বাংলারজমিন
রংপুরে বৃহত্তর স্বার্থে তিস্তার বাঁধ রক্ষায় আশ্রিতদের সরে যাওয়ার নোটিশ
‘হামাক বাঁচান বাহে অ্যালা হামরা কোটে যামো’
জাভেদ ইকবাল, রংপুর থেকে
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ন
‘হামাক বাঁচান বাহে, অ্যালা হামরা কোটে যামো’- এমন আর্তনাদ করে বলেন, বাঁধে আশ্রিত ভূমিহীন মনোয়ারা বেওয়া। তিনি বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে এ বাঁধে ৬ সন্তান, নাতি-পুতি নিয়ে বসবাস করছেন। এখন তাদেরকে সরে যেতে বলা হচ্ছে। এটি শুধু মনোয়ারার কথা নয়, বটাধে আশ্রিত বুলবুলি, হাজেরা, সুফিয়া, গোলসেনা, আয়না, নূরী, আনোয়ারা, রোকেয়া, নূর মোহাম্মদ, লতিফ, সাদেকুল, এরশাদ, বিপুলসহ শ’ শ’ নারী-পুরুষের আর্তনাদ আমাদের পুনর্বাসন চাই। ওদিকে বাঁধ থেকে তাদের ঘর-বাড়ি সরিয়ে নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে চূড়ান্ত নোটিশ দেয়ায় আশ্রিতদের চোখে-মুখে এখন হতাশার ছাপ। এলাকাবাসী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে দেশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন, ভাসমান, ছিন্নমূল মানুষদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলেও এ এলাকার তিস্তা বাঁধে আশ্রিতদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পাউবো সূত্র জানায়, বাঁধ থেকে আশ্রিত ঘর-বাড়ি মানুষজন না সরালে যে কোনো সময় বঁাঁধ ভেঙে ভয়াবহ সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। বৃহত্তর স্বার্থে বিষয়টি মাথায় রেখেই তাদেরকে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। নিউজ নেটওয়ার্কের উদ্যোগে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ, নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও দায়মুক্তি বিষয়ক ৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলাকালে মানবাধিকার বিষয়ক মাঠ পরিদর্শনে গতকাল মঙ্গলবার কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌরসভার ৯নং উত্তর ঠাকুরদাস ঠসার বাজার এলাকা গিয়ে একদিকে বাঁধের সমস্যা অপরদিকে বাঁধে আশ্রিত মানুষদের সমস্যা দেখা দেয়। এলাকার ইজারাদার মন্টু মিয়া, চায়ের দোকানদার এরশাদুল জানায়, তিস্তা নদীর তীরবর্তী হারাগাছ থেকে মীরবাগ পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটারে সহস্রাধিক বাড়ি-ঘর রয়েছে। বাঁধে আশ্রিত মানুষজন ৪ থেকে ৫ যুগ ধরে ঘর-বাড়ি করে বসবাস করছে। তাদের পুনর্বাসন না করে তাদেরকে সরে যেতে বলা যেমন অমানবিক, পাশাপাশি তারা বাঁধে আশ্রয় গ্রহণ করায় যে কোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে এ অঞ্চলের শতাধিক গ্রামসহ রংপুর অঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এলাকার মেম্বার মাহবুব বলেন, বাঁধে আশ্রিতদের পুনর্বাসনের জন্য মেয়রকে জানানো হয়েছে। হারাগাছ পৌরসভার মেয়র হাকিবুর মাস্টার বলেন, বাঁধে আশ্রিত মানুষজনদেরকে সরে যেতে হবে। আশ্রিতদের জন্য হারাগাছ পৌর এলাকার খাস জমিতে ঘর-বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেন, বৃহত্তর স্বার্থে বাঁধে আশ্রিতদের সরিয়ে নেয়ার জন্য দফায় দফায় পত্র দেয়া হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফান্ড এলে এ বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ ব্যাপারে রংপুর জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীবের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বাঁধে আশ্রিতদের ব্যাপারে তদন্ত করে পুনর্বাসনের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।