শেষের পাতা

ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফেরা

স্টাফ রিপোর্টার

২১ আগস্ট ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

বাস, ট্রেন, লঞ্চে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। জনস্রোত কেবল ট্রেন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালের দিকে। নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ আপন গন্তব্যে । যে যেভাবে পারেন ছুটছেন শিকড়ে। যানবাহন সংকট, বাড়তি ভাড়ার সঙ্গে কোনো কোনো মহাসড়কে যাত্রীদের সঙ্গী হয়েছে যানজট। কিঞ্চিত দুর্ভোগ হলেও হাসি মুখেই বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো মানুষ।  সোমবার সকাল থেকেই রাস্তায় রাস্তায় দেখা গেছে ব্যাপক জনস্রোত। এই স্রোত যেন বাঁধভাঙার মতোই।

জনগণের স্রোত বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট আর রেলস্টেশনের দিকে। ট্রেন, বাস, লঞ্চ ও বিমানে যে যেভাবে পারছেন বাড়ির দিকে ছুটছেন। এসব পরিবহনে তাই তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই অবস্থা। কয়েকটি ট্রেনে ব্যাপক শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। ঈদ স্পেশাল লালমণি এক্সপ্রেস ৫ ঘণ্টার উপরে দেরি করে কমলাপুর স্টেশন ত্যাগ করেছে।

ট্রেনটি ছাড়ার কথা ছিল সকাল সোয়া ৯টায়। ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়িয়ে দেয়। মহানগরসহ কোথাও কোথাও ছিল যানজট। অনেক যাত্রীর সময়মতো টিকিট না পাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অহরহ অভিযোগ করেছেন বহু যাত্রী। এমন আরো অনেক বাধা থাকার পরও বাড়ি ফিরছেন মানুষ। এক্ষেত্রে সড়ক, রেল, নৌপথের পাশাপাশি মানুষ ব্যবহার করছেন বিমানপথও। গতকাল সরকারি ও পোশাক শিল্পের কর্মীসহ বেসরকারি অফিসের কর্মীরা কোনো রকম হাজিরা দিয়েই বাড়ি দিকে রওয়ানা দিয়েছেন। আজ থেকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে বন্ধ হওয়ার ফলে চিরচেনা এই শহর অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেছে। এবার ঈদের তিন দিনের ছুটির সঙ্গে বাড়তি সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার ও শনিবার মিলে সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তারা মোট পাঁচ দিন ভোগ করবেন।

এদিকে গতকাল রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায় দেশের সব রুটে। মহাসড়কের কোথাও কোথাও খুবই ধীরগতিতে চলছিল যানবাহন। এ অবস্থায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল দূরপাল্লার যাত্রীদের। অন্যদিকে কমলাপুর এবং এয়ারপোর্ট স্টেশনে হাজার হাজার যাত্রী অপেক্ষায় ছিলেন বাড়ি ফেরার। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, ট্রেনগুলোতে প্রচণ্ড ভিড়। ছাদে চড়ে ও দরজায় দাঁড়িয়ে ভোগান্তি মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ।

ট্রেনের ভেতরে তিল ধারণের ঠাঁই নেই অবস্থা। বাধ্য হয়ে মানুষ প্রখর রৌদ্রের মধ্যে ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। বেশি যাত্রী নিয়ে ট্রেনগুলোকে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যেতে হয়েছে। কারণ আসন কিংবা টিকিট না পাওয়া গেলেও ঈদে যে বাড়িতে যেতে হবে। ট্রেনের দরজায় ঝুলে, ছাদে উঠে অনেকে গন্তব্যে গেছেন। ভিড়ের কারণে কেউ কেউ চেষ্টা করেও ট্রেনে উঠতে পারেননি। আর টিকিট করে সিট পেলেও অনেকে সিট খুজে পাননি। স্টেশনে পুলিশ যাত্রীদের ছাদে উঠতে বাধা দিলেও কিছুক্ষণ পর পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আবার ছাদে উঠেছেন ঘরমুখো মানুষ। আর এই ঈদের প্রায় প্রতিদিনই শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছিল। ঈদের বিশেষ ট্রেনের ক্ষেত্রে এ ঘটনা বেশি ঘটছে। ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীরা ১৭ই আগস্ট থেকে যাত্রা শুরু করেছেন। যারা ১১ই আগস্ট টিকিট সংগ্রহ করেছেন তারাই গতকাল ভ্রমণ করেছেন।

কিন্তু শনিবার থেকে বিভিন্ন ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে বেশি। গতকাল সকালেও অনেক ট্রেনই নির্দিষ্ট সময়ের ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরি করে ছেড়ে গেছে। কমলাপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মগুলোর কোথাও ফাঁকা ছিল না, সব দিকে যাত্রী আর যাত্রী। স্টেশনে পৌঁছানোর পর যারা কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের দেখা পেয়েছেন তারা ছুটছেন গন্তব্যে, বাকিরা থাকছেন অপেক্ষায়। জামালপুর কমিউটার ট্রেনের ছাদে করে বাড়ি যাচ্ছিলেন আকমল হোসেন। বললেন, এসে স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটেছি, কিন্তু ট্রেনের ভেতরে এত মানুষ যে ঢোকার মতো পরিস্থিতি নেই। বাধ্য হয়ে ছাদে উঠেছেন তিনি। চট্টগ্রাম ও সিলেটগামী ট্রেনগুলো সময়মতো ঢাকা ছাড়ছে। শিডিউলে বিপর্যয় হয়েছে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের ট্রেনযাত্রায়। সকাল সোয়া ৯টায় ছাড়ার কথা ছিল লালমণি ঈদ স্পেশাল ট্রেনটি ৫ ঘণ্টা দেরি করে সোয়া ২টায় কমলাপুর ছেড়েছে।

একই অবস্থা রংপুর এক্সপ্রেসেরও।  ঢাকা থেকে সকাল ৬টা ২০ মিনিটের দিকে খুলনার দিকে রওনা হওয়ার কথা ছিল সুন্দরবন এক্সপ্রেসের। এটি প্রায় দুই ঘণ্টা পর কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে যায়। সকাল ৬টায় রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেসের ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেনটি কমলাপুর আসেই সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে। সকাল সোয়া ৯টায় ট্রেনটি ছেড়ে যায়। এ ছাড়া চিলাহাটির নীলসাগর এক্সপ্রেসের কমলাপুর ছাড়ার নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ৮টা। কিন্তু চার ঘণ্টা দেরি করে দুপুর ১২টায় ট্রেনটি ঢাকা ছাড়ে।

দেওয়ানগঞ্জের তিস্তা এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৭টার পরিবর্তে সাড়ে ৯টায় কমলাপুর ছেড়ে যায়। রাজশাহী এক্সপ্রেস সাড়ে ১২টার ট্রেন যায় বিকাল ৪টায়। সিল্কসিটি ২টা ৪০ মিনিটে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটির সময় কয়েবার পরিবর্তন করে বিকাল ৫টা ২৫ মিনিটের ছাড়ার নির্দেশনা প্রদর্শন করা হয়। এই প্রসঙ্গে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, সকাল থেকে বেলা সোয়া ৪টা পর্যন্ত ৩৬টি ট্রেন ঢাকা ছেড়ে গেছে।

এর মধ্যে ধূমকেতু, সুন্দরবন, নীলসাগর, রংপুর ও লালমণি ঈদ স্পেশাল দেরি করে ছেড়েছে। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় স্বাভাবিক গতি নিয়ে ট্রেন চলতে পারে না। এ কারণে ট্রেনগুলো দেরি করে গন্তব্যে পৌঁছায়। এসব ট্রেনের ঢাকায় ফিরে আসতেও দেরি হচ্ছে। এ জন্য উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ট্রেনের সময়সূচি ঠিক রাখা যাচ্ছে না। যেখানে ২ মিনিট স্টেশনে অপেক্ষা করার কথা সেখানে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ট্রেন দেরিতে ছাড়ায় অপেক্ষমাণ যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। এ জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় রয়েছে।

জানা গেছে, সারাদিনে কমলাপুর থেকে ৬৮টি ট্রেন ছেড়ে যাবে। এদিকে সকাল থেকেই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ছিল গ্রামমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আরও তীব্র আকার ধারণ করে। যাত্রী বেশি থাকায় লঞ্চগুলো তাড়াতাড়ি ঘাট ছেড়েছে। সিট পাওয়ার জন্য অনেকেই রাত কাটিয়েছেন টার্মিনালে। এমন একজন ভোলাগামী যাত্রী সাদ্দাম। তিনি থাকেন নারায়ণগঞ্জ। গত রোববার রাতে এসে টার্মিনালে ঘুমান। কারণ হিসেবে বললেন, সিট না পেলে অনেক কষ্ট হয়। তার পক্ষে এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকার কেবিন নিয়ে বাড়ি ফেরা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, বাড়িতে যেতে কষ্ট হলেও গ্রামে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ অন্যরকম মজা। রাস্তায় সিএনজি ভাড়া দ্বিগুণ। বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী প্রায় সব লঞ্চের ছাদে যাত্রীদের দেখা গেছে। অন্যদিকে ভোর থেকে গাবতলী-মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের বেশ ভিড় ছিল। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের ইউনিক পরিবহনেরর কর্মকর্তারা বলেন, সকাল থেকে যাত্রীর বেশি চাপ ছিল। তবে রাতে চাপ বাড়বে। পর্যাপ্ত গাড়ি রয়েছে। সঠিক সময় ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে গাড়িগুলো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status