এক্সক্লুসিভ

গাজীপুরে মাদরাসা পরিচালকের স্ত্রী ও ছাত্র খুন

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে

১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন

গাজীপুরের চান্দনা এলাকায় হুফফাজুল কুরআন মাদরাসার পরিচালকের স্ত্রী ও এক শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এরা হলেন- হুফ্‌ফাজুল কুরআন মাদরাসার পরিচালক ও শিক্ষক ইব্রাহীম খলিল তালুকদারের স্ত্রী ওই মাদরাসার সাবেক শিক্ষক মাহমুদা আক্তার স্মৃতি ও ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী  মামুন। তাদের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানায়। খবর পেয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, সিআইডি, পিআইবি ও থানা পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মাদরাসা পরিচালক ইব্রাহীম খলিল তালুকদারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

মাদরাসা পরিচালক ইব্রাহীম খলিল তালুকদার জানান, মঙ্গলবার ভোরে ফজর নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে মাদরাসার সব ছাত্রকে নিয়ে পাশের একটি মসজিদে নামাজ পড়তে যান তিনি। নামাজ শেষে মাদরাসায় ফিরে দেখেন, কে বা কারা মাদরাাসায় প্রবেশ করে পরিচালকের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার স্মৃতি (২১) ও নুরানী ক্লাসের এক ছাত্র মামুন (৭)কে গলা কেটে ও কুপিয়ে খুন করে পালিয়ে যায়। পরিচালক ইব্রাহীম পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, ভোরে স্ত্রী এবং দুই সন্তান হুযায়ফা (৫) ও আবু হুরায়রাকে (৩) ঘরে রেখে তিনি পাশের মসজিদে ফজরের নামাজ পড়তে যান। তার দাবি, তার আগের স্ত্রীর পরিবারের লোকজন এ খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। প্রায় দুই বছর ধরে মাদরাসাটি পরিচালনার পাশাপাশি ছাত্রদের কোরআন পড়িয়ে আসছিলেন ইব্রাহীম। ওই মাদরাাসারই একটি কক্ষে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি থাকেন।  নিহত মামুনের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রসুলপুরে। ছুটি কাটিয়ে দুদিন আগে তিনি মাদরাসায় আসেন। দুই বছর আগে চান্দনা এলাকার একটি ভাড়া করা টিনসেড বিল্ডিংয়ে প্রতিষ্ঠিত ওই মাদরাসায় জোড়া খুনের খবর পেয়ে বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়। নিহতের আত্মীয়স্বজনরা মাদরাসায় এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারিতে এলাকায় শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মাদরাসায় অধ্যয়নরত অন্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবকসহ স্বজনরা এসে তাদের শিশু-কিশোরদের খোঁজ নিয়ে তাদের মাদরাসা থেকে নিয়ে যেতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। শিক্ষার্থী সবার চোখে মুখেও আতঙ্ক ছড়িয়ে যায়। জোড়া খুনের ঘটনার খবর পেয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ওয়াই এম. বেলালুর রহমান, ডিসি (ক্রাইম) শফিকুর রহমান, গাজীপুর সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার সুলতান মাহমুদ, বাসন থানা পুলিশের ওসি মুক্তার হোসেন ঘটনাস্থলে যান। ঘটনাস্থল নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঘিরে রাখা হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি ধারালো দা, ধার দেয়ার কাজে ব্যবহৃত একটি কাঠের খণ্ড, বিছানার চাদর, বটি, ভেজা লুঙ্গি ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকার বাসন থানার ওসি মুক্তার হোসেন জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের একটি দল। সিআইডির দলটি হত্যার আলামত সংগ্রহ ও মাদরাসা পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির পর নিজ বিছানা থেকে মাহমুদা আক্তার স্মৃতির মরদেহ ও মাহমুদার রুমের সামনের দরজার পাশের ফ্লোর থেকে মামুনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মাদরাসায় থাকা হেফজখানার ১২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১ জন শিক্ষার্থী মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিল। একমাত্র মামুন শারীরিক অসুস্থ থাকায় মাদরাসায় শুয়ে ছিল। ধরণা করা হচ্ছে, ওই নারীকে হত্যার সময় মামুন দেখে ফেলায় তাকেও হত্যা করা হয়েছে। জিএমপি কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তাৎক্ষণিকভাবে জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কারণ জানা যায়নি উল্লেখ করে বলেন, আমরা আশা করছি অচিরেই এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য জানা যাবে এবং অপরাধীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হবো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status