও বিড়ম্বনার পাশাপাশি প্রাপ্তিস্বীকারপত্র পেতে অনেক দেরি হয়। জিমএই গ্রুপের কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান বলেন, মেলায় কর কর্মকর্তাদের কাছে যে আচরণ পাওয়া যায়, কর অফিসে গেলে সেটা পাওয়া যায় না। অথচ একই ব্যক্তি কর অঞ্চল বা রাজস্ব বোর্ডে যদি করদাতারা একই রকম আচরণ পেত, তাহলে দেশের আরো অনেক মানুষ কর দিতে আগ্রহী হতো বলে মনে করেন তিনি। আরকটি গ্রুপের কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন বলেন, মেলায় ঝামেলামুক্তভাবে কর দেয়া যায় বলে তিনি কয়েক বছর ধরে মেলায়ই আসছেন। সরকার যদি এভাবে ঝামেলামুক্ত উপায়ে কর আহরণের পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে আয়কর রিটার্ন দাখিল কয়েকগুণ বাড়বে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব খন্দকার খুরশিদ কামাল মেলায় বলেন, আমাদের গ্রাহক সেবা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ সেবা আরো বাড়ানোর জন্য আমরা এনবিআরের সকল কার্যক্রম অটোমেশন করা শুরু করছি। এ কার্যক্রম শেষ হলে সবাই একই রকম সেবা ও সুবিধা পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
সপ্তাহব্যাপী নবম আয়কর মেলার প্রতিপাদ্য ‘আয়কর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার ও ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ’। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলা শেষ হবে আগামী ১৯শে নভেম্বর। গত ৮ বছরে আয়কর মেলা পেয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ, বেড়েছে জনপ্রিয়তা। মেলায় সেবাগ্রহীতার সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও। ২০১০ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে আয়কর মেলায় সেবাগ্রহীতা ও রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে ১৯ গুণ। একই সময়ে মেলা থেকে নিবন্ধন নেয়া নতুন করদাতার সংখ্যা বেড়েছে ৫ গুণ ও রিটার্ন জমা দেয়ার সংখ্যা বেড়েছে ৬ গুণ।
মেলায় মিলছে যেসব সুবিধা: করদাতারা সহজেই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারছেন। ঢাকায় প্রতিটি কর অঞ্চলের জন্য আলাদা বুথ থাকছে। নেয়া যাচ্ছে নতুন কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন)। এনবিআরের ‘ই-পেমেন্ট’ ওয়েবসাইট ব্যবহার করে পরিশোধ করা যাচ্ছে কর। মুক্তিযোদ্ধা, নারী, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ করদাতাদের জন্য রয়েছে আলাদা বুথ। মেলায় স্থাপিত সোনালী ও জনতা ব্যাংকের বুথে করদাতারা আয়কর জমা দিতে পারছেন। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অধীন শুল্ক, ভ্যাট, সঞ্চয় অধিদপ্তর, বিসিএস (কর), একাডেমি, কাস্টমস একাডেমি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের পৃথক পৃথক বুথ রয়েছে। এসব বুথ থেকে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা সংশ্লিষ্ট বিভাগ সম্পর্কে সব তথ্য জানতে পারছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status