বাংলারজমিন

সিলেটে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ‘পশুর হাট’ কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বাড়ানো হয় দাম, ক্রেতারা ক্ষুব্ধ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২১ আগস্ট ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:০১ পূর্বাহ্ন

কোরবানির পশুর কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে হঠাৎ করে দাম বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে সিলেটের কোরবানির পশুরহাট মালিক ও পশু ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট ব্যবসারও অভিযোগও করেছেন ক্রেতারা। তারা বলেন- হাট কর্তৃপক্ষ ও পশু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে গত দুই বছর সিলেটে পশুর বাড়তি মূল্য নিয়েছেন। আর এই সিন্ডিকেটের কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ক্রেতারা। এদিকে- গত দুই বছর সিলেটে অবৈধ পশুরহাট বেশি থাকলেও এবার সেটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফলে সিলেটের কাজিরবাজারের পশুরহাট কর্তৃপক্ষকে আরো বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ক্রেতারা। সিলেট হচ্ছে প্রবাসী শহর। কোরবানির সময় সিলেটে প্রতিবছর ৫-৬ লাখ গরু কোরবানি দেয়া হয়। ফলে সিলেটে পশুর চাহিদা বেশি। স্থানীয় খামারি ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ী সিলেটের হাটে পশু নিয়ে আসেন। গেলো দুই বার পশুর উচ্চ মূল্য পাওয়ার কারণে এবার বেপারিরা সিলেটমুখী হয়েছেন সবচেয়ে বেশি। আর এবার সিলেটে অবৈধ হাটের সংখ্যাও কম। নগরীর অন্যতম পশুরহাট শাহী ঈদগাহ, রিকাবীবাজার ও কয়েদির মাঠ এলাকায় পশুর হাটের কোনো অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। এ কারণে নগরীর ভেতরে একমাত্র বৈধ পশুরহাট হচ্ছে কাজিরবাজার। প্রতি বছর কোরবানি এলে ৩-৪টি গরু কিনেন নগরীর কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। তিনি জানান- গত দুই বছর পশু সংকট থাকায় বাজারে দাম ছিল সবচেয়ে বেশি। ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দামের গরু ক্রেতারা ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় কিনতে বাধ্য হয়েছেন। গরুর দামের কোনো মূল্য তালিকা নেই। এ কারণে হাট কর্তৃপক্ষ ও বেপারিরা ইচ্ছে মতো দাম হাঁকিয়ে গরু বিক্রি করেন। এতে চরম বিপাকে পড়েন সিলেটের ক্রেতারা। গতকাল সিলেটে কাজিরবাজার এলাকায় ঘুরে জানা গেছে- গত দুই বছর সিলেটের প্রধান হাট কাজিরবাজারে গরুর মূল্য ছিল বেশি। সাইদুজ্জামান নামের এক বেপারি বলেন- চাহিদা অনুপাতে গরুর সংখ্যা কম থাকায় সেটি হয়েছে। এবার পশুর আমদানি বেশি বলে জানান তিনি। তবে- বেপারির এ বক্তব্য মানতে নারাজ শাকিল আহমদ নামের এক ক্রেতা। তিনি বলেন- গেলো বছর কোরবানির ঈদের আগের রাত ১১টার দিকে বাজারে গরুর সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এক ঘণ্টায় উচ্চ মূল্যে কয়েক হাজার গরু বিকিকিনি হয়ে যায়। এরপর সত্যি সত্যিই বাজারে সংকট দেখা দেয়। আর সংকট শুরু হওয়ার পরপরই হাট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অজ্ঞাত স্থান থেকে মাত্র আধা ঘণ্টার ভেতরেই ২০ থেকে ২৫টি গরু বোঝাই ট্রাক নিয়ে আসা হয়। সংকট থাকায় গাড়ি থেকে নামাতে না নামাতেই ওইসব পশু উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়ে যায়। এভাবে ভোররাত পর্যন্ত ট্রাকযোগে গরু নিয়ে আসা হয় হাটে। এবং বিক্রিও হয় উচ্চ মূল্যে। কয়েকজন ক্রেতা এ ক্ষেত্রে অভিযোগের তীর ছুড়েছেন কাজিরবাজারের হাট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তারা বলেন- কাজিরবাজারে প্রায় ৩ বছর আগে দাম কম পাওয়ায় বাইরের বেপারিরা আসছিলেন না। এ কারণে হাট কর্তৃপক্ষই বেপারিদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে বেশি দামে পশু বিক্রি করে দিয়েছে। আর এসব পশুবাহী গাড়ি নগরীর বাইরে দক্ষিণ সুরমার কয়েকটি অজ্ঞান স্থানে রাখা হয়। চাহিদা বিবেচনা করে গরুগুলো বাজারে নিয়ে এসে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি সিলেটের কোতোয়ালি থানার পিছনের আবাসিক এলাকার একটি মাঠেও গরু রিজার্ভ রাখা হয়। বাজারে দাম বাড়ানোর জন্য সিন্ডিকেটের কথা অস্বীকার করেছেন সিলেটের প্রধান পশুরহাট কাজিরবাজারের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন লোলন। তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন- কাজিরবাজার হাট কর্তৃপক্ষের উপর যেমন বেপারিদের দাবি রয়েছে তেমনি সিলেটবাসীরও দাবি রয়েছে। সুতরাং ক্রেতাদের চাহিদা ও পশু প্রাপ্তির বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। গেলো দুই বার পশু সংকট থাকার কারণে ঈদের পরদিন পর্যন্ত হাট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে সিলেটের বাইরে থেকে পশু এনে ক্রেতাদের দেয়া হয়েছে। এদিকে- এবারের কোরবানির ঈদেও দামের তারতম্য একেক সময় বদলাচ্ছে কাজির বাজারের প্রধান পশুর হাটে। রোববার বাজারে পশুর দাম ছিল বেশি। এ কারণে বিকিকিনি কম হয়েছে। কিন্তু গতকালের চেহারা ছিল ভিন্ন। দাম একটু কমার কারণে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত কয়েক হাজার পশু বিক্রি হয়েছে। গতকালের বিক্রির পর রাতে হাটে পশু সংকট দেখা দিয়েছে। স্থানীয় খামারি এবং গৃহস্থের গরু বিক্রি হয়েছে বেশি। ফলে আজ শেষ দিনের বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে বেপারীরা। বাজারে মনিটরিং না থাকায় বিক্রেতারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে বেশি দামে কিনতে হবে কোরবানির পশু- এমনটি জানিয়েছেন সিলেটের ক্রেতারা।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status