প্রথম পাতা

মানহানির মামলায় মইনুল হোসেন কারাগারে

স্টাফ রিপোর্টার

২৪ অক্টোবর ২০১৮, বুধবার, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন

মানহানির মামলায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল বেলা ২টায় ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কায়সারুল ইসলাম শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। তার আগে  ১টার দিকে মইনুল হোসেনকে প্রিজনভ্যানে করে আদালতে হাজির করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় আদালত এলাকাজুড়ে ছিল কড়া নিরাপত্তা। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় আদালতের হাজতখানায়।

পরবর্তীতে অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কায়সারুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। জামিন আবেদনের শুনানি চলাকালে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে কয়েক দফা হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়ে আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, এ মামলাটি একটি সিআর মামলা, বাদী লিলি মায়া বেগম। তিনি মামলা করেছেন রংপুরে। মামলার ঘটনাস্থল ঢাকায়। ওইখানে তো বাদীর কোনো মানহানি হয়নি। তিনি এ সময় শুনানির জন্য আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের নাম প্রস্তাব করেন। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের জামিনের আবেদন জানিয়ে আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, তিন ঘণ্টা আগে মামলা করা, তারপর গ্রেপ্তার। এটা রাজনৈতিকভাবে করা হয়েছে। যে অভিযোগে মামলাটি হয়েছে, সেটি জামিনযোগ্য। আইন ও উচ্চ আদালতের বিধান অনুযায়ী, জামিনযোগ্য ধারার কোনো মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে আনা হলে, তিনি জামিন পেতে পারেন। যেহেতু জামিনযোগ্য ৫০৬ ধারার মামলা, আমাদের নিবেদন তাকে বয়স, অসুস্থতা বিবেচনায় জামিন দেয়া হোক।

তখন আদালতে জামিনের বিরোধিতা করেন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের জামিনের বিরোধিতা করে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বলেন, টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠানে মইনুল হোসেন একজন নারী সাংবাদিককে অপমান করেছেন। তাকে চরিত্রহীন বলেছেন। এটা গর্হিত অপরাধ। যে ধারায় মামলা হয়েছে, তা জামিনযোগ্য হলেও জামিন দেয়া না-দেয়া আদালতের এখতিয়ার।

একইভাবে বাদীপক্ষের আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, একজন নারী সাংবাদিক সম্পর্কে যে অশালীন মন্তব্য করেছেন তা পুরো নারী সমাজের জন্য অবমাননাকর। তিনি আমাদের মায়ের জাতিকে অপমানিত করেছেন। তার বিরুদ্ধে দেশের নারী সমাজের মধ্যে সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়েছে। আজকে কিছু কিছু নারী অগ্রসর হচ্ছে, তাদেরকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। এরপর তাকে বলা হয়েছে- আপনি ক্ষমা চান। তিনি বলেছেন ‘আমি পার্সোনালি ফোন করেছি’। তিনি পুরো নারীসমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরো সমাজ।

এ সময় বিবাদীপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, টেলিভিশনের টকশোতে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে মাসুদা ভাট্টি যে প্রশ্ন করেছেন তা একজন সাংবাদিক করতে পারেন না। তিনি সাংবাদিক পরিচয়ে সাংবাদিকতার নীতিমালা-পেশাগত দিক থেকে সরে গিয়ে এই প্রশ্ন করেছেন। একজন সাংবাদিক কোথায় কি দেখেছেন বা শুনেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন করে অন্যের মানসম্মানে আঘাত করতে পারেন না।  একজন সাংবাদিকের পেশাগত দায়িত্ব হচ্ছে মূল বিষয়টি উদঘাটন করা। সত্যতা যাচাই করা। তিনি সত্যতা যাচাই না করে বিষয়টি নিশ্চিত না হয়ে জনপ্রিয় একটি টেভিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে স্বাধীনতার বিরোধীদের পক্ষে চাপিয়ে দেয়া চেষ্টা করেছেন। ব্যারিস্টার মইনুলের চরিত্রহীন বলতে কী বুঝিয়েছেন, পেশাগত দিক থেকে মাসুদা ভাট্টি চরিত্রহীন হতে পারেন।
এ সময় আবারও আদালতে হট্টগোল শুরু হয়।

শুনানিতে বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা লেখিকা তসলিমা নাসরিনের একটি লেখার বরাত দিয়ে আদালতকে বলেন, মাসুদা ভাট্টিকে একটি লেখায় চরিত্রহীন বলেছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। একজন নারী হয়েও তিনি নারীকে চরিত্রহীন বলেছেন। তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, মাসুদা ভাট্টি একজন পাকিস্তানিকে বিয়ে করেছিলেন। পাকিস্তানি ব্যক্তির সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেলেও তার নামের ভাট্টি শব্দটি মাসুদা নামের শেষে ব্যবহার করছেন।

শুনানি শেষে বিবাদীপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে রাজৈনিতকভাবে হয়রানি করার জন্য এই মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ব্যারিস্টার মইনুলের ভূমিকা আছে। তিনি যুক্তফ্রন্টের অন্যতম নেতা।

আদালতের আদেশটি সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন দাবি করে খন্দকার মাহবুব বলেন, আমরা আদালতের কাছে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চেয়েছিলাম। এরপর যে কোর্টে মামলা সেখানে পাঠানোর জন্য বলেছিলাম। কিন্তু আদালত জামিন না মঞ্জুর করে দিয়ে উঠে গেলেন।

তিনি বলেন, এই মামলায় যে কয়টি ধারা আছে সবক’টি জামিনযোগ্য। আদালত জামিন দিতে পারতেন। সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশনাও আছে। কিন্তু আদালত জামিন দেননি। এই আদেশের বিষয় উচ্চ আদালতে যাবার কথাও বলেন তিনি।

এদিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কারাগারে নেয়ার পর সাধারণ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মইনুল হোসেনকে। ‘আমদানি ওয়ার্ড’ নামে পরিচিত ওই ওয়ার্ডে মইনুলের সঙ্গে বন্দি আছেন আরো ৪০ জন। কোনো বন্দিকে আনার পরপরই ‘আমদানি ওয়ার্ডে’ নেয়া হয়। এরপর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তার স্থান ঠিক হয়। জেলার মাহবুব আলম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মইনুল হোসেন কারাগারে পৌঁছার পর আদালতের অন্য কোনো নির্দেশনা না থাকায় তাকে সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে রাখা হয়েছে।

এদিকে ঢাকা ও জামালপুরের মানহানির মামলায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে হাইকোর্টের দেয়া আগাম অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আদেশের ওপর স্থাগিতাদেশ দেননি সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত। হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল চেম্বার আদালতের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ বিষয়ে ২৫শে (আগামীকাল) অক্টোবর শুনানির জন্য ধার্য করেন।    

সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় বিক্ষোভ: এদিকে মানহানির মামলায় ব্যারিস্টার মইনুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং তার মুক্তির দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট ও তার আশপাশ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। গতকাল দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সামনে  প্রতিবাদ সমাবেশ করার পর বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি হাইকোর্ট মাজার, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটক অতিক্রম করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও মৎস্যভবনের পাশের গেট দিয়ে প্রবেশ করে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মুক্তি দাবি করেন। একই সঙ্গে তার নামে দায়ের হওয়া মানহানির মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। দাবি মানা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট এবিএম রফিকুল হক তালুকদার রাজা,  অ্যাডভোকেট এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম মেহেদী, অ্যাডভোকেট গাজী তৌহিদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট কাজী জয়নাল আবেদীন,অ্যাডভোকেট মির্জা আল মাহমুদ, অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান সজল প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status