ষোলো আনা

‘সাসেউম গগি’ খেয়ে ঈদ

মিজানুর রহমান, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে

৩১ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন

দক্ষিণ কোরিয়া যখন যুক্তরাষ্ট্রের মহড়া নিয়ে উদ্বেগগ্রস্ত, তখন আমি পরিকল্পনা আঁটছি পরিবার ছাড়া ঈদ কীভাবে  কাটাবো। এটাই ছিল আমার পরিবার ছাড়া প্রথম ঈদ। কিন্তু ঈদ নিয়ে ভাববার সময় নেই এখানকার মানুষদের। ঈদের দিন ছিল আমার ল্যাব ক্লাস। ল্যাব ইনচার্জকে বলে নামাজের সময়টা নিয়েছিলাম ছুটি। ঈদের নামাজ আদায় করি সিউল সেন্ট্রাল মসজিদে। মসজিদে দেখলাম প্রচুর বিদেশি মুসলিম নামাজ আদায় করছেন। নামাজ শেষে কোলাকুলি করলাম যাদের সঙ্গে তারা প্রত্যেকেই অচেনা, অজানা ব্যক্তি। এরপর ইরানিরা চকলেট দেন সকলকে। দেশের সবাইকে অনেক বেশি মনে পড়েছিল সেদিন। নামাজে যাওয়ার আগে বাবা-মাকে সালাম করা। তাদের কাছে ও আপু-দুলাভাইয়ের কাছে ঈদ সালামি নেয়া। পরিচিতজনদের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় শেষে পরিচিতজনদের সঙ্গে কোলাকুলি, বাড়িতে গরু কোরবানি দেয়া। বিকালে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা। তবে এখানে, নামাজ শেষে ৮ ঘণ্টা ক্লাস করতে হয়েছে আমাকে।

বাজারে একবার গিয়েছি লবণ কিনতে। এখানকার লোকজন খুব একটা ইংলিশ বোঝেন না। আর আমি বুঝি না তাদের ভাষা। প্যাকেটের গায়ে ছবি দেখে কিনে আনলাম লবণ। বাসায় ফিরে নুডুলস রান্না করে খাওয়ার পর থেকে শুরু হলো পেটব্যথা। তারপর এক বন্ধুকে পরদিন ক্লাসে প্যাকেটের ছবি দেখালে সে জানায়, এটাতো লবণ না। লবণ হচ্ছে সোডিয়াম ক্লোরাইড কিন্তু প্যাকেটের গায়ে লেখা ছিল সোডিয়াম কার্বনেট। পরে ল্যাবের সবাই আমাকে লবণ উপহার দিয়েছিল। এখানকার বন্ধুরা খুবই আন্তরিক এবং সাহায্য পরায়ণ। পড়াশোনার এত চাপ থাকে যে বলার বাইরে। ক্লাস শুরু হয় সকাল ৮টায় এবং শেষ হয় রাত ৯টায়। একটা খুবই ভালো লাগার বিষয়, যে প্রফেসরের অধীনে রিসার্চ করি সেই প্রফেসর পেমেন্ট দিয়ে থাকেন সব শিক্ষার্থীকে।

আরেক দিনের ঘটনা, প্রফেসর আমাকে প্রশ্ন করলেন, বাংলাদেশে কি বিখ্যাত? আমি উত্তরে বলেছিলাম ‘গার্মেন্টস সেক্টর’। তার কিছুদিন পর প্রফেসর তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমাদের সবাইকে জ্যাকেট উপহার দিয়েছিলেন। তাতে লেখা ছিল ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’। সেদিন আমার এতটাই গর্ব অনুভব হয়েছিল যে ভাষায় বলে প্রকাশ করার মতো না। ক্লাসে আমাকে প্রফেসর সামনে ডেকে বলেছিলেন তোমার দেশের পোশাক তোমাকেই উপহার দিলাম।
যা-ই হোক, ঈদের দিন দাওয়াত পাই বাংলাদেশি এক ভাইয়ের বাসায়। ভাই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের প্রভাষক। পিএইচডি করছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুং আং ইউনিভার্সিটি, সিউল)। রাতে ক্লাস শেষে ভাইয়ের বাসায় গেলাম। সেখানে স্বাদ নিই বাঙালি খাবারের। খাবারের তালিকায় ছিল হরিণের মাংস, গরুর মাংস, কয়েক পদের মাছ ও ভর্তা। এই হরিণের মাংস এখানে খুবই জনপ্রিয়। হরিণের মাংসকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘সাসেউম গগি’। হরিণের মাংস খাবার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল সেদিন পূরণ হয়েছিল সেই ইচ্ছা। এটাই ছিল আমার ঈদ উপহার।

সাসেউম গগি খাবার ইচ্ছা পূরণ হলেও মনে অতৃপ্ত রয়েই গেছে বাড়ির খাবারের জন্য। ইচ্ছা করছিল কব্জি ডুবিয়ে যদি মায়ের হাতের রান্না খেতে পারতাম। আর সন্ধ্যা বেলায় বন্ধুদের সঙ্গে মালেক মামার চায়ের দোকানে চায়ে চুমুক দিতে পারতাম। শুধু তাই নয়, ঈদের পরদিন বারবার মনে হচ্ছিল বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে আসি বাড়ির পাশে কোথাও থেকে। এই চিন্তা মাথায় নিয়ে পরদিন আবারো উপস্থিত হই ক্লাসে।

লেখক পরিচিতি: মিজানুর রহমান, চুং আং ইউনিভার্সিটি, সিউল। দক্ষিণ কোরিয়ায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইভ সায়েন্স বিভাগে সিস্টেম বায়োটেকনোলজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর করছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status