এক্সক্লুসিভ

মায়ের কাছে ফেরার আকুতি নাহিদের

শুভ্র দেব/কাজী আল আমিন

১৩ নভেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:৩৩ পূর্বাহ্ন

ট্রেনে কাটা পড়ে হাতা-পা হারানো নাহিদ মায়ের কাছে ফিরতে চায়। ঢাকা     মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) এখন অনেকটা অযত্ন-অবহেলায়   দিন কাটছে তার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগের মতো বিশেষভাবে খোঁজ রাখছে না। হাত-পায়ের ক্ষত কিছুটা শুকালেও মানসিকভাবে এখনও সুস্থ নয় সে। ঢামেকের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে গতকাল দেখা যায়, আনমনা হয়ে শুয়ে আছে নাহিদ। স্বাস্থ্য অনেক কমে গেছে। আগের চেয়ে মুখটা অনেক মলিন হয়ে গেছে।  চেহারার মধ্যে দুশ্চিন্তার ছাপ। নাহিদ মানবজমিনকে বলে, আগে আশেপাশের অনেকেই আমার খোঁজ নিতো। খাবার কিনে দিতো। এখন আর কেউ খোঁজ নেয় না। এখানে থাকতে আমার একদম ভালো লাগছে না। আমি মায়ের কাছে যেতে চাই। নাহিদ বলে, হাত-পায়ের অবস্থা ভালো না। নড়াচড়া করা যাচ্ছে না। বেডে শুয়ে শুয়েই মলমূত্র ত্যাগ করতে হয়। সে আরো জানায়, এক নাগাড়ে হাসপাতালের খাবার খেতে তার আর ভালো লাগে না। তার কাছে ভালো খাবার কেনার টাকা নাই। বিরিয়ানি খেতে তার খুব ইচ্ছে করে। সব কিছু মিলিয়ে অনেক ভেঙ্গে পড়েছে নাহিদ। এখন তার একটাই আকুতি, মায়ের কাছে ফিরতে চায়। কিন্তু দুর্ঘটনায় পড়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তার কোনো স্বজনের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
গত ৯ই সেপ্টেম্বর রাজধানীর হাতিরঝিল থানা এলাকার কাওরান বাজার-মগবাজার রেললাইনের মাঝামাঝি স্থানে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল ৯ বছর বয়সী শিশু নাহিদ। তার বাড়ি আখাউড়া রেলস্টেশন এলাকায়। ট্রেনে ট্রেনে বোতলজাত পানি বিক্রি করে করে সে ঢাকা আসছিল। ক্লান্ত শরীরে এক সময় সে ঘুমিয়ে পড়ে ট্রেনের ছাদে। গভীর ঘুমে থাকা নাহিদের টাকা ও পানি নেয়ার জন্য দুর্র্র্বৃত্তরা তাকে ফেলে দেয় ট্রেনের ছাদ থেকে। এতে তার ডান পা পুরো ও বাম হাতের কিছু অংশ কাটা পড়ে। খবর পেয়ে হাতিরঝিল থানা পুলিশ সদস্য আলি রেজা সেলিম তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তার অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক ছিল। এক পুলিশ সদস্য তাকে রক্ত দিয়ে বাঁচান। আর চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করে কেটে দেন তার ডান পা ও বাম হাতের কিছুটা অংশ। বর্তমানে নাহিদ ভর্তি আছে ঢামেক হাসপাতালের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের অর্থোপেডিকস ইউনিট-২। এই ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা মানবজমিকে বলেন, পুরোপুরি সুস্থ হতে তার আরো কিছুদিন সময় লাগবে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করছি।
এদিকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর নাহিদকে নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয় দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায়। রিপোর্ট প্রকাশের পর নাহিদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন এক আমেরিকা প্রবাসী। এ ছাড়া হাসপাতালে গিয়ে নাহিদকে দেখে তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী। তখন হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে আমেরিকা প্রবাসীর সাহায্যের টাকা নিয়ে সাক্ষাৎ করেন মানবজমিনের একটি টিম। পরিচালক সেই টাকা গ্রহণ না করে তার চিকিৎসার ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানান। এমনকি সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়ার জন্য অবগত করেন। অভিযোগ আছে ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমান ও অন্যান্য স্টাফরা নাহিদের কোনো খোঁজ খবর নিচ্ছেন না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status