অনলাইন

টানা বৃষ্টিতে দিনভর দুর্ভোগ চট্টগ্রামে

পাহাড় থেকে সরে গেছে ৭০০০ মানুষ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

১২ অক্টোবর ২০১৮, শুক্রবার, ৭:৩৭ পূর্বাহ্ন

ঘূর্ণিঝড় তিতলির আঘাত না হানলেও এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। ফলে শুক্রবার ভোর থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিপাত হয় চট্টগ্রামেও। সেই সঙ্গে বিকেলে জোয়ারের পানিতে নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় দিনভর ভোগান্তিতে পড়ে নগরীর সাধারণ মানুষ।

অন্যদিকে টানা বৃষ্টিপাত এবং শনিবার পর্যন্ত আরও ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ফলে পাহাড় ধসে ক্ষয়ক্ষতি ও জীবহানির শঙ্কায় নগরীর বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারী অন্তত ৭০০০ মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান জানান, শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নগরীর লালখান বাজারের মতিঝর্ণা, পোড়াপাহাড়, একে খান ও বায়েজীদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারী প্রায় ৭০০০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যাদের কোনরকম ফোর্স করা হয়নি। শুধুমাত্র বুঝানো হয়েছে। তাদের বাড়িঘরও উচ্ছেদ করা হয়নি।

তিনি বলেন, ঘুর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও শুক্রবার ভোর থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিপাত হয়। এরকম বষ্টিপাতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকে বেশি। তাই আমরা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের ক্ষয়ক্ষতি ও জীবনহানী সম্পর্কে বুঝিয়েছি। তারা নিজেরা বুঝতে পেরে ঝুঁঁকিপূর্ণ বসতি থেকে সরে গেছেন। কেউ কেউ আতœীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। আর কেউ কেউ লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জেলা প্রশাসনের আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে এই ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত সারাদেশে ভারী বর্ষণ ও দমকা ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবীদ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান জানান, তিতলি বর্তমানে ভারতের উড়িষ্যা ও এর আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে তিতলি আঘাত হানার পর উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্মচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হবে। এজন্য সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সর্তক সংকেত এবং ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোকে দুই নম্বর নৌ হুশিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আব্দুল মান্নান জানান, শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সকাল নয়টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ছিল ৪৫ দশমিক ২ মিলিমিটার। রেকর্ড পরিমান এ বৃষ্টির পর সাগরের জোয়ারের পানি এসে চট্টগ্রামের মানুষের ভোগান্তি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকা, হালিশহর, চকবাজার, বাকলিয়া, কাতালগঞ্জসহ বেশ কিছু নিচু এলাকায় বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।

আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকার রিকশাচালক হাবিবুর রহমান বলেন, জোয়ারের পানির সঙ্গে আমাদের নিত্য দেখা হয়। এখানে জোয়ারের পানিতেই রাস্তা ডুবে যায়, তার ওপর প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় আমাদের ভোগান্তি অনেক বেড়ে গেছে।
সিডিএ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা বাহার মিয়া বলেন, আমাদের দুর্ভোগের ইতিহাস দীর্ঘ। এসব কথা বলে আর কী হবে। সারা বছরের এ ভোগান্তি এখন আমাদের নিত্য সঙ্গী। জোয়ারের পানিতে যেখানে সয়লাব হচ্ছে এলাকা,  সেখানে সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে কি অবস্থা হবে ভেবে নিতে পারেন সহজেই।

খুলশী এলাকার একটি কো¤পানিতে  সেলস এন্ড মার্কেটিং-এর প্রধান হিসেবে কর্মরত আছে হামিদুর রহমান। তিনি বাস করেন নগরীর চকবাজার এলাকায়।

তিনি বলেন, সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সপ্তাহে ছুটির দিনে একটু বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে থাকে। বৃষ্টির পানিতে রাস্তা ডুবে যাওয়ায় তা আর হয়ে উঠেনি।
 
নগরীর হালিশহর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন, আমাদের র্দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। আমাদের নিত্য দিনের সমস্যাটি নিয়ে বন্দর, সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড একে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে শেষ। এদিকে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status