মত-মতান্তর

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ করা হোক

নাজমুল হোসেন

২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

দেশে দিন দিন শিক্ষার হার বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে বেকারত্ব। চাকরির পেছনে হন্যে হয়ে ছুটে চলেছেন উচ্চ শিক্ষিত বেকাররা। পদ খালি থাকলেও বেকারের তুলনায় আনুপাতিক হারে নেই চাকরির বিজ্ঞপ্তি, নেই পর্যাপ্ত পদসংখ্যা। তার সঙ্গে মূল প্রতিবন্ধক হিসেবে যুক্ত হয়েছে চাকরিতে প্রবেশে বয়সের দেয়াল। সমপ্রতি বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করেছে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে দক্ষ মানবসম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে পুরোপুরি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিণত হতে হলে এবং এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চাকরিতে প্রবেশে বয়সের সীমাবদ্ধ প্রাচীর কতটুকু গ্রহণযোগ্য? এ দেশে চাকরির প্রজ্ঞাপনে আবেদনের ন্যূনতম বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত নির্ধারিত থাকলেও এই নিয়ম শুধু সাধারণ চাকরি প্রার্থীদের বেলায় প্রযোজ্য। অন্যান্য কোটাধারীরা এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে পাচ্ছেন বাড়তি সুবিধা। পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা ছাত্রছাত্রীই অনার্স আর ডিগ্রি কোর্সে বাড়তি ১ বছর করে বাড়ানোর কারণে তাদের পড়ালেখা শেষ করেছেন ২৭/২৮ বছরে। সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা না নেয়া, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, সেশন জট ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সমস্যা এর জন্য দায়ী। পদ খালি থাকলেও থাকেনা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, নিয়োগে দলীয় প্রভাব, নিয়োগ বাণিজ্য ইত্যাদি সমস্যাও রয়েছে। এ ছাড়া ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে শুধুমাত্র অবসরের বয়স দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই শূন্য পদের সংখ্যা কমে যায়। একেকটা উচ্চ শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে পড়ালেখা শেষ করে চাকরির আশায় মুখিয়ে থাকে। কিন্তু হাতে থাকা অবশিষ্ট সময় অর্থাৎ ২/৩ বছরে চাকরির জন্য বাড়তি পড়াশোনা করে নিজেকে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করতে করতে সময়টুকু শেষ হয়ে যায় এই বয়সের প্রাচীরের কারণে। তাহলে কি ১৭/১৮ বছরের অর্জিত মূল্যবান সনদের মেয়াদ ২/৩ বছরেই শেষ হয়ে যাবে? তাই এতসব বাস্তবিক কারণেই চাকরির আবেদনে বয়স বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে মাঠে নামেন লাখো শিক্ষার্থী।
২০১২ সালের ৩১শে জানুয়ারি বর্তমান প্রেসিডেন্ট স্পিকার থাকাবস্থায় জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশের উপর আলোচনার সময় সর্ব প্রথম এর পক্ষে ৭১ বিধিতে আলোচনা করেন। এরপর ধাপে ধাপে অসংখ্য এমপিরা নবম ও দশম জাতীয় সংসদে রেকর্ডসংখ্যক বার এ প্রস্তাব তুলেছেন। অন্যদিকে, সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা রাজপথে করেছে অহিংস আন্দোলন। তারা ঢাকাসহ দেশের সব জেলায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, মশাল মিছিল, অনশন, প্রতীকী ফাঁসি কর্মসূচিসহ সরকারের বিভিন্ন মহলে স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন। পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তাদের ২১তম বৈঠকে গত ২০১২ সালে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বছর করার সুপারিশ করে। ২০১৬ সালে ডিসি সম্মেলনে সব জেলার ডিসিরা ৩৩ বছরের সুপারিশ করেন। ৬ বছর পড়ে চলতি বছরের ২৭শে জুন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি দ্বিতীয়বারের মতো তাদের ২৯তম বৈঠকে ৩৫ বছর করার সুপারিশ করে। যথাসময়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ না নেয়ায় চলতি মাসের ১০ই সেপ্টেম্বর সর্বশেষ আবারো সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ৩৫ বছর করার জোর সুপারিশ করে এবং দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। কিন্তু তবুও আজ পর্যন্ত যে তরুণদের ভাগ্য খুলেনি! নেয়া হয়নি এর কোনো কার্যকরী উদ্যোগ। আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের সভাপতি মো. ইমতিয়াজ হোসেন ইতিমধ্যে শেষবারের মতো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছেন। পাশাপাশি সরকারের আরো বিভিন্ন উচ্চমহলে যোগাযোগ করাসহ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
সরকারের শেষ মেয়াদে এসে অবহেলায় পড়ে থাকা বিভিন্ন উদ্যোগ ও সিদ্ধান্তের কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কমবেশি সব শ্রেণির নাগরিকদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়া হয়েছে। শুধু এতটুকু পরিবর্তন আসেনি বিশ্বায়নের এই যুগে অবহেলায় ঝুলে থাকা এই বয়স বাড়ানোর বিষয়টিতে। চলতি মাসের ১১ই সেপ্টেম্বর সরকারি কর্ম কমিশন ৪০তম বিসিএস এর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। আগ্রহী প্রার্থীরা ৩০শে সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ১৫ই নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। অথচ আন্দোলনকারী তরুণরা এই বিসিএসে আবেদন করার আশায় এখনো তীর্থের কাকের মতো প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন কখন সিদ্ধান্ত আসবে তাদের দাবির পক্ষে। তরুণদের বর্তমান অবস্থাটা অনেকটা এরকম, তারা পরিবার ও সমাজের কাছে রীতিমত অবহেলিত ও অবজ্ঞার পাত্র। অনেকে তাদের এ-ও বলছেন, এমন কর্মহীন লেখাপড়া না করে ছোটবেলা থেকেই কোনো কাজকর্মে প্রবেশ করলে সেটাই ভালো হতো। তাই প্রশ্ন থাকে এমন দরিদ্র ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে কর্মহীন শিক্ষার মূল্য কতটুকু?
এই বয়সে তরুণদের সংসার করার কথা, বৃদ্ধ সন্তান-সন্ততি ও পিতা-মাতার দেখভাল করার কথা। অথচ তারা নিজেরাই নিজের খরচ চালাতে পারে না। এখনো তারা পিতা-মাতা নির্ভর। আবার অনেকের তো পিতা-মাতাও নেই। কেউ কেউ আবার পরিবারের বড় সন্তান। এহেন পরিস্থিতিতে তারা কোথায় যাবেন? এই উত্তর হয়তো কারো জানা নেই। বাস্তবতা এমন, এই সব তরুণদের অনেকেই আত্মগোপন করে থাকার চেষ্টা করেন। পরিচিত সমবয়সী বা বয়স্কদের সামনে পরলে যদি জানতে চাওয়া হয় কি করেন- সেই উত্তর দিতে পারবেন না বলে। এতে করে যে তাদের দিকে অযোগ্যতা ও মেধাহীনতার প্রশ্ন উঠে! এলাকার জুনিয়র চাকরিপ্রাপ্তদের সামনে পরলে লজ্জা ও নীরব আর্তনাদে ভেতরটা কেঁপে উঠে। ধরে রাখতে পারেননি বাঁধা না মানা অশ্রুধারা। কিন্তু তাদের এই বাস্তবতার বেড়াজাল সম্পর্কে কয়জন জানেন? কেউ কেউ বাধ্য হয়ে ভিটে-মাটি বিক্রি করে দালাল চক্রের মাধ্যমে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সমুদ্র পথে পাড়ি দিতে গিয়ে অকালে প্রাণ দিচ্ছেন। পড়েছেন নানান সমস্যায়।
অন্যদিকে, চাকরি না থাকায় দীর্ঘদিনের প্রেম সংক্রান্ত সম্পর্ক বিচ্ছেদের কারণে অনেকেই আত্মহত্যা করেছেন। কথায় আছে, অভাবেই স্বভাব নষ্ট। শিক্ষিত যুব সমাজ কর্মহীনতার যন্ত্রণা ও অভাবের তাড়নায় বিভিন্ন অপরাধ বা বেআইনি কর্ম যেমন মাদক ব্যবসা, মানব পাচার, ডাকাতি ও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে। এতে করে দেশ, সরকার এবং ওই সব স্ব-স্ব পরিবারও রীতিমত বিপাকে রয়েছেন।
আমরা দেখেছি প্রধানমন্ত্রী সরজমিন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের কান্না স্বচক্ষে দেখে তিনিও কেঁদেছেন। কিন্তু তিনি আজও নিজ দেশের শিক্ষিত যুব সমাজের ছাইচাপা কান্না দেখেননি, শুনেননি তাদের বুকফাটা আর্তনাদ। স্বচক্ষে দেখলে হয়তো বিশ্বনন্দিত ও খেতাবপ্রাপ্ত এমন মানবতার মাতা কখনোই চুপ করে থাকতে পারতেন না। বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, চাকরির বয়স বাড়ানোর জন্য এই সব তরুণদের যে ক্ষুধার তীব্রতা সেটা প্রধানমন্ত্রী ভালোভাবে জানেনই না। হয়তো তথ্য প্রদানকারীরা এই ক্ষেত্রে সেভাবে তথ্য প্রদান করেনি। যুব সমাজ বহুবার বিভিন্ন মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর একটু সাক্ষাৎ প্রার্থনা করেছে। বুঝাতে চেয়েছে তাদের দাবির যৌক্তিকতা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছের লোকেরা কোনো এক অজানা কারণে সেই সুযোগই সৃষ্টি করে দেয়নি। অন্যথায় অনেক আগেই এই দাবির একটা দফারফা হয়ে যেত।

শিক্ষিত যুব সমাজ যেকোনো দেশের সম্পদ। কিন্তু তাদেরকে তো উপযুক্ত সম্পদে পরিণত করতে হবে। দিতে হবে পর্যাপ্ত সুযোগ। তাদের প্রতি যেকোনো সরকারের কর্মমুখী, কল্যাণমুখী ও সন্তানতুল্য দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশের তরুণদের প্রতি সরকার ও নীতিনির্ধারকদের কি সেই চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে?
একটা মানুষের মেধা, প্রতিভা, যোগ্যতা আর দক্ষতার পরিচয় ২৭-৩০ বছরের মধ্যে কখনই প্রকাশ পায় না। কয়েক লাখ বেকার সেশন জটে আক্রান্ত হয়ে এই ২৭-২৮ বছরে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেছেন। তাছাড়া বিদ্যমান সেশন জটের মাত্রা কিছুটা কমলেও সামপ্রতিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজেও সেশন জট চলমান রয়েছে। তাছাড়া সরকারের বেঁধে দেয়া বয়সের এই সীমাবদ্ধতার নিয়মের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন প্রাইভেট সেক্টরও জনবল নিয়োগ দিচ্ছে না ফলে এ দিকে প্রবেশটাও সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। তাহলে দেশ কিভাবে বেকারমুক্ত হবে আর এই সব উচ্চ শিক্ষিতরাই কোথায় যাবেন? সরকারের নিশ্চয় অজানা নয় অসংখ্য মানুষ এ কারণে বিদেশে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফেরার নিশ্চয়তা পাচ্ছে না। কারণ বিদেশে একটা মাস্টার্স বা পিএইচডি ডিগ্রি নিতে গেলে দেশে ফিরে তাদের পক্ষে ওই বয়সসীমার মধ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ থাকে না। এসব অবিমৃশ্যকারী নিয়মনীতির কারণেই ক্রমবর্ধমান ব্রেন-ড্রেন ঠেকানো যাচ্ছে না।
বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিয়োগ বিধিতে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় তারা তাদের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবশক্তিতে রূপ দিতে চাকরির আবেদনে এত কম করে বয়সসীমা রাখেনি। চাকরিতে প্রবেশনারি ক্ষেত্রে তাদের ন্যূনতম বয়সসীমা ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫৯ বছর পর্যন্ত রয়েছে।
আমাদের তরুণরাও একটা সুযোগ চায় তাদের যোগ্যতা প্রমাণের। তারা আবেদন করবে, নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। মেধা থাকলে চাকরি পাবে নয়তো পাবে না। তাতে সমস্যাটা কোথায়? তাছাড়া বয়স বাড়ালে যে সবাই সম সুযোগ পাবে তাও কিন্তু নয়।
আরো একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, বিসিএস এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সব ক্যাডার নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে উচ্চ মর্যাদার এই সব পদগুলোতে একটা ম্যাচুউরিটি বা পরিপক্বতা থাকা দরকার। কারণ এই নিয়োগে যেসব পদে এই তরুণ-তরুণীরা প্রবেশ করেন তার চেয়েও তাদের অধীনস্থ বিদ্যমান নিম্ন পদের অনেক চাকরিজীবীই রয়েছেন যারা অনেক বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। অথচ পদমর্যাদা বিবেচনায় উল্টো তাদেরকেই সম্মান করতে হয় এবং শতভাগ ভুল হলেও তাদের নির্দেশও মানতে হয়। অন্যদিকে, তারা একেকটা বড় এলাকার দায়-দায়িত্ব নিয়েও থাকেন। ভুলে গেলে চলবে না এই পদধারীরাই একদিন পদোন্নতির শীর্ষে গিয়ে অদূর ভবিষ্যতে দেশের সর্বেসর্বা হিসেবে কাজ করবেন। তাই এই পদগুলোর ক্ষেত্রেও ৩০ থেকে ৩৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়স নির্ধারিত করা উচিত এবং একটা ন্যূনতম সময়সীমার অভিজ্ঞতা সংশ্লিষ্ট পদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা উচিত।
কোনো কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে কর্মে নিয়োগের সঠিক মাপকাঠি হওয়া উচিত মেধা, যোগ্যতা আর দক্ষতার ভিত্তিতে। বয়স কেন এই পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে? সার্বিক নীতিগত ও উন্নয়নমুখী দিক চিন্তা করলে চাকরির আবেদনে কোনো বয়সসীমা থাকাই উচিত নয়। তাহলেই কেবল প্রজাতন্ত্রের কাজে সঠিক যোগ্যতা সম্পন্ন, বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ও মেধাবীরা প্রবেশ করতে পারবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশ ও আমাদের পার্শ্ববর্তী এশিয়ার বহুদেশে রাষ্ট্রের উন্নয়নে ওই সব দেশের সরকার কর্তৃক তাদের গৃহীত বিভিন্ন ক্ষেত্রের আধুনিক চিন্তাধারা ও কার্যক্রমকে অনুসরণ করে দেশকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু চাকরির আবেদনে বয়সসীমা বৃদ্ধির এমন আলোচিত বিষয়টাকে ওই সব দেশের মতো করে কেন আজও তিনি ইতিবাচক দৃষ্টিতে নিচ্ছেন না? আমাদের সংবিধান স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রবেশে সকল নাগরিকের সুযোগের সমতা থাকবে। কিন্তু বাস্তবে আমরা এখানে অসাংবিধানিক। কারণ এদেশের নিয়োগ বিধিতে আবেদনের সুযোগে রয়েছে দ্বৈত নীতি। মুক্তিযোদ্ধার কোটা ছাড়াও সর্বোচ্চ সুবিধা পাচ্ছেন বিভাগীয় প্রার্থীরা ৪০ বছর, নার্স ৩৬ বছর, ডাক্তার, উপজাতি আর জুডিশিয়ালরা পাচ্ছেন ৩২ বছর করে।
ইতিহাস বলছে, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কোনো ছাত্র দাবি কেন্দ্রিক আন্দোলন এতদিন ধরে চলমান থাকেনি বা সরকার এভাবে ঝুলিয়ে রাখেনি। মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। অন্যদিকে যুবনীতি ২০১৭তে যুবাদের বয়স ১৮-৩৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে, কেন চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা এখনো ৩০-এ থমকে থাকবে? শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বাঁচলে জাতি বাঁচবে, দেশ বাঁচবে এই নীতি অনুসরণ করলে সরকারকে অবশ্যই সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। বাড়িয়ে দিতে হবে চাকরির আবেদনে বয়সসীমা বা একেবারেই তুলে দিতে হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-২০১৭ অনুসারে এ দেশে বর্তমানে প্রায় ২৭ লাখ বেকার রয়েছে। তাদের বেশিরভাগই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করা চাকরি প্রত্যাশী। এই সুযোগ অবারিত করে দিলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অসংখ্য কারিগরি পদসহ তিন লাখ ১০ হাজার ৫১১টি শূন্য পদ (জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য) সঠিক মেধাবীদের দ্বারা পূরণ হয়ে যেত।
তবে, সরকারের ক্ষমতার শেষ মেয়াদে এসে সরকার ও সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বয়স বাড়ানোর ব্যাপারে নড়েচড়ে বসেছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বয়স বাড়ানোর এই বিষয়টাকে নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলে দ্বিমত রয়েছে। সরকার কৌশলগতভাবেই বিষয়টাকে নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত করে আগামীতে ক্ষমতায় এসে সেটা বাস্তবায়নের কথা ভাবছে। কারণ দেশের ১০ কোটি ৪১ লাখ ভোটারের মধ্যে দুই কোটি ২৫ লাখ তরুণ রয়েছে। আর এটি তাদের দীর্ঘদিনের দাবি। ফলে এমন প্রতিশ্রুতিতে তরুণ ভোটাররা উদ্বুদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে বলে ভাবছে সরকার। যদিও অতীতেও এমন পরিকল্পনার কথা বললেও এখনো সেটার বাস্তবায়ন হয়নি। শীর্ষ মহলের কেউ কেউ বলছেন নির্বাচনের আগে তরুণদের এই দাবি মেনে নিলে ভোটের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আবার কেউ কেউ রয়েছেন এর বিপরীতমুখী অবস্থানে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এমন, এই সব তরুণ নির্বাচনের আগেই এর বাস্তবায়ন চায়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে দেখা যায়, অনেকেই বিভিন্ন পোস্ট বা মন্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তাদের দাবি মেনে নিলে তারা নিজেরাসহ পরিবার পরিজন ও আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে আওয়ামী লীগকেই বিপুল পরিমাণ ভোট দেবে। এ ক্ষেত্রে তরুণদের দখলে যে ভোট ব্যাংক রয়েছে সেটা স্বাভাবিকভাবেই দুই কোটি ২৫ লাখ থেকে বেড়ে অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই এ বিষয়ে খুব দ্রুতই সরকারের পজিটিভ সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবে বলে সরকার শুভাকাঙ্ক্ষীরা ধারণা করছেন।
সার্বিক দিকের উন্নয়নমুখী চিন্তাসহ শিক্ষিত তরুণদের কান্না থামাতে তাদেরকে কর্মে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। দিতে হবে দেশকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি। স্বপ্নের সমৃদ্ধশালী ও আধুনিক বাংলাদেশ নামে বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নিতে হলে এখনই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ন্যূনতম ৩৫ বছর বা তার বেশি করে দেয়াই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।

নাজমুল হোসেন
প্রকৌশলী ও লেখক
ই-মেইল-  [email protected]
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status