দেশ বিদেশ

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হতাশা থেকে উৎসারিত: মোশাররফ

স্টাফ রিপোর্টার

১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার, ৯:৫০ পূর্বাহ্ন

বিএনপি মহাসচিবের জাতিসংঘে যাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে হতাশা থেকে উৎসারিত বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের মহাসচিব জাতিসংঘে গিয়েছেন, আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টে গিয়েছেন। নিশ্চয়ই এটা প্রধানমন্ত্রীকে কোনো না কোনোভাবে আঘাত করেছে বা তার হতাশা কিংবা উৎকণ্ঠার কারণ হয়েছে। সেজন্য বোধহয় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এসব কথা বলেছেন। গতকাল সকালে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। উল্লেখ্য, শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরা (বিএনপি) মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বিএনপির মিথ্যাচার, ভাওতাবাজি ও নাটক। জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গে ড. মোশাররফ বলেন, আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছি। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করার জন্য আমাদের নেত্রী গত মে মাসেই বলেছেন- নির্বাচনকালীন সরকার লাগবে, সংসদ ভাঙতে হবে, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ হতে হবে, নির্বাচনের সময়ে সামরিক বাহিনী দায়িত্বে থাকতে হবে। আমরাও এটিই বলছি। তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত আশাবাদী যে, বিএনপি ও ২০ দলের বাইরেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তি একই দাবি করছে। আমাদের বিশ্বাস আমরা যে দাবিটা করে আসছি এটা এখন জাতীয় দাবি, জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। জামায়াত ছাড়া বিএনপিকে জাতীয় ঐক্য করতে হবে- যুক্তফ্রন্টের এমন দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের কথা আমরা এখনো শুনিনি। আর যুক্তফ্রন্ট শনিবার যে ৫ দফা দিয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমরা এখনো আলোচনা করিনি। দলীয় ফোরামে আলোচনার পর এ নিয়ে মন্তব্য করব। ড. মোশাররফ বলেন, দেশের জনগণ চায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোরও একই কথা- আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। আর দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, বিএনপি ও ২০ দল যদি অংশগ্রহণ না করে তাহলে সেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। সেটার প্রমাণ ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি। বিএনপির সিনিয়র এ নীতিনির্ধারক বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে দেশনেত্রীকে মুক্ত করে যে নির্বাচনে যেতে পারবো সেটাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। আমরা মনে করি, আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে মুক্ত বেগম জিয়াকে নিয়েই আমরা একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যাব। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ‘দলীয় মনোভাবাপন্ন’ না হয়ে ‘নিরপেক্ষভাবে’ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান প্রবীণ এ রাজনীতিক। তিনি বলেন, আপনারা ব্যক্তি কিংবা দলকে ক্ষমতায় রাখার জন্য ব্যবহৃত হবেন না। আপনারা এদেশেরই মানুষ। এই দেশের জনগণই আপনাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব। তারা আপনাদের কাছ থেকে নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রত্যাশা করে।
সরকারের চোখে বিএনপির মৃতরাও নাশকতাকারী:
ড. মোশাররফ বলেন, আমাদের সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী গত ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আজগুবি ও বায়বীয় অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে প্রায় দুই হাজার। আসামির তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে ২০ হাজার নেতাকর্মীর নাম। সেই সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে লক্ষাধিক নেতাকর্মীকে। এই সময়ে প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হাজার হাজার নেতাকর্মীর বাড়িতে পোশাকে কিংবা সাদা পোশাকে হানা দিচ্ছে পুলিশ। এ থেকে সিনিয়র নেতারাও বাদ যাচ্ছেন না। তিনি বলেন, সরকার প্রতিহিংসাবশত বিএনপির মৃত ও দেশের বাইরে অবস্থানকারী নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা দিয়েছে। পুলিশও না কি তাদের নাশকতা ও গোপন বৈঠক করতে দেখেছে। মূলত নির্বাচন থেকে বাইরে রাখতেই সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এসব মামলা দিয়েছে। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশকে মারধর করার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। কিন্তু মামলার এজাহারে এসব কারণ দেখিয়ে মৃত ব্যক্তি, প্যারালাইজড বৃদ্ধ, হজ-চিকিৎসা ও চাকরির কারণে বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়েছে।
এই ধরনের অভিযোগে গত কয়দিনে পল্টন, খিলগাঁও, মতিঝিল থানায় দায়েরকৃত মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য কিডনি রোগ ও ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী নেতা তরিকুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। অসুস্থতার কারণে গত প্রায় এক বছর ধরে তিনি স্থায়ী কমিটির কোনো সভায়ও অংশগ্রহণ করতে পারেননি। সেই সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল হক, খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি সানাউল্লাহ মিয়াসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বহু নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। দেশনেত্রীর আইনজীবী প্রবীণ আইনজ্ঞ সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খানকেও আসামি করা হয়েছে। আজগুবি মামলায় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রফেসর তাজমেরী এস ইসলাম, তৈমুর আলম খন্দকার, আনহ আখতার হোসেন, হেলালুজ্জামান তালুকদার, কেন্দ্রীয় নেতা প্রফেসর মোরশেদ হাসান খান, অনিন্দ্য ইসলাম, জন গোমেজ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, কাজী মনিরুজ্জামানসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। ড. মোশাররফ বলেন, সরকার পুনরায় একদলীয় সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার চক্রান্ত করছে। জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ ও আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার ফলে সরকারের সমর্থন যখন তলানীতে তখন তারা অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে জনগণকে আবারো ভোটের অধিকার তথা পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা থেকে বঞ্চিত করতে চায়। কিন্তু এবার আর তাদেরকে সেই সুযোগ দেয়া হবে না। সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status