প্রথম পাতা

১২ শিক্ষার্থীর মুক্তি দাবি পরিবারের কান্না

স্টাফ রিপোর্টার

১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে ১২ শিক্ষার্থীকে আটকে রাখার অভিযোগ করেছেন তাদের অভিভাবকরা। তাদের নির্যাতন করে কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে যুক্ত থাকার স্বীকারোক্তি  আদায়ের চেষ্টা হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনে সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিভাবকরা তাদের নির্দোষ সন্তানদের মুক্তি দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আটক শিক্ষার্থী সাইফুল্লা বিন মনসুরের বাবা মানসুর রহমান। তিনি বলেন, গত ৫ই সেপ্টেম্বর ভোররাতে তেজগাঁও-মহাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আমাদের সন্তানসহ অনেক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদের মধ্যে কিছু শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

কিন্তু এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী আল আমিন, জহিরুল ইসলাম হাসিব, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজাহিদুল ইসলাম, সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম, টাঙ্গাইলের সরকারি সাদাত কলেজের স্নাতক ফল প্রত্যাশী সাইফুল্লাহ বিন মনসুর, মিরপুরের সাইক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী গাজী মো. বোরহান উদ্দিন, ঢাকা পলিটেকনিকের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তারেক আজিজ, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজ, শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হানুল আবেদীন, ইফতেখার আলম, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তারেক আজিজ ও মেহেদী হাসান রাজিব এখনও ডিবি কার্যালয়ে আটক রয়েছেন। আটকের চারদিন পরও তাদের আদালতে হাজির করা হচ্ছে না।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে আমরা তাদের আটকের বিষয়ে জানতে পারি। তারপর থেকে ডিবি অফিসে যোগাযোগ করতে থাকি। ৬ই সেপ্টেম্বর ডিবিতে যোগাযোগ করলে তারা আমাদের জানান পরেরদিন ৭ই সেপ্টেম্বর তাদের আদালতে হাজির করা হবে। পুলিশ কর্মকর্তারা কখনও আমাদের আশ্বাস দিচ্ছেন আবার কখনও তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি অস্বীকার করছেন।

মানসুর রহমান বলেন, যাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে তাদের মুখে শুনেছি আমাদের সন্তানদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে। যা আমাদের উদ্বেগকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমাদের সন্তানদের গ্রেপ্তারের পর অস্বীকার, দেখা করতে না দেয়া এবং আদালতে হাজির না করা প্রচলিত আইনে বেআইনি। এমনকি উচ্চ আদালতের নির্দেশও লঙ্ঘন। যা অস্বাভাবিক বিষয়। আমরা এখন আমাদের সন্তানদের নিয়ে শঙ্কিত।

মানসুর রহমান আরো বলেন, আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা দাবি করছি। তাদের আটক ও গ্রেপ্তারের কথা অস্বীকার করায় আমরা আমাদের সন্তানদের ব্যাপারে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমাদের আকুল আবেদন তাদের যেন আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক দ্রত আদালতে হাজির করা হয়।

আর তাদের নিয়ে যেন কোনো নাটক সাজানো না হয়। তারা যদি সত্যিই কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তাদের আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। আমরা জাতীয় মানবাধিকার সংগঠনসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের কাছে আমাদের সন্তানদের আইনি আশ্রয় পাবার অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি। যদি সরকার আমাদের সন্তানদের নিয়ে কোনো নাটক সাজানোর চেষ্টা করে তাহলে আন্তজার্তিক বিভিন্ন সংস্থার কাছে অভিযোগ জানাতে বাধ্য হবো।

সংবাদ সম্মেলন শেষে মানসুর হোসাইন বলেন, আমার ছেলে সিফাত ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে লেখাপড়া করে। বড় ছেলে সাইফুল্লাহ বিন মনসুর একটি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে ঢাকা আসে। সেই সুবাদেই ছোট ছেলে সিফাতের বাসায় ওঠে। সেখান থেকে ৫ই সেপ্টেম্বর ভোরে আমার দুই ছেলেসহ ওই বাসা থেকে আরো অনেককে সাদা পোশাকের পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।

সিফাতের বরাত দিয়ে মানসুর রহমান বলেন, সে আমাকে বলেছে ডিবি কার্যালয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের সবার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতন করে শুধু তাদের মুখ থেকে কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করানোর চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে তাদের অনেককে নির্যাতন করে ছেড়ে দেয়া হয়। সিফাত বর্তমানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিন্তু বড় ছেলে এখনও ডিবিতে আটক বলে জানান তিনি।  

ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী ইফতেখার আলমের বড় ভাই রাশেদ আলম বলেন, আমার ভাই অসুস্থ ছিল। ঈদের অনেক আগে থেকে সে বাড়িতে ছিল। একটি ইন্টারিভিউ দিতে ২রা সেপ্টেম্বর সে ঢাকা এসে তেজকুনি পাড়ার ইউসুফ কুটিরে ওঠে। সেখান থেকেই ওইদিন আমার ভাইসহ আরো অনেক শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে যায়। শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম হাসিবের বাবা এনামুল হক বলেন, ঢাকার তেজকুনি পাড়ার একটি বাসায় থেকে আমার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কোচিং করছিল। ওইদিন ভোরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আমার ছেলেসহ আরো ১৬জনকে ধরে নিয়ে যায়।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া শাখা অতিরিক্ত উপকমিশনার ওবায়দুর রহমান মানবাজমিনকে বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো কিছু জানি না। খোঁজখবর নিচ্ছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status