ষোলো আনা

৫০ বছর পর সুপেয় পানির অভাবে জনশূন্য হবে ঢাকা

শরিফুল ইসলাম

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

রাজধানী ঢাকায় প্রায় দুই কোটি মানুষের বাস। বিশাল জনসংখ্যার এ মেগাসিটির নাগরিকদের জন্য বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করা দিনদিন কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর পানির চাহিদা মেটাতে ৮৬ ভাগ পানি ভূগর্ভ থেকে তোলা হচ্ছে। ২০১৭ সালে সংসদে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী রাজধানীতে দৈনিক বিশুদ্ধ পানির চাহিদা ২৩০-২৩৫ কোটি লিটার। এর মধ্যে ১৭০ কোটি লিটার পানি তোলা হয় ওয়াসার গভীর নলকূপ থেকে। ক্রমবর্ধমান এ নগরীতে সুপেয় পানির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমছে।

ঢাকার আশেপাশের নদীর পানি এতটাই দূষিত হয়ে পড়ছে যে, তা বিশুদ্ধ করে পুনরায় সরবরাহ করা ওয়াসার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে, মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ পানি ভূ-গর্ভ থেকে তোলায় পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বৃদ্ধি পেলে আগামীতে পানি আরো বেশি দূষিত হবে। নদীর দূষিত পানি ব্যবহারের অনপুযোগী হওয়ায় ঢাকার পানির প্রয়োজন মেটাতে নির্বিচারে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর ১০ ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে। বর্তমানে সাগরের চেয়ে ঢাকার পানির স্তর ১৭০ ফুট নিচে নেমে  গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ৫০ বছর পর যখন ঢাকার ফাঁকা ভূ-ভাগ নোনা পানিতে পূর্ণ হবে, তখন শুধু মিঠা পানির অভাবে এ শহর জনশূন্য হয়ে পড়বে। পরিবেশ সংগঠন পবার সামপ্রতিক এক জরিপে দেখা যায়, দূষণের কারণে ঢাকার প্রধান চারটি নদীর পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা শূন্যের কোঠায় চলে গেছে। নদী দূষণমুক্ত ও পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করা না হলে এবং বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে পানির অভাবে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।

স্বাভাবিক নিয়মে ভূ-গর্ভস্থ পানির যে স্তরটুকু খালি হয়, তা পরবর্তী সময়ে প্রাকৃতিকভাবেই পূরণ হয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু ঢাকাসহ আরো কিছু এলাকায় তা হচ্ছে না। ঢাকায় এ পানির সংকটের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী। প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য ২০ ভাগ বিশুদ্ধ পানি কমে যাচ্ছে। সরকার মারাত্মকভাবে নদী দূষণের কারণে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট দিয়ে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের চেষ্টা করলেও তা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়।

আবার ঢাকার অনেক এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ লাইনে ত্রুটির কারণে পরিশোধিত পানি বাসার কলে আসার সময় দূষিত হয়। ওই পানি সরাসরি পান করলে পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের সমস্যা হয় বলে ফুটিয়ে খেতে হয়। এ কারণে অনেকেই এখন ওয়াটার পিউরিফায়ার ব্যবহার করেন কিন্তু বাজারে যেসব পিউরিফায়ার বিক্রি হয় সেগুলো কতটা কার্যকর তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে গ্রাহকদের মধ্যেই। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের এক গবেষণায় ঢাকার ৯৭ শতাংশ জারের পানিতে ক্ষতিকর মাত্রায় মানুষ ও প্রাণির মলের জীবাণু ‘কলিফর্ম’ পাওয়া যায়। ওয়াসার লাইনে পানি সরাসরি জারে ভরে বিক্রি করার বহু ঘটনাই সামপ্রতিক সময়ে ধরা পড়েছে।

এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ পরিচালিত ওয়াটার  কোয়ালিটি টেস্টিং ল্যাবরেটরির এক গবেষণায় ঢাকার পানিতে ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও ম্যাঙ্গানিজ নামের একটি ভারি ধাতুর উপস্থিতিও পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভারি এ ধাতুটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। গবেষকরা বলছেন, মাটির নিচে পানির স্তরে ভারি ধাতুর উপস্থিতির কারণে তা পানের অযোগ্য হয়ে পড়ছে এতে করে ঢাকায় বসবাসকারী লোকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির হার অনেক বেড়েই চলছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status