প্রথম পাতা

গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ অবরোধ, পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

গাজীপুরে পোশাক কারখানা শ্রমিকরা একটি কারখানায় পানি পান করে অসুস্থ হবার প্রতিবাদে, তাদের বকেয়া বেতন আদায় করতে ও শ্রমিক মারা যাবার গুজবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। অবরোধ চলাকালে বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেছে তারা। টায়ারে আগুন ধরিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে বিক্ষোভ মিছিল করে। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। মহাসড়ক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দুপুরে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে। এ সময় অন্তত ২০ জন আহত হয়। ততক্ষণে উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরের সালনা পর্যন্ত  মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। প্রায় ৫ ঘণ্টা পর দুপুর সোয়া দু’টার দিকে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। ঘটনার তাৎক্ষণিকতায় আশপাশের এলাকার প্রায় অর্ধশত কারখানা ছুটি দেয়া হয়। এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকায় দীর্ঘ যানজটে পড়ে যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে।

পুলিশ ও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ডেগেরচালা এলাকার নিট অ্যান্ড নিটেক্স লিমিটেড নামের পোশাক কারখানা শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতনের দাবিতে গত এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। এর মধ্যে শনিবার রাতে কারখানার পানি পান করে অন্তত ২০ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর প্রতিবাদে, শ্রমিক মারা যাবার খবরে এবং তাদের বকেয়া বেতনের দাবিতে সকাল থেকেই ওই কারখানার শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হয়ে এবং পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিক্ষোভ করে। সকাল ন’টার পর পর মালেকের বাড়ি ও ছয়দানা এলাকার আরো কয়েকটি কারখানা শ্রমিকরা মহাসড়কে নেমে আসে। সড়কের কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দখল নেয় শ্রমিকরা।

এরই মধ্যে ভোগড়া, চান্দনা, মোগরখালসহ আশপাশের এলাকার কারখানা শ্রমিকরাও লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে মিছিলে নেমে আসে। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে পুলিশ বার বার শ্রমিকদের শান্ত করে মহাসড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করলে কয়েক দফা দাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। উত্তেজিত শ্রমিকেরা সড়কের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ আরো জোরালো করে। এ সময় কয়েকটি বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কয়েকটি কারখানার কাচ ভাঙচুর করা হয়। প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে এমন তাণ্ডব চলতে থাকার পর ওই কারখানার পাশে মালেকের বাড়ি এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ একসঙ্গে জড়ো হয়ে টিয়ার শেল ছুড়ে ও লাঠিপেটা করে শ্রমিকদের সড়ক থেকে হটিয়ে দেয়। পরে দু’দিকে স্থবির হয়ে থাকা যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের বেতন না দিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ শনিবার রাতে কৌশলে তাদের কারখানার ট্যাংকের পানির সঙ্গে বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে দিয়েছে। ওই পানি খেয়ে অনেক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তাদের কয়েকজন শ্রমিক মারা যাওয়ার দাবিও করে। যদিও কোনো সূত্রই মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। এর মধ্যে পানি খেয়ে অসুস্থ কয়েকজনের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে কয়েকটি কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান নেয় এবং টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করতে থাকে। এ সময় নিটেক্স কারখানাসহ আশপাশের কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর চালানো হয়। স্থানীয়রা জানান, ওই কারখানা থেকে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার দূরে চান্দনা ও নলজানি এলাকার কয়েকটি কারখানায়ও ভাঙচুর চালানো হয়।

ভোগান্তিতে পড়া লোকজন জানান, প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকায় দীর্ঘ যানজটে পড়ে যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। অফিস আদালতগামী লোকজনের সঙ্গে ডিগ্রি পরীক্ষার্থীদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এর জেরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ছাড়িয়ে গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কের যাত্রীরাও ভোগান্তিতে পড়েন। দূর-দূরান্তের যাত্রীদের অনেকে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে ওই এলাকা পার হওয়ার চেষ্টা করেন।

নগরের গাছা থানার ওসি কাজী ইসমাইল হোসেন জানান, ঈদের আগে ওই কারখানায় আগস্ট মাসের অর্ধেক বেতন দেয়া হয়। বাকি টাকা ১২ই সেপ্টেম্বর দেয়ার কথা থাকলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ তা না দেয়ায় গত ক’দিন ধরে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে শনিবার বকেয়া বেতন পরিশোধের তারিখ নির্ধারণ করে কিছু শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু এর মধ্যেই শনিবার রাতে কারখানার পানি খেয়ে কয়েকজন শ্রমিকের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর আসে।

শ্রমিক মারা যাবার বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের এডিসি আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, পানি পানের ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টি গুজব। তবে বকেয়া বেতনকে কেন্দ্র করে সড়কে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তারা যথেষ্ট ধৈর্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দুপুরে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক করতে সচেষ্ট হয়েছেন। এছাড়া কারখানা কর্তৃপক্ষকে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করার বিষয়েও বলা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status