বিশ্বজমিন

অতোটা উদার নন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান

মানবজমিন ডেস্ক

১৬ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:০২ পূর্বাহ্ন

সৌদি আরবের বাদশা সালমান অ্যালজিমার্স রোগে ভুগছেন। এমন অবস্থায় ক্ষমতার নেপথ্যে রয়েছেন তার পুত্র ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। তাকে ২০১৭ সালের জুনে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নিয়োগ করেন বাদশা সালমান। এর আগে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় মুহাম্মদ বিন নায়েফকে। সে হিসেবে প্রায় দেয় বছর ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। তবে এরই মধ্যে তিনি ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন। কখনো তার প্রশংসা করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সমালোচনার শিকার হচ্ছেন। বলা হচ্ছে, তাকে যতটা উদার মনে করা হয়েছিল তিনি ততটা নন। একদিকে রয়েছে তার সংস্কারমুলক পদক্ষেপ। অন্যদিকে তিনি ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে চালিয়েছেন মারাত্মক দমনপীড়ন। গত বছর তিনি কয়েক ডজন প্রিন্সকে একটি হোটেলে আটকে রাখেন। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ওঠে বিশ্বজুড়ে। বলা হয়, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য তিনি এসব করছেন। এরই মধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে গড়ে তোলেন সুসম্পর্ক। ট্রাম্পের জামাই জারেড কুশনারের সঙ্গে রয়েছে তার সু সম্পর্ক। কিন্তু গত ২রা অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনসুলেটে প্রবেশ করার পর নিখোঁজ হন সাংবাদিক জামাল খাসোগি। তিনি সৌদি আরবের শাসকগোষ্ঠীর কড়া সমালোচক। তুরস্কের কিছু কর্মকর্তা দাবি করেন, ওই কনসুলেটের ভিতরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আর এতে হাত থাকতে পারে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের। ফলে তাকে নিয়ে নতুন করে শুরু হয় বিশ্লেষণ। এ নিয়ে বিবিসি একটি বিশ্লেষণ দাঁড় করেছে। তাতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ান সৌদি আরবের মাটি স্পর্শ করার ১৮ মাস এখনো পার হয় নি। সে সময় সৌদি সরকার লাল গালিচা সংবর্ধনার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়েছিল। ট্রাম্প যখন তার প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে সৌদি আরবকে বেছে নিয়েছিলেন, তখন সৌদি আরবের অনেক মানুষ খুশি হয়েছিল। ট্রাম্পের পূর্বসূরি বারাক ওবামাকে নিয়ে সৌদি আরবের মানুষ খুব একটা গুরুত্ব দেয় নি। কারণ, তারা মনে করে যে, ওবামা ইরানের সাথে খারাপ একটি পারমাণবিক চুক্তি করেছেন। কিন্তু ডনাল্ড ট্রাম্প হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যারা সাথে তারা কাজ করতে পারে বলে ভেবেছিলেন। ইয়েমেন যুদ্ধের জন্য অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ওবামা সর্বোচ্চ যে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন তা বাতিল করেছেন ট্রাম্প। সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ট্রাম্প কোন বয়ানও দেন নি।

এরই মধ্যে নানা সমালোচনার মধ্যে পড়েছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। তার সাথে ট্রাম্পের জামাই জারেড কুশনারের যে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল তা নিয়ে খুশি ছিলেন তিনি। ট্রাম্পের সফরের পর সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান হোয়াইট হাউজ, পেন্টাগন এবং হলিউড সফর করেছেন। এরপর মোহাম্মদ বিন সালমান যখন লন্ডন সফর করেন তখনো তাকে স্বাগত জানানো হয়েছিল। যদিও সে সময় ইয়েমেনের যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছিল। অন্যদিকে নিজ দেশে নানা ধরনের সামাজিক সংস্কারের উদ্যোগ পশ্চিমা কূটনীতিকদের প্রশংসা পেয়েছে। নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া, বিনোদনের নানা উদ্যোগ নেয়া এবং ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়েছে। একই সাথে সৌদি আরবের অর্থনীতিকে তেল রপ্তানির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার নানা উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।

এজন্য ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। সৌদি আরবে অনেক পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে সতর্ক সংকেতের জায়গাটি হচ্ছে, পশ্চিমা বিশ্ব মোহাম্মদ বিন সালমানকে যতটা উদার ভেবেছিলেন তিনি আসলে ততটা উদার নন। গত বছর দুর্নীতির অভিযোগে সৌদি আরবের কয়েক ডজন প্রিন্স এবং ব্যবসায়ীদের যখন পাঁচ তারকা হোটেলে আটকে রাখা হয়, তখন মোহাম্মদ বিন সালমানের কঠোরতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল। এমনকি লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরিকে স্বল্প সময়ের জন্য আটকে রেখেছিলেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে আটক রেখে সাদ হারিরিকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে সৌদি আরব। মোহাম্মদ বিন সালমানের সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে কেউ যদি কোন প্রশ্ন তোলে তাদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এমনকি তার সংস্কার কাজের সমালোচনা করে কেউ যদি শুধু একটি টুইট করলেও তাকে গ্রেফতার করার নির্দেশ রয়েছে। মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত জামাল খাসোগি অক্টোবর মাসের ২ তারিখে নিখোঁজ হয়ে যাবার পর মোহাম্মদ বিন সালমানের ভূমিকা নিয়ে নানা সন্দেহ তৈরি হয়। সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র ডনাল্ড ট্রাম্পও বলতে বাধ্য হয়েছেন যে জামাল খাসোগি নিখোঁজের সাথে সৌদি আরব সরকার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে ‘কড়া শাস্তি’ পেতে হবে তাদের। এর জবাবে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বলেছেন, তারাও এর পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত। বৈশ্বিক তেলের বাজারে সৌদি আরবের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। সৌদি আরবের রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের ক্রমাগত প্রচারণার কারণে সে দেশের অনেক মানুষ এখনও সরকারকে সমর্থন দিচ্ছেন। সে দেশে এমন গুঞ্জনও আছে যে সৌদি আরবের নির্দোষ রাজতন্ত্রের বদনাম ঘটানোর জন্য ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটে কাতার এবং তুরস্ক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু মোহাম্মদ বিন সালমান বাড়াবাড়ি করেছেন কিনা সে প্রশ্নও এখন অনেকে তুলছেন। ইয়েমেনে এক ব্যয়বহুল যুদ্ধে তিনি সৌদি আরবকে জড়িয়েছেন। এ যুদ্ধে সৌদি আরব কখনোই জিততে পারবে না বলে মনে করেন অনেকে। প্রতিবেশী কাতারের সাথে চরম বৈরিতা তৈরি হয়েছে। মানবাধিকার ইস্যুতে কানাডার সাথে বিবাদে জড়িয়েছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status