প্রথম পাতা

প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ১৪ দলের শরিকরা

উৎপল রায়

১০ নভেম্বর ২০১৮, শনিবার, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪দলীয় জোটের শরিকরা। যদিও নির্বাচনে শরিক দলগুলোর আসন ভাগাভাগির বা ছাড় দেয়ার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শুক্রবার থেকে জোটের শীর্ষ দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিতরণ ও সংগ্রহ শুরু হলেও জোটের অন্য দলের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো তৎপরতা
এখনো শুরু হয়নি। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের ওপরই ভরসা করছেন নেতারা। জোটের আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত- এমনটি ধরে নিয়েই এগুচ্ছেন তারা। নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন দাবি, সমঝোতা কিংবা বণ্টনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভেতরে ভেতরে দরকষাকষি চললেও জোট নেতারা আলোচনা সাপেক্ষে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই মেনে নেবেন।

নেতারা এও বলছেন, চেষ্টা থাকবে যতদূর সম্ভব সমঝোতার মাধ্যমে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে নেয়ার। এক্ষেত্রে নিকট অতীতে রাজনীতির ময়দানে জোটের বিভিন্ন দলের কার কি ভূমিকা সেটিও তুলে ধরা হবে। এদিকে আগামী নির্বাচনে জোটের শরিকদের কতটি আসনের দাবি থাকবে বা আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায় থেকে কতটি আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে সে বিষয়ে জোটের নেতারা বলছেন, আসন ভাগাভাগি নিয়ে অনেক দাবি থাকবে, কিন্তু দাবি পূরণ হবে কি-না সেই বাস্তবতাও তারা বিবেচনায় নিচ্ছেন। একই সঙ্গে শুধু প্রার্থী বাছাই কিংবা মনোনয়ন নয়, বিজয়ী হওয়ার মতো প্রার্থীকেই মনোনয়ন দিতে হবে বলে জানান তারা।

১৪দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা মানবজমিনকে বলেন, ‘১৪দলীয় জোটে আওয়ামী লীগের পরেই শীর্ষ দল ওয়ার্কার্স পার্টি। এটি বাস্তবতা এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে আমাদের দাবিও একটু বেশিই থাকবে। কেননা বিগত সময়ে রাজনীতির মাঠে আমাদের ভূমিকা ছিল উল্লেখ করার মতো।’ তিনি বলেন, বর্তমান সংসদে আমাদের ৭ জন সংসদ সদস্য (সংরক্ষিত নারী আসনে ১ জন) রয়েছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমাদের ১৫টি আসনে প্রার্থিতার দাবি ছিল। এখন ওয়ার্কার্স পার্টি পারফরমেন্স, গুরুত্ব এবং আমাদের প্রাপ্যতা বিবেচনায় এবার আমরা আরো বেশি আসনে নির্বাচন করার দাবি করতেই পারি।’ তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনের জন্য ১০ প্রার্থীর বিষয়ে দাবি জানাবো আমরা। এই প্রার্থীদের প্রায় সবাই বিজয়ী হওয়ার মতো। আর জোটের শীর্ষ নেত্রী তো বলেছেন যে, বিজয়ী হওয়ার মতো প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে আমরা আশাবাদী হতেই পারি যে, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আমাদের প্রার্থীর সংখ্যা এবার বাড়বে।’

সাম্যবাদী দলের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘কিছুদিন আগে ১৪দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে আমাদের কথা হয়েছে। মনোনয়ন দেয়া ও প্রার্থিতার বিষয়ে আমরা তার ওপরই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি। তবে, আমরা এও বলেছি শুধু মনোনয়ন দিলেই তো হবে না, বিজয়ী হওয়ার মতো প্রার্থীও প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বক্তব্য শুনেছেন এবং তিনিও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। একই সঙ্গে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরাও তার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’ কতটি আসনে আওয়ামী লীগ জোটের শরিকদের ছাড় দিতে পারে এমন প্রশ্নে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে ১৪দলীয় জোটের শরিকেরা এর আগের নির্বাচনের চাইতে বেশি আসনের প্রত্যাশা করছে। এখন আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সমাধান হবে। এক্ষেত্রে জোটের শীর্ষ নেতার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে আমি মনে করি।’ জাসদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার মানবজমিনকে বলেন, ‘বর্তমান সংসদে আমাদের ৬ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই এবার আমরা আরো বেশি প্রার্থীর মনোনয়ন চাইবো। তবে, চাইলেই তো হবে না। পেতেও হবে।’ তিনি বলেন, ‘আসন ভাগাভাগির বিষয়ে কিছুদিনের মধ্যে জোটের শীর্ষ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসবো। তার সঙ্গে বসে আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই বিষয়টি সুরাহা হবে।’
১৪দলীয় জোটের একাধিক শীর্ষ নেতা আলাপকালে জানান, আগামী নির্বাচনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি এককভাবে না-কি জোটগতভাবে অংশ নেবে, জোটের আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে সেটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি নির্বাচনে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের অংশগ্রহণ করাটাও ১৪দলীয় জোটের আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে একটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট অ্যালায়েন্স (বিএনএ), বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ)সহ আরো কিছু ছোট দল ও জোট আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেধে নির্বাচনে আসার কথা শোনা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ১৪ দলের আসন ভাগাভাগির বিষয়ে এটিও হিসেবের মধ্যে রাখা হতে পারে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘আমরা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেব। যদিও আমাদের দলের নিবন্ধন না থাকায় নড়াচড়া করার সুযোগটা একটু কম। তবে, বিএনপি নির্বাচনে আসছে- এমনটি যেহেতু ধারণা করা হচ্ছে সেক্ষেত্রে মহাজোটের যে ফর্মেশন আছে সেই ফর্মেশনের ভিত্তিকে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আসন বণ্টনের বিষয়টি সমাধান হবে।’ ন্যাপের (মোজাফ্‌ফর) যুগ্ম সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে জোটের স্বার্থে অনেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। সে সময় বিএনপি নির্বাচনে ছিল না। এবার বিএনপি নির্বাচনে আসবে- এমনটি ধরে নিয়েই আমরা এগুচ্ছি। সেক্ষেত্রে এবার আমাদের দাবি আরো জোরালো। আর নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অবস্থান কি হবে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি জোটের শীর্ষ দল আওয়ামী লীগ বিষয়টি কিভাবে সমন্বয় করবে সেটিও দেখতে হবে।’

তিনি বলেন, সম্প্রতি ১৪দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে জোটের আসন ভাগাভাগির বিষয়টি আমরা তার ওপরই ছেড়ে দিয়েছি। তিনিও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, জোটের যে দলেরই হোন যিনি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন তাদেরই কেবল মনোনয়ন দেয়া হবে। আবার তিনি এও বলেছেন, যারা জোটের এমপি হয়ে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের কেউ কেউ মনোনয়ন না-ও পেতে পারেন। আমরা তার কথায় আশ্বস্ত হয়েছি। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন তাই আমরা মেনে নেব।’ জোটের অন্যতম শরিক গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুর রহমান সেলিম বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে ২৬ জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছি। তবে, দাবি করলেই তো হবে না। পরিস্থিতি অনুযায়ী জোটের শীর্ষ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মেনেই আমরা এগিয়ে যাবো। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে আমাদের এমনটিই আলোচনা হয়েছে। তিনিও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে বিএনপি আসবে এমনটি ধরে নিয়ে আমরা শরিকেরা বেশি আসন দাবি করতেই পারি। আর দেয়া না দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status