বাংলারজমিন

মধুমতির ভয়াল থাবা

মাহামুদুন নবী, মহম্মদপুর (মাগুরা) থেকে

১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শনিবার, ৯:০২ পূর্বাহ্ন

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে মধুমতি নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় মধুমতি নদীর ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফলে মহম্মদপুর উপজেলার মানচিত্র থেকে ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছে কাশীপুর, রায়পুর, রুইজানি, হরেককৃষ্ণপুর, দেউলি, ঝামা ও ভোলানাথপুর গ্রাম। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ২১টি পরিবারে অর্ধশতাধিক ঘর-বাড়ি ও মসজিদ। ভাঙনের মুখে রয়েছে শতাধিক পরিবার, কাশিপুর গোরস্তান, কাশিপুর পূজা মন্দির, ভোলানাথপুরের ২টি পূজা মন্দির, অসংখ্য দোকান-পাটসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে মধুমতি নদীর অব্যাহত ভাঙনে বদলে যাচ্ছে মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার মানচিত্র। এ পর্যন্তু উপজেলার ৭টি গ্রামের ৮-৯ কিমি এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
গত শনিবার থেকে মধুমতি নদীর ভাঙনে নতুন নতুন বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে ভাঙন ভয়াল আকার ধারণ করায় নদী তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। উপজেলার কাশিপুর, ভোলানাথপুর, রায়পুর হরেকৃষ্ণপুর, দেউলি, ঝামা ও রুইজানি নদী তীরবর্তী এলাকার ভাঙনকবলিত অধিবাসীদের এখন দিন কাটছে চরম আতঙ্কে। এসব গ্রামের মসজিদ, মন্দির, গোরস্তান, ঈদগাসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি এ বছর বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে।
এ ব্যাপারে হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা ওহিদ বলেন, নদী ভাঙনে আমার বসতভিটাসহ সম্পূর্ণ জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন ভূমিহীন অবস্থায় অন্যের জমিতে বসবাস করছি।
কাশিপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. তিলাম হোসেন বলেন, নদী ভাঙনের ফলে আমরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। এ গ্রামের অসংখ্য ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি ও গাছপালা প্রতিনিয়ত নদীতে বিলীন হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে বারবার অবহিত করা হলেও এ পর্যন্ত কেউ অসহায় মানুষের খোঁজ নিতে আসেনি। নদী ভাঙন রোধে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি প্রত্যাশা করছি।
গতকাল দুপুরে সরজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সর্বস্ব হারানো অসহায় নারী-পুরুষের আহাজারি। এ সময় কেউ কেউ ভাঙনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাদের ঘর-বাড়ি, গাছপালা সরিয়ে নিচ্ছে। গত সাত দিনে মধুমতি নদীর ভয়াবহ ভাঙনে কাশীপুর গ্রামের পুলিশ কনেস্টবল রোকন উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, পান্নু বিশ্বাস, বাচ্চু মোল্যা, মাজেদ মোলা, ওহাব মিয়া, আবু মিয়া, সাবু মিয়া, মাজেদ মেম্বার, হাসেম মোল্লা, মতিয়ার মিয়া, ভোলানাথপুর গ্রামের ২টি পূজা মন্দিরসহ খিতিশ চৌধুরী ও মনিমোহন চৌধুরীর বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেছে। ভাঙনের সম্মুখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন ভাঙন কবলিত সাত গ্রামের মধ্যে ইমদাদুল, আতিয়ার, জিবলু, আক্কাস, মাহফুজার, হান্নান, আলি, জয়নাল মুন্সি, শহিদুল, মোক্তার মিয়া, জয়েন উদ্দিন, মোসলেম, হারান, বারিক মোল্লা, হানিফ মোলা, অলিয়ার, নওশের, মান্নান, নজির, মন্নু, নান্নু, জাফর, সাদেক মোল্লা, মোসলেম, মিজানুর, আলম,ওহাব, আয়েন উদ্দিন, জয়েন উদ্দিন, আক্কাস মোলা, আনোয়ারুল হক, সবুর মিয়া, হানিফ মোল্যা, অলিয়ার, বাকী, রোকন উদ্দিন, চুন্নু মোল্যাসহ শতাধিক পরিবারের অসংখ্য ঘরবাড়ি।
অন্যদিকে গোপালনগর থেকে পাল্লা পর্যন্ত প্রায় ৫ কিমি ও ঝামা এলাকায় নদীর মাঝ বরাবর জেঁগে উঠেছে বিশাল চর। চরের কারণে স্রোতপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে প্রবল বেগে নদী তীরে ঢেউ আঁচড়ে পড়ায় নদীর ভাঙন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো ক্রমেই ভাঙনের থাবায় নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে নদী পাড়েই ছাপরা দিয়ে মানবেতর জীবন-যাবন করছেন কয়েকটি পরিবার। কেউ তাদের খোঁজখবর না নেয়ায় নদী তীরবর্তী মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
এ ব্যাপারে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান বলেন, খবর পেয়েছি, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status