বাংলারজমিন

ঝিনাইদহ কৃষি ইনস্টিটিউটের অনন্য নজির

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

১৬ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:১১ পূর্বাহ্ন

ঝিনাইদহ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার পাশাপাশি ফসল উৎপাদন করে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে। ২০১৩ সালে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মাঝে এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি কীটনাশকমুক্ত ফসল উৎপাদনে যুক্ত হয়েছেন। তাদের এই সফলতা কৃষি বিভাগ গ্রহণ করেছে। জানা গেছে, ২০০৬ সালে ঝিনাইদহে ২১ দশমিক ৩৮ একর জমির ওপর এ কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। এ কেন্দ্রে তিনটি ভবনে ১০টি শ্রেণিকক্ষ, পাঁচটি ল্যাবরেটরি, একটি লাইব্রেরি, একটি সভাকক্ষ, শিক্ষার্থীদের হোস্টেল, অধ্যক্ষের বাসভবন, গুদামঘরসহ আরো কিছু ভবন রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চারদিকে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। রয়েছে বড় একটি মাঠ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ প্রতিষ্ঠানের উপসহকারী প্রশিক্ষক মো. নাজিম উদ্দিন শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের পরিত্যক্ত জমিতে ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নেন। শিক্ষার্থীরা যাতে কৃষিকাজের বাস্তব জ্ঞানসহ উৎপাদিত ফসল ভোগ করতে পারেন। এরকম ভাবনা থেকে শিখি-করি-খাই (শিকখা) কর্মসূচি হাতে নেয় তারা। এ কাজে সফলতাও ধরা দিয়েছে।

তাদের এ কর্মসূচি এখন কৃষি বিভাগ মডেল হিসেবে গ্রহণ করেছে। দেশের সব কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এ পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ইনস্টিটিউটের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষক নাজিম উদ্দিনের পরিকল্পনা মোতাবেক তারা ২০১৩ সালে ৩৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রথম এ কার্যক্রম শুরু করেন। ক্যাম্পাসের মধ্যে পরিত্যক্ত ৬০ শতক জমি পরিষ্কার করে আবাদযোগ্য করেন। কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে জৈব পদ্ধতিতে করা হচ্ছে সবজি চাষ। তারা সারা বছর উৎপাদিত সবজি খাচ্ছেন।

বর্তমানে আবাদি জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ একরে। চাষ করা হচ্ছে ৬০ প্রকার ফসল। কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ছেলেমেয়েরা কাজ করছে ফসলের ক্ষেতে। পড়ালেখার পাশাপাশি শিখছে হাতেকলমে কৃষিকাজ। আর তাঁদের উৎপাদিত সবজি নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও বিক্রি করছেন তারা।

এখানে উৎপাদন করা হচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মুলা, গাঁজর, লালশাক, পালংশাক, ব্রকলি, ড্রনফুট্রস, পুদিনা, ধনেপাতা, চায়না কটেজ, শালগম, ওলকপি, মটরসুঁটি, গম, সয়াবিন, ভুট্টা, রসুনসহ ৬০ প্রকার সবজি। এ ছাড়াও পালন করা হচ্ছে হাঁস, টার্কি মুরগি, মাছ, গরু ও কবুতর। সবজির জন্য জমি তৈরি, বীজ বপন, চারা রোপণ, সার প্রয়োগ, পানি ব্যবস্থাপনা, রোগ ও পোকা দমনসহ ফসল তোলার পর বাজারজাতকরণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরাই করেন।

শিক্ষার্থীরা আরো জানান, ২০১৪ সালের অক্টোবরের আগ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পভুক্ত ছিল। অক্টোবরে রাজস্ব খাতভুক্ত হয়। তাদের এ কর্মসূচিতে আরো গতি আসে। কর্মসূচির নামকরণ করা হয় শিখি-করি-খাই (শিকখা)। এখন ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী শিক্ষার পাশাপাশি ফসল উৎপাদনে যুক্ত রয়েছেন। তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি হচ্ছে। ওই টাকায় কৃষির নানা উপকরণ কেনা হচ্ছে। সবজি ক্রেতা মুশফিকুর রহমান জানান, প্রতিনিয়ত তিনি এখান থেকে সবজি ক্রয় করেন। এখানে বাজার মূল্য থেকে কম দামে সবজি কেনা যায়। এ ছাড়াও এখানে জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত সবজি বিক্রয় করা হচ্ছে বলে তার আগ্রহ বেশি।

মাগুরা হটিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ববিদ ড. খান মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ঝিনাইদহ এটিআই দেশের কৃষি বিভাগে একটি মডেল। তার কর্মস্থল থেকে স্বল্প মূল্যে বিভিন্ন সবজি ও ফলের চারা কলম এখানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রায়ই এখানে পরিদর্শন করে পরামর্শ প্রদান করেন। তিনি বলেন, সরকার এ মডেল অনুসরণ করলে দেশের কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে। কর্মসূচির উদ্যোক্তা প্রশিক্ষক নাজিম উদ্দিন জানান, সাধারণত দেশের কৃষি প্রতিষ্ঠানগুলোয় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে কৃষিকাজ দেখানোর জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। পোকা দমন ও চাষপদ্ধতি দেখানো হয়। শিক্ষার্থীরা যাতে পড়ালেখার পাশাপাশি সারা বছরই উৎপাদনে অংশ নিতে পারেন, এ ভাবনা থেকে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটের পুকুরে মাছ চাষ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস পরিছন্নতা, উন্নয়ন ও বৃক্ষরোপণ করেছেন।

প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের যোগদান করার পর থেকেই এ কাজের পরিধি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, এ কার্যক্রমের মাধ্যমে যাতে শিক্ষার্থীরা কৃষিক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, সে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ফসল উৎপাদনসহ বাজারজাতকরণ পর্যন্ত শিক্ষালাভ করতে পারছেন। ভবিষ্যতে সবজি বিক্রির অর্থ দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসফর ও টিউশন ফি পরিশোধের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত কোনো প্রশিক্ষণ দেয়া যাচ্ছে না। কারণ, এখানে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, ক্রম মেশিনসহ নেই কোনো আধুনিক প্রযুক্তি। সরকার যদি এ চাহিদা মেটাতো তাহলে শিক্ষার্থীরা আরো ভালোভাবে প্রযুক্তি জ্ঞান আহরণ করতে পারতো। তিনি আরো জানান, শিখি-করি-খাই এ কর্মসূচি এখন কৃষি বিভাগের কাছে একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status