ষোলো আনা

‘ততক্ষণে রক্তে ভিজে গেছে বিছানার চাদর’

মো. কামরুল ইসলাম

৫ অক্টোবর ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন

আব্দুর রউফ রনির আঁকা ছবি

জরিনা বিবি (ছদ্মনাম) জন্মস্থান ভোলা। বয়স আনুমানিক ৩৫। ছোট বোন করিমন (ছদ্মনাম) ওমানে ছিলেন ৫ মাস। করিমনের ফেরার পর ওমান যান বড় বোন জরিনা বিবি। চোখে স্বপ্ন, মনে আশা, লক্ষ্য ভাগ্য পরিবর্তন। ওমানে তিনি ছিলেন প্রায় তিন মাস। দুই বোন একই শহরে ভিন্ন বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজে নিযুক্ত হন।

জরিনা বিবি যে বাড়িতে কাজ করতেন সে বাড়ির সদস্য সংখ্যা ১০। বাড়ির মালিক, মালিকের স্ত্রী, তাদের চার মেয়ে ও চার ছেলে। ছেলে-মেয়েরা ছিল মাদরাসার শিক্ষার্থী।

প্রথমে সবাই তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন সেই সঙ্গে দিতেন ভালো খাবার। বাড়ির উঠানে লাগিয়েছিলেন মরিচ, কুমড়ার চারাসহ আরো অন্যান্য শাক ও সবজির বীজ।

দুই মাস যেতেই সমস্যায় পড়েন তিনি। সমস্যার কারণ তার ছোট বোন বাংলাদেশে আসার পর আর ফিরে আসেনি। তখন ছোট বোনের বাড়ির মালিক তার বাড়ির মালিককে চাপ দিতে থাকে। তার ছোট বোনকে ওমানে ফেরত আনতে হবে আর না হয় বাংলাদেশে পাঠাতে যে খরচ হয়েছে তা দিতে হবে। জরিনার পক্ষে ছোট বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি তাই তার উপর নেমে আসে সীমাহীন অত্যাচার।

জরিনা বিবি বলেন, আমাকে  রোজ মালিকের বউ আর তার বড়  মেয়ে মারধর করতো, চুল ধরে ঘুরাইতো, চর থাপ্পড় মারতো, বুকে পিঠে কিল ঘুষি ও মারতো। এমনই খারাপ অবস্থা হয় আমি নিজেই খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই। পাশের বাড়ির ড্রাইভার ছিলেন আমার এলাকার পরিচিত। তিনি আমার চিৎকার শুনে পুলিশে ফোন দেন। পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে। কিন্তু, ততক্ষণে আমার মুখ দিয়ে রক্ত পড়ে ভিজে গেছে একটি সোফা, বিছানার আস্ত একটা চাদর।

পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে এবং মালিককে নির্দেশ দেয় জরিনাকে দ্রুত দেশে ফেরত পাঠাতে।

জরিনা আরো বলেন, আমাকে প্রতি মাসে বাংলাদেশি টাকায় ১৬ হাজার টাকা করে দেয়ার কথা ছিল (তিন মাসে ৪৮ হাজার টাকা)। বিমান বন্দরে মালিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর নিয়েছিলেন। টাকা পাঠানোর কথা বললেও প্রায় ৩/৪ মাস হতে যাচ্ছে ১ টাকাও অ্যাকাউন্টে আসে নাই।

জরিনা এখন পরিবারসহ থাকেন ঢাকায়। স্বামী রিকশাচালক, আর জরিনা কাজ করেন অন্যের বাড়িতে। দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে ভালোই আছেন তিনি। তিনি বলেন, দুই বেলা ভাত খাইতে পারি। আল্লাহ ভালোই রাখছে। তয় রাইতে স্বপনে ফিরা আসে ওমানের দিনগুলা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status