অনলাইন

রাবি শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে নির্যাতন করলেন ছাত্রলীগ নেতা

রাবি প্রতিনিধি

৯ নভেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ৪:২২ পূর্বাহ্ন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে নির্যাতন ও পরিবারের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক নেতা ও স্থানীয় এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার রাতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে মেস থেকে ডেকে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে তিন ঘণ্টা জিম্মি করে রেখে তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। পরে মুক্তিপণ হিসেবে তার পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়। ঘটনা জানাজানির পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সহায়তায় জড়িতদের চিহ্নিত করে ভুক্তভোগীকে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ওমর ফারুক ঠাকুরগাঁও জেলার। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি  বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
অপরদিকে, জড়িতরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও ফার্সী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাফিউর রহমান শাফি।
ভুক্তভোগী ওমর ফারুক বলেন, ‘গত দুই দিন থেকে নাঈম ভাই আমাকে এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করাবে বলে ডাকছিলেন। পরীক্ষা থাকায় আসতে পারিনি। এদিন তার সঙ্গে গেলে সে আমাকে সোহরাওয়ার্দী হলের ১৯১ নম্বর কক্ষে শাফির কাছে নিয়ে যায়। এ সময় তারা আমাকে বেয়াদব বলে মারধর ও হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। একপর্যায়ে আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঢুকে শিবিরের পেজে লাইক দিয়ে আমাকে শিবির বলে দাবি করে। আমি অস্বীকার করলে তারা আমাকে চড়-থাপ্পড় ও লোহার পাইপ দিয়ে মারতে থাকে। পরে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলে আমাকে ছেড়ে দিবে, অন্যথায় শিবির বলে হাত-পা ভেঙ্গে পুলিশে তুলে দেয়ার হুমকি দেয়। পরে তারা আমার পরিবারের কাছে ফোন করে টাকা চাইলে আমার বড় ভাই বিকাশের মাধ্যমে বিশ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়। টাকা পেয়ে তারা আমাকে ছেড়ে দেয় এবং বিষয়টি কাউকে জানালে আমাকে দেখে নেবে বলে হুমকিও দেয়। পরে আমি বিষয়টি আমার জেলা সমিতির সভাপতিকে জানাই।
ঘটনাটি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু রাতেই তাদেরকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। এসময় ঘটনার সঙ্গে জড়িত নাঈম উপস্থিত হননি। পরে জড়িতদের কাছ থেকে টাকা তুলে শুক্রবার রাত ৮টার মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন তারা।’
বিষয়টি স্বীকার করে শাফি বলেন, ‘ফারুকের গতিবিধি ও আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় আমরা তাকে শিবির সন্দেহে আটক করি। তবে টাকা নেওয়ার সঙ্গে আমি জড়িত নই। টাকা নাঈম নিয়েছে।’
এ বিষয়ে নাঈমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সোহানুর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরকে বিষয়টি জানাই। কিন্তু সন্ধ্যা পেরিয়ে মধ্যরাত হয়ে গেলেও প্রক্টর কোন ব্যবস্থা নেননি।’
তবে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছে দাবি করলেও ঘটনাস্থলে কোন পুলিশকে দেখা যায়নি। তিনি বলেন, ঘটনা শোনার পর আমি পুলিশকে জানিয়েছি। পরে শুনেছি ছাত্রলীগ বিষয়টি সমাধান করেছে।’
জানতে চাইলে গোলাম কিবরিয়া ও ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা হলে গিয়েছিলাম। টাকা আদায়ের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হতে পেরেছি। জড়িত দুইজনের মধ্যে যার কাছে টাকা আছে, সে পলাতক রয়েছে। আমরা একজনকে ধরেছি। তার মাধ্যমে আজ রাতের মধ্যেই ফারুককে টাকা ফিরিয়ে দেবো এবং ফারুকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো।’
তারা আরও বলেন, ‘এ ধরনের অপরাধের জন্য আমরা শাফিকে শোকজ করেছি এবং আগামী সাতদিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেছি।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status