প্রথম পাতা

ঈদ আলোচনায় নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার

২১ আগস্ট ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন

অক্টোবর থেকে ক্ষণ গণনা শুরু হবে জাতীয় নির্বাচনের। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন সামনে রেখে এবার রাজনৈতিক দলের নেতারা সবাই গ্রামমুখী হয়েছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন। চলছে নির্বাচন কেন্দ্রীয় প্রচার। এবারের ঈদে রাজনীতির মাঠে আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে নির্বাচন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ে নেতারা এবারের ঈদে নিজ নিজ এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে জনসংযোগের পাশপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরবেন। দলের
কেন্দ্র থেকে এ ধরনের নির্দেশনা আগে থেকেই দিয়ে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ নেতাকে এবারের ঈদ নিজ নিজ এলাকায় করার মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে। ফলে বেশিরভাগ নেতাই কোরবানি ঈদ তাদের এলাকায় উদযাপন করবেন। তারা জানিয়েছেন, শীর্ষ পর্যায় থেকেও ঈদকে কেন্দ্র করে এলাকার ভোটারদের মন জয় করার একটি নির্দেশনা রয়েছে।

এবার আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাই ঈদুল আজহা এলাকায় উদযাপন করবেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে ইতিমধ্যে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য ও সামনের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা অবস্থান করছেন এলাকায়। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ঈদে নেতারা নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পাশপাশি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিষয় তুলে ধরবেন। এ ছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রস্তুতির বিষয়েও নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেবেন। এদিকে আওয়ামী লীগের নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি থাকলেও প্রধান বিরোধী জোট বিএনপি ও ২০ দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচন নিয়ে এখনও দ্বিধায় আছেন। কি পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে, নির্বাচন হলে বিএনপি ও তাদের জোট মিত্ররা অংশ নেবে কিনা এ নিয়ে বাইরে নানা আলোচনা আছে। দ্বিধা সংশয় থাকলে বিএনপি ও জোটের শরিক দলের নেতারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় এবার ঈদ উদযাপন করবেন। ভোটের প্রস্তুতির পাশাপাশি তারা সম্ভাব্য আন্দোনের বিষয়েও নেতাকর্মীদের বার্তা দেবেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দুই জোটের নেতাকর্মীরা এবার ঈদে ভোটের আগেই আগাম প্রচার-প্রচারণা চালাবেন।

ঈদকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতারা নিজ নিজ এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছানোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। মামলা-মোকদ্দমার চাপে আড়ালে থাকা নেতারাও ঈদকে সামনে রেখে সরব হয়েছেন এলাকায়। অন্যবারের চেয়ে প্রার্থীরা এবার আর্থিক অনুদান ও উপহারও বিতরণ করছেন বেশি। ভোটারদের নজর কাড়তে কোরবানির জন্য কেউ কেউ বিশাল আকৃতির বা দামি পশুও কিনেছেন। কেউ কেউ একাধিক পশু কোরবানি দেয়ার মাধ্যমে ঈদ উপলক্ষে নেতাকর্মী ও ভোটারদের ভূরিভোজ করানোর প্রস্তুতিও নিয়েছেন। ফলে জমজমাট নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টির মাধ্যমে এবারের ঈদুল আজহা পরিণত হয়েছে রাজনীতির ঈদে। এ ছাড়া পরপর দুইটি ঈদ কারাগারে কাটছে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। নির্বাচনী আবহের পাশাপাশি নেতারা তৃণমূলে পৌঁছে দেবেন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের বার্তা।

বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, অন্যবার থেকে ঈদে বিএনপি ও অন্যান্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা বেড়েছে এবার। ঈদ শুভেচ্ছার পোস্টার-ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে ফেলেছেন গ্রামের মফস্বল শহর, স্টেশন, হাট-বাজার ও পাড়া-মহল্লা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারলেও নানাভাবে উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন বিএনপির নেতারা। বিএনপির সম্ভাব্য কয়েকজন প্রার্থী জানান, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নির্দেশনা না পেলেও তারা প্রস্তুতি এগিয়ে রাখছেন। অনেকের দাবি, হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়েই তারা তৎপরতা চালাচ্ছেন নিজ নিজ এলাকায়। নেতাদের অনেকেই ঈদ সামনে রেখে সপ্তাহখানেক ধরে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিচ্ছে তাদের খোঁজ-খবর। ঈদ উপহার ও আর্থিক অনুদান নিয়ে মন জোগাতে চাইছেন মানুষের। সামাজিক অনুষ্ঠান-আয়োজনেও ব্যাপকভাবে অংশ নিচ্ছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। বিশেষ করে দলের আন্দোলন সংগ্রামকে কেন্দ্র করে গুমের শিকার নেতাকর্মী, নিহত ও আহত নেতাকর্মীদের বাসায় যাচ্ছেন। তাদের পরিবারের হাতে তুলে দিচ্ছেন ঈদের উপহার। আবার কেউ কেউ পশু কোরবানি, দান-খয়রাত ও শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান আয়োজন করছেন। দীর্ঘদিন যারা এলাকায় যাননি, বা যেতে পারেননি তারাও নির্বাচন সামনে রেখে ছুটে যাচ্ছেন ভোটারের দুয়ারে। খোঁজ নিচ্ছেন নেতাকর্মী-সমর্থকদের। ঈদের মতো সামাজিক উৎসবকে মানুষের কাছে যাওয়ার সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

এলাকায় সাটাচ্ছেন ব্যানার-পোস্টার। আবার পোস্টার-ব্যানার লাগানোর সুযোগ না পেয়ে অনেকেই এলাকাবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা পৌঁছে দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মোবাইলে পাঠাচ্ছেন ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলামসহ ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই সপ্তাহখানেক আগেই চলে গেছেন নিজ নিজ এলাকায়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান ঈদের দিন কোরবানি দেবেন ঢাকায়। পরদিন চট্টগ্রামে গিয়ে সেখানেও কোরবানি দেবেন। ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও মীর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন দু’জনই কোরবানি দেবেন চট্টগ্রাম মহানগরের নিজ নিজ বাসায়। কোরবানির পর দুই নেতাই প্রতিবছরের মতো কর্মী-সমর্থকদের জন্য ভূরিভোজের আয়োজন করেছেন। ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ঈদ করবেন নোয়াখালীতে নিজ এলাকায়। মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আমাদের জন্য এবারের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা আনন্দের পাশাপাশি বেদনার।

সরকার মিথ্যা মামলায় আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে রেখেছে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের অধিকার বঞ্চিত করেছে। তাই আগামী নির্বাচনই মুখ্য নয়, বিএনপির নেতাকর্মীরা এবার খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের বার্তা নিয়ে গ্রামে যাবে। ঈদুল আজহা যে ত্যাগের শিক্ষা দেয়, সে শিক্ষাকে পাথেয় করে আমরা আগামী দিনে নেত্রীর মুক্তির আন্দোলনে নামবো। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ঈদের দুইদিন পর ফরিদপুর গিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঢাকায় ঈদ করলেও তার স্ত্রী রুমানা মাহমুদ ঈদ করবেন সিরাজগঞ্জে নেতাকর্মীদের নিয়ে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মাঈনুল ইসলাম খান শান্ত ঢাকায় ঈদের নামাজ পড়ে কোরবানি দেবেন। পরদিন তিনি নিজ এলাকায় মানিকগঞ্জ গিয়ে কোরবানি দেয়ার পাশাপাশি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঈদ করবেন ঢাকায়। আরেক যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ঈদের একদিন আগে নরসিংদী যাবেন এবং কয়েকদিন অবস্থান করে এলাকাবাসীর সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। তবে তার স্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন সুলতানা ঈদ করবেন ঢাকার বাসায়।

এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই দেশের রাজনীতিতে চলছে নানামুখী তোড়জোড়। আপাতদৃষ্টিতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার তৎপরতায় ব্যস্ত রয়েছে বিএনপি। দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা এ ইস্যুতে মহাজোটের বাইরে থাকা বাম ও মধ্যপন্থি দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন দফায় দফায়। সেসব বৈঠকের উঠে আসা মতামত, পরামর্শ ও দাবি-দাওয়া নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও করণীয় নির্ধারণে প্রায়দিনই বৈঠকে বসছেন নিজেরা। শীর্ষ নেতারা যখন জাতীয় রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তখন কেন্দ্রীয় ও মাঝারির নেতা এবং মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ছুটছেন নিজ নিজ এলাকায়।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন করেছিল বিএনপি। পরবর্তী রাজনৈতিক বিবেচনায় দলটি আওয়ামী লীগকে বিনা চ্যালেঞ্জে কোনো ছাড় দিতে চায় না আগামী জাতীয় নির্বাচনে। দলটির নেতাকর্মীরা আশা করছেন, দেরিতে হলেও সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আন্দোলন শুরু হলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বাধ্য হবে সরকার। সে আশায় দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন। এ ছাড়া মামলা-হামলা ও গ্রেপ্তার-নির্যাতনসহ সরকারের কঠোর আচরণের কারণে সামপ্রতিক বছরগুলোতে স্বাভাবিক রাজনীতির অধিকার চর্চা করতে পারেনি বিএনপি নেতাকর্মীরা।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাতে তার নেতিবাচক রেশ না পড়ে সে বিবেচনা থেকেই ফলাফল প্রতিকূলে যাবে জেনেও সিটি নির্বাচনসহ স্থায়ী নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করেছে বিএনপি। দলটির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত আরো পরের বিষয়। তবে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার বিকল্প নেই বিএনপি নেতাদের। এ ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে শেষ ঈদ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় যাচ্ছেন। দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। তবে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি।

ঈদ সামনে রেখে জাতীয় পার্টির অধিকাংশ নেতা এলাকায় অবস্থান করছেন। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করবেন। পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের ঈদের নামাজ পড়বেন লালমনিরহাট কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে। মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার পটুয়াখালীতে ঈদ উদযাপন করবেন। প্র্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু চট্টগ্রামে, ফখরুল ইমাম জামালপুরে সাহিদুর রহমান টেপা গোপালগঞ্জে আজম খান গাজীপুরে অবস্থান করছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status