এক্সক্লুসিভ

চলছে সিরিজ মামলা, ধরপাকড়

বিএনপিশূন্য রূপগঞ্জ উপজেলা

জয়নাল আবেদীন জয়, রূপগঞ্জ থেকে

১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার, ৯:০৫ পূর্বাহ্ন

ধারাবাহিক মামলার ফাঁদে বিপর্যস্ত রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি। চলছে ব্যাপক ধরপাকড়। গ্রেপ্তার আতঙ্কে শুধু নেতারাই নয় উপজেলার সর্বস্তরের কর্মী-সমর্থকরাও বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। চলতি মাসে শুধু রূপগঞ্জ উপজেলায় ৪টি বিস্ফোরক আইনের মামলায় অন্তত ৪ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলার ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, সোনারগাঁওসহ বিভিন্ন থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলাগুলোতেও আসামি করা হচ্ছে রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি নেতাকর্মীদের। বিএনপির দাবি সব মামলা কাল্পনিক। আরেকটি সাজানো নির্বাচনের নীল নকশার অংশ হিসেবেই বিএনপিকে টার্গেট করছে পুলিশ। এ ছাড়া পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায়ের। পুলিশের দাবি, বিএনপি নয়, জনগণের জানমাল রক্ষার্থে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে চলছে তাদের অভিযান।
জানা যায়, নাশকতার অভিযোগে গত ১২ দিনের ব্যবধানে কেবল রূপগঞ্জ উপজেলাতেই বিস্ফোরক আইনে পুলিশ বাদী হয়ে ৪টি মামলা করেছেন। এ ছাড়া ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, সোনারগাঁওসহ বিভিন্ন থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলাগুলোতেও আসামি করা হচ্ছে রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি নেতাকর্মীদের। এদের মধ্যে রয়েছেন রূপগঞ্জ থেকে নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, অপর মনোনয়ন 
প্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু, আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনিরসহ প্রায় ৪ শতাধিক নেতাকর্মীকে।

এদের ছাড়াও রূপগঞ্জের বাসিন্দা জেলা যুবদলের সভাপতি, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক, স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, জেলা উলামাদলের সভাপতিসহ অনেককেই মামলাগুলোতে আসামি করা হচ্ছে। প্রতিটি মামলা ভিন্ন ভিন্ন স্থান আর আসামিদের নাম রদবদল ছাড়া প্রায় একই ধরনের। ঘটনাও দেখানো হচ্ছে একই ধরনের আর সব মামলাই পুলিশ বাদী এবং একই ধারায়। অব্যাহত মামলার কারণে রূপগঞ্জের প্রতিটি ওয়ার্ড ইউনিটের নেতাকর্মীরা এখন গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পুরো রূপগঞ্জ উপজেলা এখন বিএনপিশূন্য। চলছে ধরপাকড়ও। এখন পর্যন্ত এসব মামলায় জেলায় শতাধিক নেতাকর্মী আটক হয়েছেন। এদের মধ্যে ১১ জনকে আটক করেছে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ।

এসব মামলাকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগও উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। আত্মগোপনে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের ফোন করে চাঁদা দাবি করছেন রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। যদি চাহিদানুসারে সময়মতো চাদা পৌঁছে না দেয়া হয় তাহলে পরবর্তী মামলাতে তাকেসহ তার পরিবারের অন্য সদস্যকে আসামি করে দেয়া হয়। অভিযান চালানো হয় বিএনপির সে নেতাসহ তার আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে।
এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ভৌতিক আর কাল্পনিক মামলায় আসামি করা হচ্ছে আমাদের। আওয়ামী লীগের পোষ্য পুলিশ এখন ভয়ঙ্কর নাৎসী বাহিনীর চেয়ে জঘন্য আচরণ করছে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে। গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে আদায় করা হচ্ছে চাঁদা। বিচারবিভাগও পরিচালিত হচ্ছে সরকারের হুকুমানুসারে। সংসদে আইন পাস করে আওয়ামী লীগ দেশটাকে রাজতন্ত্র করে দিলেই তো সাধারণ মানুষ জুলুম নির্যাতনের হাত থেকে বেঁচে যায়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু বলেন, আওয়ামী লীগ আরেকটি সাজানো নির্বাচন করে চোরাইপথে ক্ষমতা দখলের জন্য তাদের পালিত পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছে আমাদের উপর। পুলিশের গতানুগতিক মামলার বর্ণনায় সহজেই অনুমেয় সব ঘটনাই সাজানো। অসুস্থ, নাবালক আর বিদেশে অবস্থানরত অনেক লোককে আসামি করা হয়েছে পুলিশের কাল্পনিক মামলায়। যদি লাঠি অস্ত্র দিয়ে মানুষের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া যেত তাহলে ভাষা আন্দোলন আর স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের জয়লাভ হতো না।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন বলেন, এমপির বাড়ি থেকে তালিকা করা হয়। সে অনুসারে মামলা নেয় পুলিশ। যতই মামলা হামলা দিয়ে আমাদের দমানোর চেষ্টা করুক সময়মতো ঠিকই গর্জে উঠবে জাতীয়তাবাদের অদর্শে বিশ্বাসী সৈনিকেরা।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান বলেন, পুলিশ কারো প্রতিপক্ষ না। যেহেতু সব মামলার বাদী পুলিশ সুতরাং ঘটনা ঘটেছে বলেই মামলাগুলো হচ্ছে। আমরা কোনো বিএনপির নেতাকর্মীকে টার্গেট করিনি। কোনো নাশকতাকারী অথবা নাশকতার পরিকল্পনাকারী যদি বিএনপির নেতাকর্মী হয় সে দোষতো পুলিশের নয়। দলীয় পরিচয় নয়, যিনিই শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গ করে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করবে জনগণের জানমাল রক্ষায় তার বিরুদ্ধেই পুলিশ সোচ্চার থাকবে। এ ছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। কারো কাছে চাঁদা দাবি করা হলে তিনি যেন আমাকে অথবা এসপি মহোদয়কে বিষয়টি অবগত করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status