এক্সক্লুসিভ

শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব ভিসিদের

স্টাফ রিপোর্টার

১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন

শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করার মত দিয়েছেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা। পাশাপাশি শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করারও সুপারিশ করেন তারা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আয়োজনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক এক কর্মশালায় এসব মত দেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিশেষ অতিথি ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানসহ ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কর্মশালায় ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা উপস্থিত ছিলেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আপগ্রেডেশন বিষয়ে কোনো তারতম্য রাখা যাবে না। যোগ্যতা ভিত্তিতে তাদের গ্রেড বা পদমর্যাদা দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বেতন-ভাতা বাড়াতে দাবি করছি না, আমাদের সম্মানের স্থানটি নিশ্চিত করতে হবে। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ২০২০ সাল থেকে অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ-পদোন্নতি কার্যকর করার আহ্বান জানান তিনি। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, অভিন্ন নীতিমালায় বাস্তবায়ন করতে হলে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য শিক্ষক নির্বাচন করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে প্রার্থীকে ক্লাস নেয়ার দক্ষতার বিষয়েও পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। যে শিক্ষকরা পাঠ্যপুস্তক লিখেন ও গবেষণা কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর আব্দুস সোবহান বলেন, অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালা বাস্তবায়ন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে জিপিএ-৯ করা প্রয়োজন। তবেই ভালো শিক্ষক পাওয়া যাবে। তবে নিয়োগের ক্ষেত্রে এসএসসি-এইচএসসি সার্টিফিকেট মূল্যায়ণ না করে অনার্স-মাস্টার্স সার্টিফিকেট মূল্যায়ণ করার পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বছরে অধ্যাপক হয়ে গেছেন, অনেকে আবার একটি প্রকাশনা দিয়ে বারবার পদোন্নতি পেয়েছেন এমন ঘটনাও রয়েছে। তাই শিক্ষকদের কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে হলে দ্রুত অভিন্ন নীতিমালা বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন অর রশীদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এন্ট্রি ল্যাভেলে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতার বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে। নতুবা এটি নিয়ে নতুন দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি অভিন্ন নীতিমালায় শিক্ষকদের প্রকাশনার বিষয়টি অস্পষ্ট রয়েছে, সেটি সংশোধন করতে হবে। ভালো মানের শিক্ষকদের গবেষণা ও তার পাঠদানের উপর ইনসেনটিভ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মোনায়েম বলেন, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মাস্টার্স সমমান পাঁচ বছরের কোর্স সম্পূর্ণ করার কথা বলা হলেও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে ৫ থেকে ৬ বছর মেয়াদে মাস্টার্স কোর্স করা হয়। তাই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টি সংশোধন করার দাবি জানান এই ভিসি। বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় অব বাংলাদেশের ভিসি অধ্যাপক মোনাজ আহমেদ নূর বলেন, শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা মাস্টার্স সমমান করা হলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতায় না এসে বিদেশে চলে যাবে। এ কারণে সেটি অনার্স পাস করা প্রয়োজন। পাশাপাশি ইংলিশ মিডিয়াম থেকে ‘এ’ এবং ‘ও’ লেভেল করা শিক্ষার্থীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কি হবে তা অভিন্ন নীতিমালায় উল্লেখ করার সুপারিশ জানান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা হক বলেন, বিজ্ঞান ও মানবিক সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় হলেও নিয়োগের ক্ষেত্রে জিপিএ-৩ দশমিক ৫ চাওয়া হয়েছে। এটি সংশোধনের আহ্বান জানিয়ে তিনি যোগ্য শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষা পদ্ধতি চালুর দাবি জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. ইসমাইল খান বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স সমমান কোর্স শেষ করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। তাই মেডিকেলে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন।
অন্যদিকে, উপস্থিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের কেউ কেউ আবার অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালার সমালোচনাও করেছেন। তারা বলেন, এটি বাস্তবায়ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত চিন্তার স্থানটি হারিয়ে যাবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হবে। জেলাপর্যায়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে জটিলতা সৃষ্টি হবে। অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালার কারণে উচ্চশিক্ষা একটি স্থানে আবদ্ধ হয়ে পরবে। যেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি অভিন্ন পদ্ধতিতে করা সম্ভব হয়নি, সেখানে অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ বাস্তবায়নে নতুন সমস্যা সৃষ্টি হবে বলে তারা মন্তব্য করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক এসএম মাকসুদ কামাল বলেন, ফেডারেশনের সিদ্ধান্তে অভিন্ন নীতিমালা তৈরি করার কথা থাকলেও ইউজিসি থেকে তা ইচ্ছামত পরিবর্তন করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে কিছু বিষয়ে সংশোধন জরুরি। শিক্ষকদের গ্রেডেশনের বিষয়ে সংশোধন আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষকদের গ্রেড দিতে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি অভিন্ন নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষকদের মর্যাদা অনুযায়ী ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালা তৈরির আহ্বান জানান এই শিক্ষক নেতা। ইউজিসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবি ও যোগ্য প্রার্থীদের বাতিল করে কর্তৃপক্ষের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করা হচ্ছে। এসব কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন নীতিমালা করতে চাই। দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে উচ্চ পর্যায়ে নিতেই আমরা এমন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিদের বাস্তবমুখী পরামর্শগুলোকে আমলে নিয়ে তা বিবেচনা করা হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষক নিয়োগে নানামুখী জটিলতা কাটিয়ে একটি সুষ্ঠু নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন নিয়োগ-পদোন্নতি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষকদের পরামর্শগুলোকে বিচার বিশ্লেষণ করে তারপর এটি কার্যকর করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status