বাংলারজমিন

৩ বছর ধরে সংস্কার নেই রংপুর স্টেশন রোডেরন

জাভেদ ইকবাল, রংপুর থেকে

১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার, ৮:৪৮ পূর্বাহ্ন

রংপুর নগরীর ব্যস্ততম স্টেশন রোড ৩ বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় চলাচলকারীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। বড় বড় গর্তে পড়ে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়াসহ সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে যাওয়ায় এ সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এনিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে এলাকাবাসীর মনে। এদিকে সিটি কর্পোরেশন বলছে দ্রুতই সড়কটি সংস্কারের।

রংপুর সিটি কর্পোরেশন ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীর ব্যস্ততম সড়ক স্টেশন রোডে প্রায় প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত। রংপুর রেলওয়ে স্টেশন, র‌্যাবের আঞ্চলিক কার্যালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, দুর্নীতি দমন কার্যালয়, তাজহাট, মাহিগঞ্জ যাতায়াতে এ সড়কটি ব্যবহার করা হয়। ৩ কিলোমিটার এ সড়ক সংস্কারে ২০১৫ সালে ১২ কোটি টাকার টেন্ডারে মেরামতের কাজ শুরু করে রাজশাহীর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়কটির বেশ কিছু স্থানে পাথর তুলে খোয়া দিয়ে মেরামতসহ নামে মাত্র কাজ করে করে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এতে করে ওই বছরই বর্ষা মৌসুমে সড়কটি বেহাল। বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে গিয়ে সড়কে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া গোটা সড়কেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে করে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। সেই সঙ্গে রোগীদের যাতায়াত, পণ্য পরিবহনে বেড়েছে ভোগান্তি। সাধারণ মানুষদের বেশি ভাড়ায় ভাঙ্গাচোরা এ সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে। অটো, রিকশা, গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহন প্রতিদিনই বিকল হচ্ছে ওই সড়কে। স্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এই রাস্তায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অফিস রয়েছে। এখান দিয়ে রেল স্টেশনে যাতায়াত করায় ভাঙ্গা সড়কের কারণে রেলের যাত্রীরা সঠিক সময়ে স্টেশনে পৌঁছাতে পারছে না। এই সড়কে কোন রিকশা, অটো চলাচল করতে চায় না এবং আসলেও বেশি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। প্রতিদিন দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে মানুষ।

অটোরিকশায় যাতায়াতকারী আবদুল মজিদ বলেন, এলাকার প্রতিটি মানুষের ক্ষোভ রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের প্রতি। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক কিভাবে ৩ বছর ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। আমরা সিটি করপোরেশনে ট্যাক্স দিয়ে থাকি, তাদের কি নজরে আসে না এ সড়কটি। এ সড়কে চলাচল করে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এ রাস্তায় একটা রোগী নিয়ে গেলে তাকে হাসপাতালে পৌঁছাতে হবে না, এমনিতেই মারা যাবে। কোনো সংকটাপন্ন রোগী থাকলে অনেক দূর ঘুরে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।

রিকশাচালক সেলিম মিয়া জানান, রাস্তা অনেক ভাঙা। রিকশা চালাতে অনেক কষ্ট হয়। প্রতিদিনই রিকশা মেরামত করতে হয়। আজ স্পোক ছিঁড়ে যায়, কাল বেয়ারিং নষ্ট হয়ে যায়, চাকা নষ্ট হয়ে যায় নানা সমস্যা এ রাস্তায় রিকশা চালালে।

শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন বলেন, একটু পানি জমলেই কাঁদা হয়ে যায়। বড় বড় গর্ত থাকায় অনেক সময় অটো রিকশা, রিকশা উল্টে পড়ে অনেক লোক আহত হচ্ছে প্রতিদিন। এছাড়া এটি একটি কর্মব্যস্ত এলাকা। রাস্তার দু’ধারে অসংখ্য দোকানপাট রয়েছে। সেখানে পণ্য পরিবহনে অনেক সমস্যায় পড়তে হয় সকলকে। রাস্তার ইট চাকার তলে পড়ে ছিটকে গিয়ে মানুষের মাথা ফেটে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। গত মেয়রের আমলেও রাস্তাটি ঠিক হয়নি। নতুন মেয়র মোস্তফা দায়িত্ব নিলেও এখন পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে কোন আশার আলো দেখছি না।

সাবেক কাউন্সিলর আকরাম হোসেন বলেন, কাজ না করে কিভাবে ৫ কোটি টাকার বিল উত্তোলন করে নিয়ে গেল তা আমার বোধগম্য নয়। দ্রুত সিটি করপোরেশনকে উদ্যোগ নিয়ে রাস্তাটি সংস্কার করা উচিত।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী এমদাদ হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যে সিকিউরিটি আছে তা জরিমানা করা হবে এবং আইনের বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, শাপলা চত্ত্বর থেকে তাজহাট পর্যন্ত, জাহাজ কোম্পানী মোড় থেকে পিটিসি মোড় পর্যন্ত রাস্তাটির কাজ শিডিউল সময়ে শেষ হয়নি। সাধারণ মানুষ অত্যন্ত সাফার করছে। যারা ঠিকাদার তারা একজন কাজ নিয়ে আরেকজন ঠিকাদারকে দিয়েছে। যারা কাজ নিয়েছে তাদের কাজ করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। বিভিন্ন সময় কাজগুলো এভাবে পেন্ডিং পড়ে আছে। ঠিকাদারদের সাথে আমরা পারসোনালি যোগাযোগ করেও আমরা তাদের কাজে ফিরিয়ে আনতে পারিনি। যেহেতু অর্থ বছর শেষ, আমরা তাদের ফিড ব্যাক না পেলে দ্রুতই তাদের কাজ বাতিল করা হবে। নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করবো এবং অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করবো। এদিকে শাপলা চত্ব্বর সড়কের মতো নগরীর কেরানীপাড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার সড়ক, বেগম রোকেয়া কলেজ স্মরণী, মাহিগঞ্জ পীরগাছা সড়ক, বেতপট্টি, হাড়িপট্টি রোড, সেনপাড়া, গুপ্তপাড়াসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর দ্রুত মেরামতের দাবিও জানিয়েছে নগরবাসী।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status