দেশ বিদেশ

খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরানো হয়েছে জোর করে ছাড়পত্র নিয়ে

স্টাফ রিপোর্টার

৯ নভেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৫৬ পূর্বাহ্ন

চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়ার ঘটনাকে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসক নেতারা। তারা বলেছেন, মেডিকেল বোর্ডের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে একজন জুনিয়র চিকিৎসকের মাধ্যমে জোর করে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়ার ছাড়পত্র নেয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেন, সংলাপের মাধ্যমে সব পক্ষের মধ্যে সমঝোতার ভেতর দিয়ে দেশের মানুষ যখন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে তখন চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়ার ঘটনা বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যজোটের নেতৃবৃন্দ ও সমর্থকগণকে বিস্মিত, আহত ও হতবাক করেছে। এটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো একটি ঘটনা। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান চিকিৎসক নেতারা। ওদিকে এক বিবৃতির মাধ্যমে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ৫০১ জন বিশিষ্ট চিকিৎসক। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউ-এর শিশু সার্জারি বিভাগ ও সাবেক ডিন সার্জারি অনুষদ প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, গেল এক মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো মাধ্যমেই একটি বারের জন্যও খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা সামান্য মাত্র উন্নতির ঘোষণা দূরে থাক ইঙ্গিত পর্যন্ত দেয়নি। আজকের সংবাদ সম্মেলনেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ে উন্নতির কোনো প্রমাণ নিশ্চিত করতে পারেনি। সবার পর্যবেক্ষণেও অন্যান্য চিকিৎসকরাও তাকে হাসপাতাল ত্যাগের বিষয়ে কোনো আভাস দেননি। তারপরও খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের প্রধান বর্তমানে দেশে নেই। জানা গেছে, কোনো কোনো চিকিৎসক এই আকস্মিক হাসপাতাল ত্যাগের বিষয়ে একমত ছিলেন না। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের  নিয়মিত চিকিৎসক নন এমন একজন কনিষ্ঠ চিকিৎসক যিনি কখনই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ে অবগত ছিলেন না বা তাঁকে কখনও দেখেননি তাকে চাপ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ছাড়পত্র নেয়া হয়েছে। কোনো জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক বা প্রফেসর খালেদা জিয়াকে সরাসরি বিষয়টি অবগত করেনি বা তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানাননি। চিকিৎসকরা বলেন, প্রথম প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল তার স্বাস্থ্যগত বিষয়ে জনগণকে অবহিত করতে শুরু করলেও ২ দিনের মাথায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় তা থেকে বিরত হয়। এরপর থেকে দেশবাসী তার স্বাস্থ্য বিষয়ে কর্তৃপক্ষীয় ভাষ্য থেকে বঞ্চিত হন। গেল এক মাসে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ে জনগণ একেবারেই অন্ধকারে ছিলেন। চিকিৎসক নেতারা বলেন, দেশবাসী যখন রাজনৈতিক সংকট মোচনের আভাস পাচ্ছিল তখনই এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা দেশে নতুন সংকট ও দুর্যোগ সৃষ্টির বিষয়ে জনগণকে সন্দিহান করে তুলেছে। এই স্থানান্তর যেমন আকস্মিক তেমনি পীড়াদায়ক ও হতাশাব্যঞ্জক। দেশ, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, জনস্বার্থ ও দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়ে দেশবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। জনসাধারণ আবারো লগি-বৈঠা, এক-এগারো ও ২০১৪ সালের ধারাবাহিকতায় গণতন্ত্রকে চিরতরে হত্যা করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা পরিকল্পনার স্বচ্ছ আলামত দেখতে শুরু করেছে। ২০১৪ সালে প্রবল জনমত উপেক্ষা করে গণতন্ত্রের লড়াকু সৈনিক ও মাতৃমূর্তি এবং আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়াকে বালুর বস্তা ও ট্রাক দিয়ে আটকিয়ে দেশবাসী পুলিশি নির্যাতন কায়েম করে দেশবাসীকে অসহায় করে গণতন্ত্রকে পরাভূত ও ভোটাধিকারকে পদদলিত করেছিল আজও দেশবাসী সেই স্বাধীনতা ও জনবিরোধী চক্রান্তের পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছে। চিকিৎসকরা বলেন, আমরা দেশবাসীর পক্ষ থেকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাই দেশবাসী ও বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যজোট নেতৃবৃন্দ ও সমর্থকরা কোনো ক্রমেই এই চক্রান্ত ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড বিনা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ ছাড়া মেনে নেবো না। দেশবাসী আশা করে, সরকার এ বিষয়ে মনোযোগী হয়ে দেশ ও স্বাধীনতাকে সুসংহত করতে এগিয়ে আসবে। সংবাদ সম্মেলনে প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, প্রফেসর ডা. আবদুল মান্নান মিয়া, প্রফেসর ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর ডা. এমএ কুদ্দুস, প্রফেসর ডা. একেএম আমিনুল হক, প্রফেসর ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ডা. সাইফুল ইসলাম সেলিম, ডা. সাইফউদ্দিন নেসার আহমেদ তুষান, ডা. রফিকুল ইসলাম, ডা. মনোয়ারুল কাদির বিটুসহ সিনিয়র চিকিৎসকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
৫০১ চিকিৎসকের প্রতিবাদ: এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতাল থেকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ৫০১ জন বিশিষ্ট চিকিৎসক। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন-বিএমএ’র সাবেক সভাপতি প্রফেসর ডা. একেএম আজিজুল হকের স্বাক্ষরে বিবৃতিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত ৮ই ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারের পর থেকেই সরকার তার চিকিৎসার ব্যাপারে টালবাহানা শুরু করে। খালেদা জিয়া একজন বয়োজ্যেষ্ঠ নারী এবং নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত। সরকার তার চিকিৎসার ব্যাপারে শুরু থেকেই ছিল উদাসীন বরং চিকিৎসার অভাবে তাকে দিনে দিনে নিঃশেষ করাই ছিল সরকারের উদ্দেশ্য। তথাপি কোর্টের নির্দেশনায় নিতান্ত বাধ্য হয়েই বিএসএমএমইউ-তে বেগম খালেদা জিয়াকে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর থেকেই চিকিৎসার ক্ষেত্রে করা হয় গাফিলতি, বোর্ড নিয়ে করা হয় ছলচাতুরী। বিবৃতিতে বলা হয়, ৮ই নভেম্বর সকালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্পন্ন না করেই তাকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়। এমন কি তার চিকিৎসা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. আবদুল জলিল চৌধুরী ৪ঠা নভেম্বর থেকে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তার অনুপস্থিতিতেই খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হলো। এটা বর্তমান সরকারের চরম বৈরী, একনায়কোচিত, স্বৈরাচারী ও অমানবিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ। গণতন্ত্রকে সমূলে ধ্বংস করার যে হীন চক্রান্তে সরকার লিপ্ত তা বাস্তবায়ন করার প্রয়াসেই সরকারের এই অমানবিক সিদ্ধান্ত। আমরা সচেতন চিকিৎসক সমাজ এই হীন, অমানবিক সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার সুচিকিৎসা সুনিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। বিবৃতি দাতাদের মধ্যে রয়েছেন- প্রফেসর ডা. এ কে এম আজিজুল হক, প্রফেসর ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, প্রফেসর ডা. রফিকুল কবির লাবু, ডা. আবদুস সালাম, ডা. হারুন-অর-রশীদ, ডা. শহীদ হাসান, ডা. শহীদুল আলম, প্র্রফেসর ডা. এএমএসএম সারফুজ্জামান রুবেল, প্রফেসর ডা. ফজলুল হক, প্র্রফেসর ডা. সেলিম শাকুর, প্র্রফেসর ডা. মলিহা রশিদ, প্র্রফেসর ডা. জিন্নাত আরা, প্র্রফেসর ডা. নিশাত বেগম, প্রফেসর ডা. শাহীদুর রহমান, প্র্রফেসর ডা. গাজী আবদুল হক, প্রফেসর ডা. আবদুল মান্নান মিয়া, প্রফেসর ডা. সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, প্রফেসর ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন ও প্রফেসর ডা. মাযহারুল ইসলাম দোলন প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status