ফেসবুক ডায়েরি
একটি প্রমোশনাল ভিডিও এবং বাস্তবতা
রাজু নুরুল
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শনিবার, ১১:০০ পূর্বাহ্ন
বিটিভি’তে প্রচারিত একটা প্রমোশনাল ভিডিও নিয়ে খুব আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। একদিকে প্রচারের অভাব আর অন্যদিকে তেলবাজির কারণে যে এই আলোচনা সমালোচনা; তাতে কোন সন্দেহ নাই।
প্রথমে ভিডিওটার গল্প বলা যাক।
অনেকে মিলে হামিদ মিয়ারে দৌঁড়ানি দিয়েছে। হামিদ মিয়ার অপরাধ হলো, সে জহিরের বাপ-মায়ের কুলখানিতে ফকির মিসকিন খাওয়ানোর দাওয়াত দিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়েছিল। এইজন্য সেখানকার অধিবাসীরা অপমানিত বোধ করেছে এবং তারা মনে করে, ‘এইদেশে এখন আর ফকির মিসকিন নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকে বাড়ি, জমি, পুকুর এবং কাজ দিয়েছে। তারা এখন স্বাবলম্বী!’
খুলনার দাকোপে এরকম কিছু আশ্রয়ণ প্রকল্প দেখার সুযোগ হয়েছিল। খাস জমিতে গৃহহীণ, ভিক্ষুক বা এরকম পরিবারকে সেখানে আশ্রয় দেয়ার কথা। প্রত্যকটা প্রকল্পে ১০০ বা ৫০ বা ৬০ পরিবারকে গুচ্চ গ্রাম টাইপে পুনর্বাসন করা হয়েছে!
তাদের জন্য টিনশেড ঘর, প্রতিটা ঘরে দুইটা করে কক্ষ বানানো হয়েছে। প্রতি পাঁচ পরিবারের জন্য একটা করে টয়লেট বরাদ্দ আছে। পাঁচ চেম্বারের একেকটা টয়লেট, সঙ্গে আছে নারীদের জন্য আলাদা গোসলখানা। সেই প্রকল্প লাগোয়া পুকুর আছে, যেখানে মাছ চাষ করা যায়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, গোটা প্রকল্পটাই গৃহহীণ, দরিদ্র মানুষের পুনর্বাসনের জন্য একটা চমৎকার উদ্যোগ। কিন্তু কিছু সমস্যা রয়ে গেছে!
হস্তান্তরের পর থেকে টয়লেট কিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হবে, ময়লা সরানোর বাজেট কোথা থেকে আসবে, সেইরকম কোন উদ্যোগ নেয়া হয় নাই। ফলে মানুষের মলে সয়লাব গোটা এলাকা। রীতিমত দুর্যোগময় পরিস্থিতি। প্রায় সব টয়লেট উপচে পড়ছে মানুষের মল। এখন স্থানীয় প্রশাসন আমাদেরকে অনুরোধ করছে, যাতে আমরা সেসব টয়লেট মেরামত করে দিই।
প্রকল্পের অর্ধেক ঘর খালি। মানুষ নির্বাচনের সময় ঠিকভাবে, সঠিক লোক নির্বাচন করা হয়নি। ফলে লোকজন সেসব ঘর ছেড়ে চলে গেছে। ফাঁকা ঘরে এখন অন্যরা গরুছাগল বেঁধে রাখে!
প্রভাবশালীরা ভিক্ষুক সেজে কিছু ঘর দখলে নিয়েছে। ফলে তারা সেসব ঘর এখন ভাড়ায় খাটায়।
যাদেরকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে, তাদেরকে কাজ দেয়া হয়নি। ফলে লোকজন সেখানে থাকতে পারলেও কাজ যেহেতু নাই, তারা অন্যত্র সরে গেছে। ফলে প্রকল্পস্থানে খুব বেশি মানুষজন নাই। অনেক ঘর ফাঁকা।
এটা একটা রেগুলার উন্নয়ন প্রকল্প হতে পারতো। প্রধানমন্ত্রীর নামে বিশেষ প্রকল্প হওয়ার কারণে এর স্থায়ীত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে। সরকার নাই, প্রকল্পও নাই।
এই প্রকল্প নিয়ে খুব বেশি প্রচার হয় নি। ফলে বিটিভি’র উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কিন্তু এইরকম ভুল/ অতিরঞ্জিত তথ্য দেয়ার কি কোন দরকার ছিল?
বলা হচ্ছে, প্রকল্পে যাদেরকে আশ্রয় দেয়া হচ্ছে, তাদের সবাইকে, ছেলেমেয়েদেরকে কাজের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। এটা ঠিক না। এরকম কোন উদ্যোগ নাই।
বলা হচ্ছে, দেশে আর ফকির মিসকিন নাই। এটা যে সত্য না; বরং এটা বলে গোটা ভিডিওটাকে সকলের কাছে হাসির পাত্র করেছে, তাতে কোন সন্দেহ নাই।
এই পর্যন্ত মাত্র ৩৫০০ পরিবারকে ঘর বানিয়ে দেয়া হয়েছে। এইদেশে গৃহহীণ মানুষের সংখ্যা মাত্র ৩৫০০? তাহলে এই স্বল্প উদ্যোগ নিয়েই দেশ ভিক্ষুকমুক্ত- এটা দাবি করার কোন দরকার ছিল? আবার আরেক জায়গায় বলছে ১৩৬০০০ পরিবার পুনর্বাসিত হয়েছে। কনফিউজিং!
আশ্রয়ণ প্রকল্প বেশ ভাল উদ্যোগ। সমন্বিতভাবে এই উদ্যোগ আরো নেয়া দরকার।
কিন্তু তেলবাজি করতে গিয়ে যারা অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে একটা ভাল উদ্যোগকে হাসির পাত্র বানিয়ে দেয়; তাদেরকে চরম উপহাস করা উচিৎ! তাদের উদ্দেশ্য যে পরিষ্কার না, সেটাতো পরিষ্কার!
আমার মতে, যারা এর কন্টেন্ট লিখেছে, যারা অনুমোদন দিয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন রাখা দরকার!
এইটা এই দেশের মূল সমস্যা। তেলবাজরা জানেই না, তেলটা ঠিক কোথায় কিভাবে দিতে হয়! অবশ্য এটা নির্ভর করে, যার খায় তাদের কোয়ালিটির ওপর।
(লেখক: টেকনিক্যাল প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ)
প্রথমে ভিডিওটার গল্প বলা যাক।
অনেকে মিলে হামিদ মিয়ারে দৌঁড়ানি দিয়েছে। হামিদ মিয়ার অপরাধ হলো, সে জহিরের বাপ-মায়ের কুলখানিতে ফকির মিসকিন খাওয়ানোর দাওয়াত দিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়েছিল। এইজন্য সেখানকার অধিবাসীরা অপমানিত বোধ করেছে এবং তারা মনে করে, ‘এইদেশে এখন আর ফকির মিসকিন নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকে বাড়ি, জমি, পুকুর এবং কাজ দিয়েছে। তারা এখন স্বাবলম্বী!’
খুলনার দাকোপে এরকম কিছু আশ্রয়ণ প্রকল্প দেখার সুযোগ হয়েছিল। খাস জমিতে গৃহহীণ, ভিক্ষুক বা এরকম পরিবারকে সেখানে আশ্রয় দেয়ার কথা। প্রত্যকটা প্রকল্পে ১০০ বা ৫০ বা ৬০ পরিবারকে গুচ্চ গ্রাম টাইপে পুনর্বাসন করা হয়েছে!
তাদের জন্য টিনশেড ঘর, প্রতিটা ঘরে দুইটা করে কক্ষ বানানো হয়েছে। প্রতি পাঁচ পরিবারের জন্য একটা করে টয়লেট বরাদ্দ আছে। পাঁচ চেম্বারের একেকটা টয়লেট, সঙ্গে আছে নারীদের জন্য আলাদা গোসলখানা। সেই প্রকল্প লাগোয়া পুকুর আছে, যেখানে মাছ চাষ করা যায়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, গোটা প্রকল্পটাই গৃহহীণ, দরিদ্র মানুষের পুনর্বাসনের জন্য একটা চমৎকার উদ্যোগ। কিন্তু কিছু সমস্যা রয়ে গেছে!
হস্তান্তরের পর থেকে টয়লেট কিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হবে, ময়লা সরানোর বাজেট কোথা থেকে আসবে, সেইরকম কোন উদ্যোগ নেয়া হয় নাই। ফলে মানুষের মলে সয়লাব গোটা এলাকা। রীতিমত দুর্যোগময় পরিস্থিতি। প্রায় সব টয়লেট উপচে পড়ছে মানুষের মল। এখন স্থানীয় প্রশাসন আমাদেরকে অনুরোধ করছে, যাতে আমরা সেসব টয়লেট মেরামত করে দিই।
প্রকল্পের অর্ধেক ঘর খালি। মানুষ নির্বাচনের সময় ঠিকভাবে, সঠিক লোক নির্বাচন করা হয়নি। ফলে লোকজন সেসব ঘর ছেড়ে চলে গেছে। ফাঁকা ঘরে এখন অন্যরা গরুছাগল বেঁধে রাখে!
প্রভাবশালীরা ভিক্ষুক সেজে কিছু ঘর দখলে নিয়েছে। ফলে তারা সেসব ঘর এখন ভাড়ায় খাটায়।
যাদেরকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে, তাদেরকে কাজ দেয়া হয়নি। ফলে লোকজন সেখানে থাকতে পারলেও কাজ যেহেতু নাই, তারা অন্যত্র সরে গেছে। ফলে প্রকল্পস্থানে খুব বেশি মানুষজন নাই। অনেক ঘর ফাঁকা।
এটা একটা রেগুলার উন্নয়ন প্রকল্প হতে পারতো। প্রধানমন্ত্রীর নামে বিশেষ প্রকল্প হওয়ার কারণে এর স্থায়ীত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে। সরকার নাই, প্রকল্পও নাই।
এই প্রকল্প নিয়ে খুব বেশি প্রচার হয় নি। ফলে বিটিভি’র উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কিন্তু এইরকম ভুল/ অতিরঞ্জিত তথ্য দেয়ার কি কোন দরকার ছিল?
বলা হচ্ছে, প্রকল্পে যাদেরকে আশ্রয় দেয়া হচ্ছে, তাদের সবাইকে, ছেলেমেয়েদেরকে কাজের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। এটা ঠিক না। এরকম কোন উদ্যোগ নাই।
বলা হচ্ছে, দেশে আর ফকির মিসকিন নাই। এটা যে সত্য না; বরং এটা বলে গোটা ভিডিওটাকে সকলের কাছে হাসির পাত্র করেছে, তাতে কোন সন্দেহ নাই।
এই পর্যন্ত মাত্র ৩৫০০ পরিবারকে ঘর বানিয়ে দেয়া হয়েছে। এইদেশে গৃহহীণ মানুষের সংখ্যা মাত্র ৩৫০০? তাহলে এই স্বল্প উদ্যোগ নিয়েই দেশ ভিক্ষুকমুক্ত- এটা দাবি করার কোন দরকার ছিল? আবার আরেক জায়গায় বলছে ১৩৬০০০ পরিবার পুনর্বাসিত হয়েছে। কনফিউজিং!
আশ্রয়ণ প্রকল্প বেশ ভাল উদ্যোগ। সমন্বিতভাবে এই উদ্যোগ আরো নেয়া দরকার।
কিন্তু তেলবাজি করতে গিয়ে যারা অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে একটা ভাল উদ্যোগকে হাসির পাত্র বানিয়ে দেয়; তাদেরকে চরম উপহাস করা উচিৎ! তাদের উদ্দেশ্য যে পরিষ্কার না, সেটাতো পরিষ্কার!
আমার মতে, যারা এর কন্টেন্ট লিখেছে, যারা অনুমোদন দিয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন রাখা দরকার!
এইটা এই দেশের মূল সমস্যা। তেলবাজরা জানেই না, তেলটা ঠিক কোথায় কিভাবে দিতে হয়! অবশ্য এটা নির্ভর করে, যার খায় তাদের কোয়ালিটির ওপর।
(লেখক: টেকনিক্যাল প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ)