ষোলো আনা

এখনও কারাগারে ১২ শিক্ষার্থী

মরিয়ম চম্পা

২৬ অক্টোবর ২০১৮, শুক্রবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন

এখনও কারাগারে ১২ শিক্ষার্থী। এদের বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই একাধিক মামলা দেয়া হয়েছে। ফলে সব মামলায় জামিন মেলেনি এখনো। এদিকে কারাবন্দি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। গত ৫ই সেপ্টেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের তুলে নেয়ার অভিযোগ ওঠে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের বিরুদ্ধে। তাদের তিনদিন আটকে রাখা হয়। এরা হলেন- তারেক আজিজ, মো. তারেক, জাহাঙ্গীর আলম, মো. মোজাহিদুল ইসলাম, মো. আল আমীন, মো. জহিরুল ইসলাম, মো. বোরহান উদ্দিন, ইফতেখার আলম, মো. মেহেদী হাসান রাজিব, মো. মাহফুজ, মো. সাইফুল্লাহ ও মো. রায়হানুল আবেদিন। এদের মধ্যে ছয়জন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। বাকিরা বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি, তিতুমীর কলেজ, করটিয়া সরকারি সা’দত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থী রয়েছেন।

কারাগারে থাকা শিক্ষার্থী মো. রায়হানুল আবেদিনের বাবা মো. রফিকুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, রায়হানুল কেরানীগঞ্জ জেলখানায় আছে। তার নামে নিরাপদ সড়ক চাই ও কোটা সংস্কার আন্দোলনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ৬টি মামলা হয়েছে। গত শনিবার ছেলের সঙ্গে জেলখানায় দেখা করতে গিয়েছিলেন। বাবাকে দেখলে রায়হানুল শুধু কান্না করে। তাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে নেয়ার কথা বলে। তিনি বলেন, আমি খুব গরিব মানুষ। পেশায় পরিবহন শ্রমিক। এতগুলো মামলার খরচ চালানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। দুই মামলায় জামিন হলেও বাকিগুলোতে হয়নি। রায়হানুল আবেদিনের বাবা বলেন, খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে আমাদের। গত মাসে ঘরভাড়া দিতে পারিনি। এ মাসেও পারবো কি না জানি না। কুমিল্লার এই বাসিন্দা বলেন, তার দুই ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে রায়হানুল তৃতীয়। কুমিল্লা থেকে এসএসসি পাস করে তেজগাঁও পলিটেকনিক কলেজে ভর্তি হয়। সে এখন সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী।

মো. মাহফুজের মামা সোহাইবুর রহমান বলেন, মাহফুজ এখন কাশিমপুর জেলখানায়। পুলিশের কাজে বাধা দেয়া, নিরাপদ সড়ক চাই, কোটা সংস্কার আন্দোলনসহ একাধিক ধারায় তার বিরুদ্ধে ১টি মামলা হয়েছে। অথচ নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ২দিন আগে সে গ্রামের বাড়ি কাপাশিয়ার শ্যামপুরে ছিল। তার বর্তমান বয়স ১৬ বছর ৭ মাস চলছে। তার তো চাকরির বয়সই হয়নি। তাহলে কেন কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে যাবে? আর নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে তার ফোনে অন্য একজন  মেসেজ পাঠিয়েছে, কিন্তু সে কাউকে মেসেজ পাঠিয়েছে এমন কোনো তথ্য নেই। এসব নিয়ে আমরা হ্যাস্তন্যস্ত হচ্ছি। এখনো কোনো সুরাহা করতে পারিনি। মাহফুজের বাবা একজন স্কুল শিক্ষক। যে কয় টাকা পায় তার প্রায় পুরোটাই এখন ছেলের পেছনে খরচ হচ্ছে। আমি নিজেও তাকে অনেক যত্নে মানুষ করেছি। মা ফায়জুন্নাহার মৃগিরোগী। দুইভাই এক বোনের মধ্যে সে সবার বড়। গ্রামের স্কুল থেকে পাস করার পর দেড় বছর আগে ঢাকা পলিটেকনিকে ভর্তি করেন তার মামা। মাহফুজ কম্পিউটার সায়েন্সের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার মো. মোজাহিদুল ইসলামের বাবা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, মোজাহিদুলের নামে ১টি মামলা হয়েছে। কোন ধারায় মামলা হয়েছে সে বিষয়ে আমার জানা নেই। বলেন, গত ১১ই অক্টোবর ছেলের সঙ্গে কাশিমপুর কারাগারে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সে ভালো নেই। মাহবুবুর রহমান বলেন, তিনি একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। মোজাহিদুল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইল এ দ্বিতীয় বর্ষের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী।

ঢাকা পলিটেকনিকে তৃতীয় বর্ষের পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র মেহেদী হাসান রাজিবের বড় ভাই মো. হুমায়ুন কবির বলেন, রাজিবের বিরুদ্ধে ১টি মামলা হয়েছে। সেও কাশিমপুর কারাগারে আছে। গত সোমবার তার সঙ্গে দেখা করেছি। শীতের কাপড় চোপড় কিনে দিয়ে এসেছি। সে বর্তমানে ঠাণ্ডা জ্বরে ভুগছে। তার চিন্তায় বাবা-মা দু’জনই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বাবা মো. হযরত আলী একজন ভ্যানচালক। বড় ভাই হুমায়ুন একটি মুদি দোকানে কাজ করেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গাজীপুর থাকেন।

ইফতেখার আলমের বড়ভাই রাশেদ আলম বলেন, ইফতেখার কাশিমপুর জেলখানায় আছে। প্রথমে কেরানীগঞ্জ থাকলেও পরে ওখান থেকে কাশিমপুরে পাঠানো হয়। তার বিরুদ্ধে ২টি মামলা হয়েছে। ওরা কেউ ভালো নেই। সবাই শারীরিকভাবে কম-বেশি অসুস্থ। ওদের হাতের আঙুলগুলো প্রায়ই অবশ হয়ে যায়। তিনি বলেন, কেন যায় সেটাতো বুঝতেই পারছেন। আমরা চাই, খুব শিগগিরই তাদের ছেড়ে দেয়া হোক। তারা তো কোনো অন্যায় করেনি। ইফতেখারের বাবা মো. জয়নাল আবেদীন একটি মাদ্‌রাসা থেকে অবসরে গেছেন। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। ৬ ভাইয়ের মধ্যে সে তৃতীয়। ইফতেখার ঢাকা পলিটেকনিকে কেমিক্যাল বিভাগে ৮ম সেমিস্টারের ছাত্র। সে একটি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে ঢাকায় একটি মেসে উঠেছিল। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।  

ফেনীর সোনাগাজীর ভোরবাজার গ্রামের মো. জহিরুল ইসলাম হাসিবের বাবা মো. এনামুল হক বলেন, জহিরুল ইসলাম এখন কেরানীগঞ্জ কারাগারে আছে। তার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে, নিরাপদ সড়ক চাই ও কোটা সংস্কার আন্দোলনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ১টি মামলা হয়েছে। দু’টি আন্দোলনের সময়ই সে বাড়িতে ছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গ্রামের বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে সে গ্রেপ্তার হয়।

কাশিমপুর কারাগারে বন্দি সাইফুল্লাহ বিন মানসুর। তার বাবা মানসুর রহমান বলেন, সাউফুল্লাহর বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় জজকোর্ট থেকে জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় এখন হাইকোর্টে মামলা সাবমিট করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট দু’বার শুনানি শেষে দু’বারই জামিন নামঞ্জুর করেছে। তাদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুরের চিংড়ি গ্রামে।
তার বাবা বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের রাবার প্রজেক্টের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

করটিয়া ছাতক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে অনার্স পরীক্ষা দিয়েছে সাইফুল্লাহ। সমপ্রতি এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালে তার একটি চাকরি হয়েছে। তেজগাঁওয়ে ৪৫ দিন প্রশিক্ষণ নিতে এসে মেসে ওঠে সাইফুল্লাহ। মহাখালীর রসূলবাগের একটি মেস থেকে তাকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তার বাবা বলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় সে বাড়িতে ছিল।

এ বিষয়ে তাদের আইনজীবী এডভোকেট জসিমউদ্দিন বলেন, তারা ৬ জন কাশিমপুর ও ৬ জন কেরানীগঞ্জ জেলখানায় আছেন। তবে তাদের কারো বিরুদ্ধে কয়টি মামলা আছে তা আসামিদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে বলা যাচ্ছে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status