বাংলারজমিন

কিশোরগঞ্জে হতদরিদ্রদের ঋণের টাকা কর্মকর্তাদের পকেটে

কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি

২১ আগস্ট ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:৪৯ পূর্বাহ্ন

পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় উত্তরাঞ্চলের দরিদ্রদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ কর্মসূচি (উদকনিক) নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সদস্যদের নামে ৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা ঋণ উঠিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ায় সোমবার দুপুরে উপজেলার উদকনিকের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্যরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের উপপরিচালকের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছে। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনা ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সমুদয় টাকা সরকারের ঘরে ফেরত দিবেন বলে জানায়।
অভিযোগে জানা যায়, বর্তমান সরকার উত্তরাঞ্চলের দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করন কর্মসূচিী উদকনিকের মাধ্যমে দরিদ্র নারীদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য প্রকল্প চালু করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  দারিদ্র্য দূরীকরণ ও  বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে অসহায়, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী পরিত্যক্তা ও দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করতে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের অর্থ বরাদ্দ দেন। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ২০১২ সাল থেকে ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নের অসহায়, বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নাম তালিকাভুক্ত করে ৪টি ট্রেডে ৯১২ জন নারীকে  প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয় সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি নারীকে প্রশিক্ষণ শেষে স্বাবলম্বী করার জন্য ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করা হবে। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য এ উপজেলায় সরকারিভাবে ৩৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। কিন্তু বরাদ্দের ওই টাকা ২৩৯ জন সুবিধাভোগীদের নামে ঋণ দেখানো হয়। এরপর মধ্যে ৪০ জন সুবিধাভোগীর নামে ৬ লাখ ১৫ হাজার  টাকা  ঋন দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করেছেন পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। অভিযোগ মতে ওই টাকার মধ্যে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা আল- মিজানুর রহমান ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ক্রেডিট সুপারভাইজার ইয়াছমিন বেগম ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাহাব উদ্দিন ১ লাখ ৪৫ হাজার ও প্র্রোডাকশন ম্যানেজার রায়হান আলী ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে।  
উদকনিক থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া নিতাই ইউনিয়নের হতদরিদ্র নারী সাহিদা বেগম বলেন, আমি কিশোরগঞ্জ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় আমি ২০১৬ সালে শতরঞ্জি তৈরির ট্রেডে ৬০ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি।  প্রশিক্ষণ শেষে ঋণের জন্য অফিসে যোগাযোগ করলে তারা আমাকে ঋণ দেয়নি। কিন্তু কয়েক দিন আগে আমি উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির সভাপতি মোতাহার হোসেনের কাছ থেকে জানতে পারি আমার নামে গত ২০১৮ সালের ৭ই মার্চ ১৫ হাজার টাকা ঋণ দেখিয়ে তা উত্তোলন করে নিয়েছে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা।
পুটিমারী ইউনিয়নের মাঝা ভেড়ভেড়ী গ্রামের প্রশিক্ষণার্থী কহিনুর বেগম বলেন, আমি পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় উদকনিক প্রকল্প থেকে বুটিক বাটিক (ব্লক বাটিক)  ট্রেডে ২০১৬ সালে ৬০ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। প্রশিক্ষনের সময় আমার কাছে ২ হাজার টাকা নিয়েছে। আমি প্রশিক্ষন শেষে  ঋণের জন্য যোগাযোগ করলে তারা আমাকে ঋণ দেয়নি। অথচ এখন শুনতে পারছি আমার নামে ১৫ হাজার টাকা ঋণ করে তা উত্তোলন করেছে প্রোডাকশন ম্যানেজার রায়হান। এছাড়াও পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের ক্রেডিট সুপারভাইজার ইয়াছমিন তাহেরা বেগম, মুক্তি বেগম, লাইলী বেগম, মাজেদা বেগম, নাজু বেগম, মনোয়ারা ও আফরোজাসহ ১০ থেকে ১৫ জন প্রশিক্ষণার্থী সদস্যদের নামে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন  কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির সভাপতি মোতাহার হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার যেখানে হতদরিদ্র ও দরিদ্র মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেখানে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা দরিদ্রদের নামে ঋণ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করছেন। এ ব্যাপারে ক্রেডিট সুপারভাইজার ইয়াছমিন বেগম বলেন, আমি কয়েকজনের নামে ৭২ হাজার টাকা উত্তোলন করেছি তাতে দোষের কি, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার আল মিজানুর স্যার, হিসাব রক্ষক সাহাব মিয়া ও প্রোডাকশন ম্যানেজার রায়হান অনেক টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। প্রোডাকশন  ম্যানেজার রায়হানের সঙ্গে কথা বললে তিনি প্রশিক্ষণার্থী সদস্যদের নাম দিয়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলনের কথা স্বীকার করে বলেন, আমি অর্ধেকের বেশি টাকা পরিশোধ করেছি বাকিটাও করব। উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার আল মিজানুর বলেন, যা হওয়ার হয়ে গেছে এটা নিয়ে বাড়াবাড়ির কোনো দরকার নেই। আমি অফিসের সবাইকে বলেছি তারা কয়েকদিনের মধ্যে টাকা ফেরৎ দেবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, সদস্যদের নামে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের উপপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগের অনুলিপি পেয়েছি।  
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status