বাংলারজমিন
রাবি শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের মারধর জোরপূর্বক মাদক সেবনের স্বীকারোক্তি
রাবি প্রতিনিধি
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার, ৮:৩১ পূর্বাহ্ন
মাদক সেবনের অভিযোগ এনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে ওই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জোরপূর্বক মাদক সেবনের স্বীকারোক্তি নিয়ে ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে নির্যাতন করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে শনিবার রাতে এ ঘটনা জানাজানি হয়। ভুক্তভোগী আবদুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। মারধরের পর তার চোখের কোণে জখম হয়। পরে সেখানে সেলাই দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহিল গালিব, সহ-সম্পাদক আবদুল্লাহিল কাফি ও ছাত্রলীগ কর্মী শুভ্র দেব। হল সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাদার বখ্শ হলে পরীক্ষার সিটপত্র আনতে তার বিভাগের এক বড় ভাইয়ের কাছে যান আবদুর রহমান। সিট নিয়ে ফেরার সময় হলের গেটে আসলে কাফি, গালিব, শুভ্রসহ কয়েকজন আবদুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। আবদুর রহমান সিট আনতে এসেছিলো বলার পর তাকে চলে যেতে বলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর পেছন থেকে তার কোমরে লাথি দেয় তারা। পরে হলের অতিথি কক্ষে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তাকে হলের ওয়াশরুমে নিয়ে রড ও স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানো হয়। এ সময় আবদুর রহমানের কাছ থেকে গাঁজা সেবনের স্বীকারোক্তি নিয়ে ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে আবদুর রহমানকে রেখে চলে যায়। এরপর আবদুর রহমান তার বন্ধুদের জানালে তারা তাকে সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। ভুক্তভোগী আবদুর রহমান বলেন, ‘যতবারই আমি মাদক সেবন করিনি বলেছি ততবারই তারা আমার ওপর চড়াও হয়েছে। আমাকে স্ট্যাম্প ও রড দিয়ে আঘাত করে এবং আমার কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা কেড়ে নেয়। গাঁজা সেবনের বিষয়টি স্বীকার না করলে আমাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়। ভয়ে আমি বিষয়টি স্বীকার করি। পরে তারা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে রেখে চলে যায়।’ মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা গালিব বলেন, ‘হলের ছাদে মাদক সেবন চলছে, এমন তথ্যে আমরা সেখানে যাই। এ সময় হলের ছাদে ২০-২৫ জন মাদক সেবন করছিল। আমাদের দেখে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়। পালাতে গিয়ে আবদুর রহমান সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়। পরে তাকে অতিথি কক্ষে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকারোক্তি দিলে তাকে হল প্রাধ্যক্ষের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল এ নিয়ে যায়।’ এ বিষয়ে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, কয়েকজন বহিরাগত হলের ছাদে বসে মাদক সেবন করছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। তবে কাউকে মারধর করা হয়নি।’ জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল আলিম বলেন, ‘মারধরের বিষয়টি আমাকে জানানো হলে আমি আবদুর রহমানকে মেডিকেলে দেখতে যাই। যদিও সে আমার হলের শিক্ষার্থী নয়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’