খেলা

‘এটাই আমার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস’

স্পোর্টস রিপোর্টার

১২ নভেম্বর ২০১৮, সোমবার, ৯:২৬ পূর্বাহ্ন

বছরের শুরুতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পর পর দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি। এরপরের ৪ ম্যাচে হারিয়ে গেলেন মুমিনুল হক সৌরভ। তার সঙ্গে দলও যেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিল। অবশেষে প্রায় ৮ মাস পর ফের সেঞ্চুরি হাঁকালেন তিনি। গতকাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে দিনের শুরুতেই তিন উইকেট হারানো দলকে দেখালেন দিশা। তার ব্যাটিং নৈপুণ্যে কেটে গেল দলেরও অস্বস্তি। দিনের শেষ দিকে এসে ১৬১ রানে আউট হলেন। কিন্তু ততক্ষণে কেটে গেছে দলের ওপর থেকে শঙ্কার কালো মেঘ। সবার প্রত্যাশা ছিল এবার হয়তো নিজের ক্যারিয়ারে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটাও ছুঁয়ে ফেলবেন। কিন্তু হয়নি। ব্যক্তিগত অর্জন হয়নি বলে তার কণ্ঠে হতাশার কথা  শোনা গেল না। বরং আক্ষেপ ঝড়লো দলের জন্য। প্রথম দিনের শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে পারেননি বলে। তার বিদায়ের পর নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে মাঠে এসে ফিরে গেছেন তাইজুল ইসলাম। দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল হক বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত কোনো আফসোস নেই। একটু খারাপ লাগছে বা আফসোস হচ্ছে দিন শেষে আমি আউট হওয়াতে আরো একটি উইকেট পড়ে গেছে। যদি দিনটি শেষ করে আসতাম তাহলে বলতে পারতাম যে আমরা অনেক ভালো অবস্থানে আছি।’

অভিষেকের পর থেকে ব্যাটিং গড় এমনই যে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান স্যার ব্রাডম্যানের পাশেই মুমিনুল হকের নাম জুড়ে যায়। ২০১৩তে অভিষেক, একবছর পার হতেই চার টেস্ট সেঞ্চুরি। শুধু কী তাই! টানা ১১ ইনিংসে ফিফটি হাঁকিয়ে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনন্য উচ্চতায়। টেস্টে বাংলাদেশের স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান তকমা একেবারেই সেটে যায় তার নামের সঙ্গে। কিন্তু ২০১৪’র পর থেকেই যেন বদলে যেতে শুরু করে। বিশেষ করে সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের জমানাতে দারুণভাবেই অবহেলিত তিনি। এমনকি দেশের শততম টেস্টেও খেলা হয়নি তার কোচের কারণে। ২০১৫ থেকে ২০১৭ তার ব্যাটে আর কোনো সেঞ্চুরি নেই। হাথুরুসিংহে টাইগারদের সঙ্গ ছেড়ে নিজ দেশের দায়িত্ব নিলে ফিরে আসেন ২০১৮’র শুরুতে। সেই ম্যাচে চট্টগ্রামে ব্যাট হাতে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে যেন অবহেলার জবাব দেন।

মাঝে আবারো ফর্মের বাইরে চলে যাওয়াতে লড়াই করে যাচ্ছিলেন ফিরে আসার। সিলেটে দলের বিপর্যয়ে তিনি হাল ধরতে পারেননি। তাই ঢাকা টেস্টেও ছিল দারুণ শঙ্কা। কিন্তু  টেস্ট ক্যারিয়ারে ৭ম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফিরে আসেন। সেই সঙ্গে গতকালের ইনিংসটিকে এগিয়ে রাখেন নিজের সেরা হিসেবে। তিনি বলেন, ‘এই উইকেটে ব্যাট করতে খুবই কষ্ট হয়েছে। এত কঠিন উইকেট ছিল যে আমাদের মধ্যে দলকে কিভাবে নিরাপদে নেয়া যায় সেটিই ছিল আসল। তাই ফিফটি করার পর ভুলে গিয়েছিলাম কি করতে হবে। হ্যাঁ, এটি আমার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস বলবো। আগের যে ছয়টি সেঞ্চুরি ছিল সেগুলোর চেয়ে এটিকে এগিয়ে রাখবো।’

গতকাল ফিফটি করেছিলেন ৯২ বলে। পরের ফিফটি করতে খেলেন ৫৮ বল। ১৫০ বলে ছুঁয়েছেন ক্যারিয়ারের সপ্তম টেস্ট সেঞ্চুরি। তার সেঞ্চুরিতে একটা মাইফলক স্পর্শ করলো দেশের ক্রিকেটও। ১১০ টেস্টে বাংলাদেশের এটি ৫০তম টেস্ট সেঞ্চুরি। সাত টেস্ট সেঞ্চুরিতে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ডে মুমিনুল এখন এককভাবে দুইয়ে। ৬১ টেস্টে ৬ সেঞ্চুরি করা মোহাম্মদ আশরাফুলকে পেছনে ফেললেন ৩১ টেস্টেই ৭ সেঞ্চুরি করে। শুধু তাই নয়, এই সেঞ্চুরি যাত্রায় তার সঙ্গী ছিলেন মুশফিকুর রহীম। বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে মুমিনুল ও লিটন দাস গড়েছিলেন ১৮০ রানের জুটি। গতকাল মুশফিককে কৃতিত্ব দেন মুমিনুল। তিনি বলেন, ‘মুশফিক ভাই আমাদের দেশের সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যানের একজন। সে আমাকে এত দারুণ গাইড করেছে যে আমার আত্মবিশ্বাসটাই বেড়ে গিয়েছিল।’

মুমিনুল বলেন, ‘উইকেট প্রথম দিন যা ছিল শেষের দু’দিন কি হবে তা বলা কঠিন। তবে, আমাদের এই প্রথম ইনিংসটাই ম্যাচে এগিয়ে রেখেছে। এখানে ৪শ’ রান হলে প্রতিপক্ষের জন্য কঠিন। এখানো আমাদের মুশফিক ও মাহমুদুুল্লাহ ভাই ক্রিজে আছেন, পরে আরিফুলও আছে আরো রান হবে। সেই সঙ্গে আমাদের বোলাররা এই উইকেটে আরো ভালো বল করবে বলেই বিশ্বাস করি। বিশেষ করে স্পিনাররা।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status