দেশ বিদেশ

মাস্টারপ্ল্যানের বিরোধিতা করায় মাহবুব তালুকদারের পদত্যাগ দাবি করছে সরকার: রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ অক্টোবর ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৩৬ পূর্বাহ্ন

 একতরফা নির্বাচনের গোপন মাস্টারপ্ল্যানের বিরোধিতা করায় সরকার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের পদত্যাগ দাবি করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তারা সরকারের কাছে পরাধীন থাকতে চাচ্ছেন। সরকার যেটা চাইছে সেটাই তারা বলছে। সেখানে একজন নির্বাচন কমিশনার ব্যতিক্রম। তিনি একতরফা নির্বাচনের গোপন মাস্টারপ্ল্যানের বিরোধিতা করায় সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা পদত্যাগ দাবি করছেন। রিজভী বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে দিতে হবে এ কথা কোনো কমিশনার বললে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কিছু তো দেখছি না। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতারা এখন বলছেন এটা চাওয়া সংবিধানসম্মত না। এর আগে প্রধান বিচারপতির কী অবস্থা করেছেন তা জাতি দেখেছে। আমার আশঙ্কা হচ্ছে একতরফা নির্বাচনের বিরোধিতা করায় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে নিয়ে সরকার কখন কি ঘটাবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিশ্চিহ্ন করার রায় ২১শে আগস্টের রায়। এই নিশ্চিহ্ন প্রক্রিয়ার অন্যতম টার্গেট বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কোনো রকম সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়াই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আক্রোশমূলক এই রায়ে জাতীয়তাবাদী শক্তির অন্যতম অগ্রনায়ককে প্রহসনের বিচারে সাজা দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা এই রায়ের মাধ্যমে মূল দু’টি লক্ষ্য পূরণ করতে চাচ্ছেন- শেখ হাসিনার শাসনামলে চারদিকে যে নৈরাজ্যের ছবি মানুষ অবলোকন করছে সেখান থেকে দৃষ্টি ফেরানো আর তারেক রহমানের ওপর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে জিয়া পরিবারকে হেয় করা। রিজভী বলেন, মইন-ফখরুদ্দীন গংদের সহায়তায় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের নিজ বাসভবন থেকে বের করে দেয়া, বিমান বন্দরসহ বিভিন্ন স্থাপনা থেকে শহীদ জিয়া ও খালেদা জিয়ার নাম মুছে ফেলা, হত্যার উদ্দেশ্যে কাওরান বাজারে তার গাড়িবহরে যুবলীগ-ছাত্রলীগের আক্রমণ, বালির ট্রাক দিয়ে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় ও তার বাসভবন অবরুদ্ধ করে রাখা, একের পর এক সাজানো মামলায় দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে সাজা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা, সবই করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় জিয়া পরিবারকে হেয় করার জন্য। রিজভী বলেন, ২০০৪ সালের ১৭ই আগস্ট মুক্তাঙ্গনে সমাবেশের জন্য আবেদন করে ১৯ তারিখ তারা পুলিশের অনুমতি কপি পেয়েছে। অথচ শেখ হাসিনা বলেছেন- ২০শে আগস্ট রাতে দরজার নিচ দিয়ে পুলিশ অনুমতিপত্র দিয়ে গেছে যা তারা দেখেনি। এ কথা নির্জলা মিথ্যা। কারণ ১৯শে আগস্টই অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ। যদি মুক্তাঙ্গনে অনুমতি না পেতো তাহলে শেখ হাসিনা ২০শে আগস্ট বেরাইদের জনসভায় এ বিষয় নিয়ে কঠোর সমালোচনা করতেন। কিন্তু রহস্যজনকভাবে তিনি কিছুই বলেননি। যা তার স্বভাব বিরুদ্ধ। আওয়ামী লীগের মধ্যে এটা নিয়ে লুকোচুরি খেলা হয়েছে। যা গভীর রহস্যের জন্ম দিচ্ছে। পুলিশকে কোনো কিছু না জানিয়ে মুক্তাঙ্গন থেকে সমাবেশ অকস্মাৎ তাদের দলীয় অফিসের সামনে নেয়া হলো কেন। অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে রায়ে সাজা দেয়া হলো। তারা সমাবেশের ভেন্যু সম্পর্কে পূর্বে ওয়াকিবহাল না হলে নিরাপত্তা দেবে কীভাবে? ২১শে আগস্ট হঠাৎ করে দুপুরে ভেন্যু পরিবর্তনের খবর শোনার পরেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রচেষ্টা পুলিশ করেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিজেরাই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়ার কোনো স্পেস রাখেনি। এসব কিছুতে প্রমাণ হয়- তাদেরই কোনো পক্ষ এই ঘটনার নাটেরগুরু। এই ঘটনা নিয়ে জনগণ ও সচেতন শ্রেণির মনে প্রশ্ন দানা বেঁধেছে। তিনি বলেন, সবচেয়ে চমকপ্রদ কথা হচ্ছে- যার ভাষ্যের ওপরে এই মামলার সকল রায় নির্ধারিত হচ্ছে সেই মুফতি হান্নানকে বহু আগেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তার উপর মুফতি হান্নানকে জেরা করার মতো যথেষ্ট সময় পায়নি আসামি পক্ষ। তার আগেই তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। অথচ ২১শে আগস্টের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ মামলার ফয়সালা করার আগ পর্যন্ত তার ফাঁসি স্থগিত রাখাটাই আবশ্যক ছিল। যাকে গ্রেনেড হামলার জন্য দায়ী করা হয়েছে তার কি বিচার হয়েছে? তাকে এই রায়ে কেন সাজা দেয়া হলো না? আগেই মেরে ফেলা হলো কেন? আসামির সাক্ষীতে কি আরেক আসামির বিচার হয়? অদ্ভুত আওয়ামী বিচার প্রক্রিয়া। ২১শে আগস্টের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাকে দিয়ে পুনঃতদন্ত এবং সর্বশেষ আদালত কর্তৃক ফরমায়েশি রায়, এসব কিছুই প্রশ্নবিদ্ধ। জনগণ এসব কিছুই মেনে নেয়নি। এই প্রতিহিংসামূলক ফরমায়েশি রায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মহাজোট সরকারের নিষ্ঠুর অবিচারের আরেকটি দৃষ্টান্ত।
আমরা এই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার সুষ্ঠু বিচার চাই। তাই অবিলম্বে এই রায় বাতিল করতে হবে। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ তদন্ত করে ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হামলা-মামলার তথ্য তুলে ধরে রিজভী বলেন, বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ফজলুল হক মিলন গতকাল কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়ন থেকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করে মোক্তারপুরে অন্য একটি পূজামণ্ডপ সাওরাইট বাজারে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ক্যাডাররা রামদা, রড ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ আক্রমণ করে এবং ৮টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এই আক্রমণে আবদুল্লাহ, সুমন, মো. জাহাঙ্গীর, আশরাফ, মোতালিব, সজীব, জয়ফুল ও নয়নসহ ১০ জন মারাত্মক আহত হন। পরে আবদুল্লাহকে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। আমি আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি।
এ ছাড়া, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা তেকানী ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মোকারম হোসেন মাস্টার, বিএনপি নেতা মো. বিপ্লব হোসেন, মো. শহীদ হোসেন, মো. সিয়াম হোসেন, মো. আপেল মাহমুদ, মো. আতিকুর রহমানসহ ১৭ জনকে একটি ইসলামী জলসা থেকে ফেরার পথে সোনাতলা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং সোনাতলা উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি সভাপতি এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকিরসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য, ধ্বংসাত্মক ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মিথ্যা অভিযোগে গায়েবি মামলা দায়ের করেছে। সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন বিলালকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। টাঙ্গাইলের জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক আবুল কাশেম, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক খন্দকার রাশেদুল আলম, জেলা যুবদলের নেতা মাসুদ তালুকদারসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে গতকাল মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। আমি দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদেরকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হাসান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া,  দপ্তর সহ সম্পাদক মুনির হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status