এক্সক্লুসিভ

৫ থানায় আসামি ৫০০ সিলেটে মামলায় আক্রান্ত বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে

১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার, ৯:২৫ পূর্বাহ্ন

ঘটনা না ঘটিয়েই সিলেটে একের পর এক মামলার আসামি হচ্ছেন বিএনপির নেতারা। গত কয়েক দিনে সিলেটের পাঁচ থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করা হয়েছে। এ মামলাগুলোয় আসামি করা হয়েছে জ্ঞাত-অজ্ঞাত নামে প্রায় ৫০০ জনকে। আসামির তালিকায় বেশির ভাগই বিএনপির পদবিরা।

ঢাকায় টিআইবির অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া সিলেটের নেতারাও হয়েছেন আসামি। এসব মামলা নিয়ে বিরোধী শিবিরে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। তবে চারটি মামলার মধ্যে একটি ঘটনা দৃশ্যমান ছিল। সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীমের বাসায় হামলার ঘটনায় মামলা করা হয়। ওই মামলায় বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের ৬০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। সিলেট বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, চলমান আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে এসব মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পাঁচ থানায় যেসব মামলা করা হয়েছে সেসব মামলার ঘটনার কোনো সত্যতা নেই। কোতোয়ালি থানা, এয়ারপোর্ট থানা, জালালাবাদ থানা, শাহপরান থানা ও ও দক্ষিণ সুরমা থানায় এসব মামলা করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, রোববার বিকালে সিলেট নগরীর সুবহানীঘাটের মৌবন আবাসিক এলাকায় জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীমের বাসায় গোপন বৈঠক চলার সময় অভিযান চালানো হয়।

এ সময় ওই বাসা থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় সোমবার সিলেটের কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। এখন তারা মামলার আসামিদের খুঁজছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কাহির চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রব ফয়সল, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বক্ত চৌধুরী সাদেক, জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার হওয়া জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এখলাছুর রহমান মুন্নাকে। এছাড়া জেলা বিএনপির সদস্য চৌধুরী মো. সুহেল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফ ইকবাল নেহাল, জাকির হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন পারভেজ, সিনিয়র সহসভাপতি তোফায়েল আহমদ, সহসভাপতি গোলাম আহমদ সেলিম চৌধুরী, জুবের আহমদ জুবের, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সুদীপ জ্যোতি এষ, সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি আহসান, সহসভাপতি এনামুল হক, রাইসুল ইসলাম সনি, জেলা ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক ফয়জুর রহমান, ছদরুল ইসলাম লোকমান, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন রাজিব, আনোয়ার হোসেন রাজু, হোসাইন আহমদ, তাজুল ইসলাম সাজু, আবু কাহের রাশেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মুক্তাবির সাকি, সহসাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুর রহমান রাশেদ, মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি কবির আহমদ উজ্জ্বল, আব্দুল করিম জোনাক, যুগ্ম সম্পাদক ফাহিম রহমান মৌসুম, সামছুদ্দিন শামসুল, সুহেব আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল আলম সৌরভ, সহসাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমদ, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজ ভূঁইয়া পলাশ, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক স্বপন, সাবেক সহসভাপতি ময়মুল ইসলাম, সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক বোরহান আহমদ রাহেল, জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম মকসুদ আহমদ, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আফছর খান, মাসুক আহমদ, মহানগর যুবদল নেতা শাকিল মুর্শেদ, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাবিল রাজা চৌধুরী। এছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- গোলাপগঞ্জের ফাহিম আহমদ চৌধুরী, ফয়সল ইসলাম, বিয়ানীবাজারের কাউসার আহমদ ওরফে রিমন আহমদ, গোলাপগঞ্জের খালেদ আহমদ, ফাহিম আহমদ ওরফে টিপু আহমদ, সোবহানীঘাট মৌবন এলাকার ফরিদ আলী, গোলাপগঞ্জের তানভির আহমদ, আম্বরখানা এলাকার তানভীর আহমদ চৌধুরী, বিশ্বনাথের তানিমুল ইসলাম ও মহানগর বিএনপির সমর্থক মনিন্দ্র রঞ্জন দে। কোতোয়ালি থানার ওসি মোশারফ হোসেন জানিয়েছেন- পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় এ মামলা করা হয়েছে। যারা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল তাদের এ মামলার আসামি করা হয়েছে।

এদিকে কোতোয়ালি থানায় করা মামলার আসামি কয়েকজন বিএনপি নেতা ঘটনার দিন ঢাকায় ছিলেন। মামলার পর তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টিআইবির প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকা কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। রোববার রাতে সিলেটের এয়ারপোর্ট থানায় বিএনপি নেতা হুমায়ূন ইসলাম মাসুককে প্রধান আসামি করে আরেকটি মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় আসামি শতাধিক। এয়ারপোর্ট থানার ওসি গৌছুল হোসেন জানিয়েছেন- নাশকতার অভিযোগে তাদের ওপর এ মামলা করা হয়।

পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। শাহপরান থানায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজিম উদ্দিন লস্করসহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করা হয় রোববার রাতে। এ মামলায় বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল সহ অঙ্গ-সংগঠনের নেতারাও আসামি। এছাড়া ওই রাতে দক্ষিণ সুরমা থানায় বিএনপি নেতা আবুল কালামসহ ৫০-৬০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এদিকে- ১৫ই সেপ্টেম্বর জালালাবাদ থানার এসআই পরিমল চন্দ্র দাশ ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সৈয়দ আব্দুল হাদী মাসুম, সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন মুক্তার, সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আফসর খান। এছাড়া মামলায় আসামি করা হয়েছে- সিরাজ খান, আজিজ খান, ওসমান গনি, রাসেল আহমদ খান ও সেলিম আহমদকে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় ১৫ই সেপ্টেম্বর কালীবাড়ী রোডে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সৈয়দ আব্দুল হাদী মাসুম গতকাল জানিয়েছেন, তিনি মাত্র দুই দিন আগে পবিত্র হজ পালন করে সিলেটে ফিরেন।

ওই ওয়ার্ডে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা হয়নি। পুলিশ যে ঘটনার বিবরণ দিচ্ছে তা ডাহা মিথ্যা। ঘটনা ঘটলে মামলা দিলে কোনো আপত্তি নেই। অথচ ঘটনা না ঘটিয়ে মামলার আসামি হওয়া প্রমাণ করে এ দেশে আইনের শাসন বলতে কিছুই নেই। হজ থেকে আসা ব্যক্তিরাও তাদের রোষানল থেকে রেহাই পাচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি। এদিকে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন জানিয়েছেন- যে ৫টি মামলা হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। ঘটনাই ঘটেনি। গায়েবি মামলায় আমাদের আসামি করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status