দেশ বিদেশ

৩ কারণে কামরানকেও চিঠি

সিলেট আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে ‘শোকজ’

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে ‘বিতর্কিত’ ভূমিকার জন্য কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সহ তিন নেতাকে কেন্দ্র থেকে শোকজ করা হয়েছে।  শোকজপ্রাপ্ত অপর দুইজন হলেন- সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। একই সঙ্গে সিটি করপোরেশনে পরাজিত প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকেও একটি পত্র পাঠানো হয়েছে। ওই পত্রে তার কাছে দলের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে কুরিয়ার সার্ভিসযোগে শোকজপত্র পাঠানো হলেও গতকাল বিকাল পর্যন্ত সিলেটের নেতাদের হাতে এসে তা পৌঁছায়নি। এদিকে শোকজের ঘটনায় সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। গত ৩০শে জুলাই সিলেট সফর করেছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সহ সিনিয়র নেতারা। ওই দিন সিলেট সার্কিট হাউসে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সিলেটের সিনিয়র নেতারা বিতর্কিত ভূমিকা রাখার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের রোষানলে পড়েন। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, সিলেটে যে তিন নেতাকে শোকজ করা হয়েছে তাদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জবাব দিতে বলা হয়েছে। এরপর দলীয় সর্বোচ্চ ফোরাম বসে তাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে প্রাথমিক অনুসন্ধানে আওয়ামী লীগের তদন্ত কমিটি তিন নেতার বিতর্কিত ভূমিকার ব্যাপারে সত্যতা পেয়েছেন। এ কারণে তাদের শোকজ করা হয়েছে। বিগত সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট পান ৮৬ হাজার ৩৯২ আর বিএনপির মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ৯২ হাজার ৫৮৮ ভোট। ওই নির্বাচনে সিলেটের ইতিহাসের রেকর্ড ভঙ্গ করে সেন্টার দখল, জালভোট, টেবিলকাস্ট, সংঘর্ষ সহ নানা ঘটনা ঘটে। এতসবের পরও  নৌকার প্রার্থী কামরান তার জয় ঘরে তুলতে পারেনি। অভিযোগ উঠে বুকে নৌকার স্টিকার লাগিয়ে ধানের শীষে ভোট দেয়া হয়েছে। আর যারা কেন্দ্র দখল করে জালভোট দিয়েছে তারা নৌকার পরিবর্তে ধানের শীষে ভোট দেয়। এ কারণে কামরানের পরাজয় ঘটেছে। এসব বিষয় কামরান দলীয় প্রধানের কাছে জানিয়েও আসেন। আর নির্বাচনের পর দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব ও অবিশ্বাস চরম আকার ধারণ করে। দোষারোপের রাজনীতিকে ঘিরে অস্থিরতা দেখা দেয় সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। এ কারণে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র নেতারা এতে হস্তক্ষেপ করলেন। আর এই হস্তক্ষেপের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে তিন নেতাকে শোকজ করা হয়েছে।  শোকজপ্রাপ্ত নেতা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের বাড়ি সিলেটে। তিনি প্রায় ১০ বছর আগে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে তাকে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলে তাকে ফের সাংগঠনিক সম্পাদক করা হলেও সিলেটের দায়িত্ব না দিয়ে তাকে ময়মনসিংহ বিভাগ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক নেতা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। আর ময়মনসিংহের সাংগঠনিক নেতা আহমদ হোসেনের হাতে সিলেটের দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব বিভক্ত হলেও সিলেট আওয়ামী লীগে বেশির ভাগ প্রভাব খাটান অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তার একটি বলয়ও রয়েছে। বিগত সিটি নির্বাচনে অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের কয়েকজন ঘনিষ্ঠজন কাউন্সিলর প্রার্থী জয়লাভ করলেও ওই সব এলাকায় নৌকার প্রার্থী কামরানের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। এ কারণে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বিতর্কিত হন বেশি। আর এই বিতর্কের রেশ ধরেই তাকে কেন্দ্র থেকে শোকজ করা হয়েছে।  শোকজপ্রাপ্ত আরেক নেতা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ছিলেন গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় ফোরামে শক্তিশালী মেয়রপ্রার্থী। পরবর্তীতে তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর তাকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব করা হয়। ফলে নির্বাচন পরিচালনার সিংহভাগ দায়িত্ব ছিল আসাদের হাতে। বিভিন্ন কেন্দ্রে নৌকার স্টিকার বেহাত হওয়ার অভিযোগ উঠে আসাদের ওপর। আর এটি পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয় দলের ভেতর থেকে। পাশাপাশি আসাদের নিজের ওয়ার্ডের সেন্টারেও গোলযোগ হয়েছে। এসব নানা কারণে অভিযোগের তীর ছিল তার ওপর। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রও তাকে শোকজ করেছে। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলও শোকজের মুখে পড়েছেন। তার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে দুটি কেন্দ্রে ইভিএম ভোট হয়েছে সেই দুই কেন্দ্র হচ্ছে নাদেলের এলাকা। এই দুটি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীর শোচনীয় পরাজয় হয়। এর বাইরে তার বলয়ের ছাত্রলীগের নেতাদের ভূমিকা ছিল বিতর্কিত। এ কারণে নাদেলও পড়েছেন শোকজের মুখে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেটে নৌকার প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক শফিকুর রহমান চৌধুরী গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, এখনো সিলেট আওয়ামী লীগের শোকজপ্রাপ্ত নেতাদের হাতে এসে কাগজপত্র পৌঁছেনি। পত্র আসার পর সেটি পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। যারা শোকজপ্রাপ্ত হয়েছেন তারা সিলেট আওয়ামী পরিবারের। ভুল-ত্রুটি শুধরে সবাইকে নিয়ে সামনে চলতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজিত আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও মহানগর সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে কেন্দ্র থেকে পত্র দেয়া হয়েছে। সেই পত্রও গতকাল বিকাল পর্যন্ত তার কাছে এসে পৌঁছায়নি। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, তিনটি বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে কামরানকে পত্র দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন মহানগর কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও বদরউদ্দিন আহমদ কামরান নগরীর সবক’টি ওয়ার্ড কমিটি গঠনে ব্যর্থ হওয়া এবং নির্বাচনে সাতটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিতে না পারা, সিলেট মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে না পারা ও সিলেট মহানগরে আওয়ামী লীগের কার্যালয় না থাকার কারণে কামরানের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status