শেষের পাতা
পার্বত্য অঞ্চলের শান্তিতে হুমকি ৯৬৯-এর তৎপরতা
কাজী সোহাগ, পার্বত্য অঞ্চল থেকে
২৪ অক্টোবর ২০১৮, বুধবার, ৯:৪০ পূর্বাহ্ন
ফাইল ছবি
দেশের তিন পার্বত্য জেলার শান্তিতে এখন বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬৯। পাশাপাশি আতঙ্কের সৃষ্টি করছে এ সংগঠনটি। বাংলাদেশ সংলগ্ন মিয়ানমার সীমান্তের দুর্গম পাহাড়ে তাদের ঘাঁটি। সম্প্রতি সংগঠনটি ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে পার্বত্য জেলাগুলোতে। সেখানকার গরিব, অসহায় ও মামলায় পালিয়ে থাকা মানুষদের টার্গেট করে নিজেদের দলে টানছে। কারও কারও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে নিজেদের পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করছে। ধর্মীয় উগ্রপন্থি হিসেবে ৯৬৯ পরিচিত হলেও তাদের রয়েছে সশস্ত্র গ্রুপ। সংগঠনটির ভাণ্ডারে রয়েছে হালকা থেকে ভারী অস্ত্রের বিশাল মজুদ। অশ্বীন উইরাথু এই সংগঠন বর্তমানে পরিচালিত করে। তাদের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে পাহাড়ের দূর্গম অঞ্চলে থাকা জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র গ্রুপের। বাংলাদেশে তৎপর ওই দুই সশস্ত্র গ্রুপকে তাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে জুম্মু ল্যান্ড গঠনের। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে জুম্মু ল্যান্ড গঠন করার জন্য বিভিন্ন রূপ রেখাও তৈরি করা হয়েছে। কি ধরনের সরকার হবে পাহাড়ে তারও একটি ছক সাজানো হয়েছে। পাহাড়কে এমন একটি অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে যে, বাংলাদেশ সরকার থেকে পাহাড়কে বিচ্ছিন্ন করে নিজেরাই সরকার গঠন করে স্বাধীন জুম্মু ল্যান্ড গঠন করবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সরকার প্রশ্রয় না দেয়ায় পার্বত্য জেলাগুলোতে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো কোনো না কোনো কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। সরজমিনে পার্বত্য জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। সরকারের শীর্ষ এক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে ধর্মীয় উগ্রপন্থির লেবাসে থাকা সশস্ত্র ওই সংগঠনকে পার্বত্য জেলাগুলোর জন্য বড় ধরনের হুমকি বলে উল্ল্যেখ করা হয়েছে। গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের ৯৬৯ আন্দোলন মূলত একটি চরম বর্ণবাদী আন্দোলন।
৯৬৯ আন্দোলনের ফলে মিয়ানমারের বৌদ্ধদের মধ্যে ইসলাম ধর্মের তথা মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা বিদ্বেষ মিয়ানমারের সর্বত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মিয়ানমারের যেসব স্থানে মুসলমান জনগণ বাস করে সেসব স্থানে দিন দিন দাঙ্গা-হাঙ্গামা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে মিয়ানমারের পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের জনগণের প্রতিও মিয়ানমারের বৌদ্ধদের বিদ্বেষমূলক মনোভাব দেখা যাচ্ছে। গোয়েন্দা রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, উ চ হ্লা ভান্তে বান্দরবানে একের পর এক কিয়াং নির্মাণ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিনি রাজগুরু মন্দির দখল নেয়ার পাশাপাশি গোল্ডেন টেম্পল, রামজাদী টেম্পল নির্মাণ করেছেন। এছাড়া কিয়োক মো লং, কুহালং এবং ১২ মাইল এলাকায় আরো দুটি কিয়াংঘর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মধ্যে কিয়োক মো লং এর নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এসব কিয়াং তৈরির জন্য তিনি একদিকে যেমন জমি দখলের আশ্রয় নিয়েছেন অপরদিকে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা থেকে বিপুল পরিমাণ ফান্ড সংগ্রহ করছেন। তার নির্মিত কিয়াংয়ে তিনি ৯৬৯-এর ধ্যান-ধারণা প্রচার করছেন। পাশাপাশি মিয়ানমারের সন্দেহজনক ভান্তেদের আশ্রয় দিচ্ছেন। গোয়েন্দা রিপোর্টে স্থানীয় প্রভাব তুলে ধরে জানানো হয়, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রবারণা পূর্ণিমা (ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে) উৎসব অনুষ্ঠানে স্থানীয় এমপি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিংসহ স্থানীয় উল্লেখযোগ্য সকল সরকারি ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন।
ওই অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী মাথা নত করে উ চ হ্লা ভান্তেকে কুর্নিশ করে থাকেন। উ চ হ্লা ভান্তে উক্ত অনুষ্ঠানের সর্বোচ্চ আসনে আসীন থাকেন। এ সময় তিনি সবার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় বক্তব্যও রেখে থাকেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এতে করে স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীসহ সকল উপজাতি ও বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে উ চ হ্লা ভান্তের প্রাধান্য ও গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে প্রকারান্তরে তার সব ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড যেমন বৈধতা পাচ্ছে অপরদিকে তিনি বান্দরবানে সর্বোচ্চ সম্মানী ব্যক্তি ও ধরাছোঁয়ার বাইরে এমন একটি ধারণা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকলে উ চ হ্লা ভান্তেকে ভবিষ্যতে নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে বিবেচনার সুযোগ করে দেবে। তিনি এটাকে ব্যবহার করে ৯৬৯-এর অনুরূপ উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের সূচনা করার প্লাটফরম তৈরিতে সচেষ্ট হবেন। ২০১৬ সালের ২০শে মের ঘটনার উদাহরণ দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওইদিন রাজগুরু মন্দিরের বটগাছে পানি সিঞ্চন নিয়ে রাজা ও উ চ হ্লা ভান্তে সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে জেলা প্রশাসক সমাধানের উদ্যোগ নেন। এ পর্যায়ে তাকে জেলা প্রশাসক ডিসি অফিসে আসার জন্য অনুরোধ করলে তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে আলোচনার জন্য রাজগুরু কিয়াং এ পাঠালে উ চ হ্লা ভান্তে সেখানে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকেন।
এ থেকে তার মধ্যে প্রশাসনকে অবজ্ঞা করার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। গোয়েন্দা রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, সম্প্রতি উ চ হ্লা ভান্তে তার ফেসবুক পেইজে নিয়মিত রাঙ্গামাটির লংগদুর ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনী বিরোধী স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। তাছাড়া তিনি লংগদুর বাঙালি-উপজাতির এ ঘটনাকে মুসলিম-বৌদ্ধ সমস্যা অর্থাৎ ধর্মীয় সমস্যা হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন। তিনি ৯৬৯ কর্তৃক মুসলিম রোহিঙ্গাদের নিপীড়িত করার সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনের অপপ্রচেষ্টা করছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, তিনি লংগদুর ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়েছে মর্মে মিথ্যা তথ্য ও বানোয়াট খবর প্রচার করে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে বলা হয়, তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মাঝে মুসলিম বিরোধী মনোভাব সৃষ্টির মাধ্যমে মিয়ানমারের উগ্রপন্থি বৌদ্ধ সংগঠন ৯৬৯-এর হীন উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে কাজ করছেন বলে প্রতীয়মান হয়।
গোয়েন্দা রিপোর্টের শেষ দিকে উ চ হ্লা ভান্তের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনটি ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। প্রথমত- তাকে গুরুত্বহীন করার উদ্যোগ নেয়া। যেমন তাকে রাজগুরু কিয়াং এর দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা ও প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসবে তার গুরুত্ব কমিয়ে দেয়া। দ্বিতীয়ত- তার ফান্ডের উৎস দুদক ও এনবিআরের মাধ্যমে নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা। তৃতীয়ত-ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া উ চ হ্লা ভান্তেকে নতুন কোনো কিয়াং প্রতিষ্ঠার অনুমতি না দেয়া। পাহাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সরকারের খাস জমি দখল করে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তুলছে ‘ভাবনা কেন্দ্র’ বা কিয়াং। ভাবনা কেন্দ্রে বসেই উগ্র-জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ৯৬৯ উপজাতিদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। ৩৫ জনের বেশি মিয়ানমারের নাগরিক এ কাজে জড়িত রয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে। তারা ধর্মযাজক বা ভান্তে সেজে পাহাড়িদের মধ্যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে।
গত কয়েক মাসে তারা পার্বত্য এলাকায় ২৫ হাজারের বেশি অনুসারী তৈরি করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ৯৬৯ তাদের সুদূরপ্রসারী তৎপরতার সঙ্গে যোগ করেছে অস্ত্র ব্যবসা। ৪ লাখ টাকায় একে-৪৭, আড়াই লাখ টাকায় একে-২২ এর মতো ভয়াবহ অস্ত্র বিক্রি করছে এদেশের সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের কাছে। এসব বিষয় নিয়ে জানতে উ চ হ্লা ভান্তের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার ও ২৪ ইনফ্যানট্রি ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) মানবজমিনকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে ৯৬৯-এর তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা নতুন আতঙ্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের তৎপরতা নিয়ে সতর্ক রয়েছে।
৯৬৯ আন্দোলনের ফলে মিয়ানমারের বৌদ্ধদের মধ্যে ইসলাম ধর্মের তথা মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা বিদ্বেষ মিয়ানমারের সর্বত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মিয়ানমারের যেসব স্থানে মুসলমান জনগণ বাস করে সেসব স্থানে দিন দিন দাঙ্গা-হাঙ্গামা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে মিয়ানমারের পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের জনগণের প্রতিও মিয়ানমারের বৌদ্ধদের বিদ্বেষমূলক মনোভাব দেখা যাচ্ছে। গোয়েন্দা রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, উ চ হ্লা ভান্তে বান্দরবানে একের পর এক কিয়াং নির্মাণ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিনি রাজগুরু মন্দির দখল নেয়ার পাশাপাশি গোল্ডেন টেম্পল, রামজাদী টেম্পল নির্মাণ করেছেন। এছাড়া কিয়োক মো লং, কুহালং এবং ১২ মাইল এলাকায় আরো দুটি কিয়াংঘর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মধ্যে কিয়োক মো লং এর নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এসব কিয়াং তৈরির জন্য তিনি একদিকে যেমন জমি দখলের আশ্রয় নিয়েছেন অপরদিকে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা থেকে বিপুল পরিমাণ ফান্ড সংগ্রহ করছেন। তার নির্মিত কিয়াংয়ে তিনি ৯৬৯-এর ধ্যান-ধারণা প্রচার করছেন। পাশাপাশি মিয়ানমারের সন্দেহজনক ভান্তেদের আশ্রয় দিচ্ছেন। গোয়েন্দা রিপোর্টে স্থানীয় প্রভাব তুলে ধরে জানানো হয়, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রবারণা পূর্ণিমা (ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে) উৎসব অনুষ্ঠানে স্থানীয় এমপি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিংসহ স্থানীয় উল্লেখযোগ্য সকল সরকারি ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন।
ওই অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী মাথা নত করে উ চ হ্লা ভান্তেকে কুর্নিশ করে থাকেন। উ চ হ্লা ভান্তে উক্ত অনুষ্ঠানের সর্বোচ্চ আসনে আসীন থাকেন। এ সময় তিনি সবার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় বক্তব্যও রেখে থাকেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এতে করে স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীসহ সকল উপজাতি ও বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে উ চ হ্লা ভান্তের প্রাধান্য ও গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে প্রকারান্তরে তার সব ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড যেমন বৈধতা পাচ্ছে অপরদিকে তিনি বান্দরবানে সর্বোচ্চ সম্মানী ব্যক্তি ও ধরাছোঁয়ার বাইরে এমন একটি ধারণা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকলে উ চ হ্লা ভান্তেকে ভবিষ্যতে নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে বিবেচনার সুযোগ করে দেবে। তিনি এটাকে ব্যবহার করে ৯৬৯-এর অনুরূপ উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের সূচনা করার প্লাটফরম তৈরিতে সচেষ্ট হবেন। ২০১৬ সালের ২০শে মের ঘটনার উদাহরণ দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওইদিন রাজগুরু মন্দিরের বটগাছে পানি সিঞ্চন নিয়ে রাজা ও উ চ হ্লা ভান্তে সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে জেলা প্রশাসক সমাধানের উদ্যোগ নেন। এ পর্যায়ে তাকে জেলা প্রশাসক ডিসি অফিসে আসার জন্য অনুরোধ করলে তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে আলোচনার জন্য রাজগুরু কিয়াং এ পাঠালে উ চ হ্লা ভান্তে সেখানে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকেন।
এ থেকে তার মধ্যে প্রশাসনকে অবজ্ঞা করার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। গোয়েন্দা রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, সম্প্রতি উ চ হ্লা ভান্তে তার ফেসবুক পেইজে নিয়মিত রাঙ্গামাটির লংগদুর ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনী বিরোধী স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। তাছাড়া তিনি লংগদুর বাঙালি-উপজাতির এ ঘটনাকে মুসলিম-বৌদ্ধ সমস্যা অর্থাৎ ধর্মীয় সমস্যা হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন। তিনি ৯৬৯ কর্তৃক মুসলিম রোহিঙ্গাদের নিপীড়িত করার সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনের অপপ্রচেষ্টা করছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, তিনি লংগদুর ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়েছে মর্মে মিথ্যা তথ্য ও বানোয়াট খবর প্রচার করে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে বলা হয়, তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মাঝে মুসলিম বিরোধী মনোভাব সৃষ্টির মাধ্যমে মিয়ানমারের উগ্রপন্থি বৌদ্ধ সংগঠন ৯৬৯-এর হীন উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে কাজ করছেন বলে প্রতীয়মান হয়।
গোয়েন্দা রিপোর্টের শেষ দিকে উ চ হ্লা ভান্তের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনটি ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। প্রথমত- তাকে গুরুত্বহীন করার উদ্যোগ নেয়া। যেমন তাকে রাজগুরু কিয়াং এর দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা ও প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসবে তার গুরুত্ব কমিয়ে দেয়া। দ্বিতীয়ত- তার ফান্ডের উৎস দুদক ও এনবিআরের মাধ্যমে নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা। তৃতীয়ত-ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া উ চ হ্লা ভান্তেকে নতুন কোনো কিয়াং প্রতিষ্ঠার অনুমতি না দেয়া। পাহাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সরকারের খাস জমি দখল করে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তুলছে ‘ভাবনা কেন্দ্র’ বা কিয়াং। ভাবনা কেন্দ্রে বসেই উগ্র-জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ৯৬৯ উপজাতিদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। ৩৫ জনের বেশি মিয়ানমারের নাগরিক এ কাজে জড়িত রয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে। তারা ধর্মযাজক বা ভান্তে সেজে পাহাড়িদের মধ্যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে।
গত কয়েক মাসে তারা পার্বত্য এলাকায় ২৫ হাজারের বেশি অনুসারী তৈরি করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ৯৬৯ তাদের সুদূরপ্রসারী তৎপরতার সঙ্গে যোগ করেছে অস্ত্র ব্যবসা। ৪ লাখ টাকায় একে-৪৭, আড়াই লাখ টাকায় একে-২২ এর মতো ভয়াবহ অস্ত্র বিক্রি করছে এদেশের সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের কাছে। এসব বিষয় নিয়ে জানতে উ চ হ্লা ভান্তের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার ও ২৪ ইনফ্যানট্রি ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) মানবজমিনকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে ৯৬৯-এর তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা নতুন আতঙ্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের তৎপরতা নিয়ে সতর্ক রয়েছে।