অনলাইন

ধর্ষণ থেকে বাঁচতে আত্মহত্যার চেষ্টা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

৯ নভেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ৫:৫৯ পূর্বাহ্ন

এয়ার হোসেন সোহেল নামে পুলিশের এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে টানা ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছে এক গৃহবধূ। ধর্ষণ থেকে বাঁচতে ওই গৃহবধূ হারপিক খেয়ে হত্যার চেষ্টাও চালিয়েছে। বর্তমানে ওই গৃহবধূ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

অভিযুক্ত এসআই এয়ার হোসেন সোহেল বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজীদ থানায় কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি কর্ণফুলী থানার শাহ-মিরপুর পুলিশ ফাড়িঁর ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ধর্ষণের শিকার গৃহবধুর স্বামী শাহজাহান শেখ (৪৮) গত ৪ঠা নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমানের বরাবরে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করে এসআই এয়ার হোসেন সোহেলের বিচার দাবি করেছেন।

আর এই অভিযোগ দায়েরের পর ধর্ষিতা ও তার স্বামীকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার, এমনকি প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। ফলে তারা নগরীর এক স্থান থেকে থেকে অন্যস্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে জানান শাহাজাহান শেখ।
শাহজাহান শেখ জানান, তিনি ঢাকায় দর্জির ব্যবসা করেন। ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় থাকা অবস্থায় এসআই এয়ার হোসেন সোহেলের সঙ্গে তার পরিচয়। সেখানে বাসায় আসা-যাওয়া করতেন এসআই এয়ার হোসেন সোহেল। কিন্তু কয়েকদিন পর তিনি সেখান থেকে বদলি হয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানায় আসেন।

এরপর পোশাক কারখানায় স্ত্রীকে চাকরি ও আমাকে শহরে একটি দোকান নিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। যা বিশ্বাস করে গত ১৫ই আগষ্ট স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামে আসেন তিনি। এরপর তিনি নগরীর বাকলিয়া থানার কালামিয়ার বাজার এলাকায় হারুন সাহেবের ভবনের ৫ম তলায় বাসা নিয়ে বসবাস শুরু করেন। সেখানে গত ১৮ই আগষ্ট রাতে এসে জোরপূর্বক বাসায় থাকেন এসআই এয়ার হোসেন সোহেল।  

সেখানে শরীরে অসুস্থতার কথা বলে সাহায্য চাওয়ার নামে আমার স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে রাতভর জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন তিনি। প্রতিবাদ করলে ইয়াবা দিয়ে আমাকে চালান ও মেরে ফেলার ভয় দেখায়। এরপর থেকে টানা ৯ দিন আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে এসআই এয়ার হোসেন সোহেল। একপর্যায়ে নির্যাতন সইতে না পেরে আমার স্ত্রী হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

শাহাজাহান শেখ বলেন, হারপিক খাওয়ার পর আমার স্ত্রীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু খবর পেয়ে এসআই এয়ার হোসেন সোহেল সেখান থেকে নগরীর মেট্টোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করান আমার স্ত্রীকে।

মেট্রোপলিটন হাসপাতালের রেজিষ্টার ডাক্তার মোহাম্মদ নূরুন নবী জানান, গত ২৭শে অক্টোবর চমেক হাসপাতাল থেকে বিষ খাওয়া এই গৃহবধুকে গত ৩০শে অক্টোবর আমাদের মেডিকেলে ভর্তি করান। বর্তমানে তিনি আশংকামুক্ত অবস্থায় আছেন।

ধর্ষণের শিকার গৃহবধু হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় বলেন, আমাকে মেরে ফেলার হুমকি ও আমার স্বামীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে টানা ৯ দিন ধরে আমাকে ধর্ষণ করে পুলিশের এসআই এয়ার হোসেন সোহেল। এ নিয়ে আমার স্বামী ডিসি উত্তর বরাবর অভিযোগ করেছে। আমি এই পুলিশ নামক জানোয়ারটির বিচার চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, এসআই এয়ার হোসেন সোহেলের বিরুদ্ধে গৃহবধু ধর্ষণের একটি অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। বিষয়টি সমাধান করার জন্য তাকে বলা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত এই পুলিশ সদস্য যদি এই জঘন্য কাজ করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে এসআই এয়ার হোসেন সোহেল ধর্ষণের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, সরলতার সুযোগ নিয়ে ওই দম্পতি আমাকে ব্লাকমেইল করছে। আল্লাহর কসম এরকম কিছুই আমি করিনি।

ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করলেও পুলিশ কর্মকর্তা এয়ার হোসেন সোহেল ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ ও স্বীকারোক্তিমূলক কল রেকর্ড রয়েছে। ধর্ষণের শিকার হওয়া গৃহবধুকে মেট্রোপলিটন হাসপাতালে  ভর্তি ফরমেও স্বাক্ষর আছে এই পুলিশ কর্মকর্তার।

এছাড়া এই দম্পতির সঙ্গে ঢাকায় পরিচয়, সেখান থেকে তাদের চট্টগ্রামে আনা, বাসা ভাড়া করে দেওয়া, দোকানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা দৈনিক মানবজমিনের কাছে স্বীকার করেছেন এসআই এয়ার হোসেন সোহেল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status