বাংলারজমিন

নানা সংকটে শেখ আবু নাসের হাসপাতাল

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

১৪ অক্টোবর ২০১৮, রবিবার, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন

কিডনির জন্য ডায়ালাইসিস করতে সিরিয়াল দেয়ার ছয় মাসেও সুযোগ পাওয়া যাবে কি না সেটি নিশ্চিত করে বলা যায় না। আর ভর্তির জন্য ক্ষেত্র বিশেষে সময় লেগে যায় এক মাসেরও বেশি। বিশেষ করে ডায়ালাইসিসের জন্য একজন রোগীর মৃত্যু না হলে অন্য রোগীর জন্য ভর্তির সুযোগ হয় না। সে কারণে অনেকটা অমানবিক হলেও এক রোগীর মৃত্যু কামনাও করতে হয় অন্য রোগীকে। খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের এমন চিত্র প্রতিনিয়তই মানুষকে কাঁদায়। ৩০টি বেডে রোগী ভর্তির সুযোগ থাকলেও বর্তমানে প্রায় ৩৫ জন রোগী সিরিয়াল দিয়ে রয়েছেন ভর্তির অপেক্ষায়। আর ডায়ালাইসিসের জন্য অপেক্ষমাণ আছেন প্রায় ২শ’।
নেফ্রোলজি বিভাগের পাশাপাশি হাসপাতালের পরিচালক যে বিভাগের চিকিৎসক অর্থাৎ কার্ডিওলজি বিভাগেরও করুণ দশা। এ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা এনজিওগ্রাম। হৃদরোগীদের জন্য এ হাসপাতালে এনজিগ্রাম করা, রিং পড়ানো, পেসমেকার বসানোর বিষয়টি এ অঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু বিগত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে এনজিওগ্রাম মেশিন নষ্ট। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, কবে নাগাদ এটি ঠিক হবে সেটি বলা যাচ্ছে না। পত্র দিয়েই দায়িত্ব শেষ করা হচ্ছে মেশিন সংস্কারের পর্ব।
এভাবে নানা সংকটের মধ্যেই চলছে খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল। সংকটের মধ্যেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে রয়েছে সফলতা। ইতিমধ্যে এ হাসপাতালে প্রথম ব্রেন টিউমার অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। এ অপারেশন করেছেন নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা। নিউরো মেডিসিন বিভাগেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রোগী আসছে। এ সফলতা ধরে রাখতে হাসপাতালকে রিসার্চ ইনস্টিটিউট করা, জনবল নিয়োগ দেয়াসহ অন্যান্য সংকট সমাধান জরুরি বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
খুলনা মহানগরীর গোয়ালখালীস্থ শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের সূত্রটি বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুরুষ কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে ৫৫৫৫ নম্বর সিরিয়ালের রোগী ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সিরিয়াল রয়েছে ৫৫৮৪ নম্বর। আর মহিলা রোগীদের সিরিয়াল ৩৮৮৮ থাকলেও ভর্তি হয় ৩৮৮২ নম্বর পর্যন্ত। অর্থাৎ পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে ভর্তির জন্য এখনো ৩৫ জন রোগীকে অতিক্রম করতে হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে ভর্তি অন্য রোগীদের ছাড়পত্র না দেয়া অথবা অন্য কোথাও রেফার্ড না করা পর্যন্ত এসব রোগীদের অপেক্ষা করতে হবে। এর বাইরে এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখা রোগী অথবা বাইরে থেকে আসা জরুরি রোগীদের ভর্তির সিরিয়াল দিয়ে তাদেরকেও অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু বেড ফাঁকা না হওয়া পর্যন্ত ভর্তির কোনো সুযোগই নেই।
সূত্রটি বলছে, ভর্তির চেয়ে সবচেয়ে বড় সংকট রয়েছে ডায়ালাইসিসের ক্ষেত্রে। বর্তমানে ডায়ালাইসিসের জন্য ৬০৩ নম্বর পর্যন্ত সুযোগ পেলেও সিরিয়াল রয়েছে ৭৯৫ জন। অর্থাৎ ১৯২ জন রোগীর রোগীকে অতিক্রম করে সর্বশেষ রোগীকে ভর্তির সুযোগ করতে হবে। যেটি আগামী ছয় মাসের মধ্যেও সম্ভব কি না তাও বলা যাচ্ছে না।
খুলনাঞ্চলে কিডনি রোগীদের জন্য আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালটি আশীর্বাদ হিসেবে চললেও দিন যতই যাচ্ছে রোগীর চাহিদাও তত বাড়ছে। এতে সংকটও প্রতিনিয়ত প্রকট হচ্ছে। তবে, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও (সামেকহা) কিডনি বিভাগ খোলা হলেও সেখানেও রয়েছে জনবল সংকট। সামেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. শাহজাহান বলেন, ওই হাসপাতালে ১৬টি ডায়ালাইসিস মেশিন থাকলেও জনবল সংকটের কারণে সবগুলো চালিয়ে রাখা যাচ্ছে না। প্রতিদিন আট থেকে ১২টি মেশিনে ডায়ালাইসিস করা হয়। জনবল সংকট দূর হলে সবগুলো মেশিন দিয়েই কম মূল্যে (সরকার নির্ধারিত) ডায়ালাইসিসের সুযোগ পাবেন এ অঞ্চলের রোগীরা।
খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের জন্য মাত্র ৪শ’ টাকার বিনিময়ে ডায়ালাইসিসের সুযোগ থাকায় রোগীদের চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে গরিব রোগীদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। কিন্তু সরকারি এসব হাসপাতালের সংকটের কারণে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে অনেকেই প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য হন। বর্তমানে খুলনায় কয়েকটি প্রাইভেট ক্লিনিক ও বেসরকারি সংস্থায়ও কিডনি ডায়ালাইসিস করা হয়। তবে, এসব প্রতিষ্ঠানে রোগীদের ডায়ালাইসিসের জন্য দিতে হয় প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। অন্যান্য সংকট সম্পর্কে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে জনবল সংকট সমাধান এবং রিসার্চ ইনস্টিটিউট করাটা জরুরি। রিসার্চ ইনস্টিটিউট করা হলে অন্তত কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সার্বক্ষণিক পাওয়া যেত। বিষয়টি বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে রয়েছে বলেও তিনি জানান।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ মোশাররফ হোসেন বলেন, পদ্মার এ পাড়ের মানুষের জন্য শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালটি একটি মডেল হাসপাতাল। অথচ এ হাসপাতালেও এমন সংকট থাকাটা সঠিক নয়। এটিকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সংকট সমাধানে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।


   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status