দেশ বিদেশ

লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান

মানবজমিন ডেস্ক

২১ আগস্ট ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:৪০ পূর্বাহ্ন

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দান। নিজেকে আল্লাহ্‌র কাছে সমর্পণ করে দিয়ে সমস্বরে হাজিরা উচ্চারণ করলেন- ‘লাব্বাইক  আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নিয়ামাতা, লাকা ওয়াল মুল্‌ক, লা শারিকা লাকা।’ অর্থাৎ- হাজির হে আল্লাহ হাজির, আপনার মহান দরবারে হাজির। আপনার কোনো শরিক নেই। সব প্রশংসা, নিয়ামত এবং সব রাজত্ব আপনারই। ২০ লক্ষাধিক হাজির এই ধ্বনিতে গতকাল প্রকম্পিত হলো আরাফাতের ময়দান। রোববার সন্ধ্যার ভারি বর্ষণ ও বজ্রপাতকে উপেক্ষা করে হাজিরা ছুটে যান আরাফাতের ময়দানে। কর্তৃপক্ষ সেখানে আগে থেকেই বন্যার সতর্কতা দিয়েছিল। তবে কোনো কিছুই তাদের থামাতে পারে নি।

ভারি বর্ষণের পর পবিত্র আরাফাতের ময়দানে নেমে আসে স্বস্তির ঠান্ডা। এই সেই ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দান যেখানে দাঁড়িয়ে প্রায় ১৪০০ বছর আগে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) তার বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এ সময় তিনি বিশ্ববাসীর জন্য রেখে যান দিকনির্দেশনা। আর তারই মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পায় ইসলাম। এই আরাফাতের ময়দানেই রয়েছে ঐতিহাসিক জাবাল আল রাহমা বা মাউন্ট অব মার্সি হিসেবে পরিচিত পাহাড়। গতকাল সারা দিন সেখানে আল্লাহর কাছে পানাহ বা গুনাহ থেকে মাফ চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হজযাত্রীরা।

করুণার পাহাড় বা জাবাল আল রাহমায় গতকাল সকাল থেকেই আরোহণ করতে থাকেন তারা। সেখানে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতে মশগুল হয়ে পড়েন অনেকে। পাহাড়ের পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে, বসে প্রার্থনায় অংশ নেন তারা। এ সময় আকাশ থেকে নিরাপত্তায় নজরদারি করা হয় হেলিকপ্টারে। সেলাইবিহীন সাদা দু-টুকরো কাপড়ে শরীর ঢেকে হাজির হন তারা। ফলে পুরো আরাফাতের ময়দান যেন এক সফেদ সমুদ্রে পরিণত হয়। গতকাল ফজরের নামাজ আদায় করে মিনা থেকে ১০ কিলোমিটার বা ৬ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে যাত্রা করেন হজ করতে যাওয়া হজযাত্রীরা। আরাফাতের ময়দানে গতকাল সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করেন তারা।

এর মধ্যে জোহর ও আছর দু-ওয়াক্তের নামাজ আদায় করেন একসঙ্গে। তার আগে আরাফাতের ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরায় খুৎবা শোনেন তারা। এ সময় সেখানে মুসলিম উম্মাহর প্রতি বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য  দেয়া হয়। আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়া ও সেখানকার ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করাকেই হজের প্রধান অংশ বলা হয়। তাই এ দিনকে হজের দিন বলা হয়। আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার আগে হাজিরা পবিত্র শহর মক্কা থেকে তাঁবুর শহর মিনায় গিয়ে হাজির হতে থাকেন। রোববার সন্ধ্যার পর থেকে তারা মিনায় সমবেত হওয়া শুরু করেন। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় পবিত্র হজের ৫ দিনের আনুষ্ঠানিকতা। মিনায় পুরো রাত অবস্থান করেন তারা।

সেখানে বাধ্যতামূলক ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। এরপর গতকাল ফজরের নামাজের পর তারা ছুটতে শুরু করেন আরাফাতের ময়দানের দিকে। কেউ পায়ে হেঁটে, হুইল চেয়ারে, বাসে করে, যে যেভাবে পারেন সেভাবেই ছোটেন আরাফাতের ময়দানে। মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই হজযাত্রীরা রওনা দেন মুজদালিফার দিকে। মুজদালিফায় গিয়ে একসঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করেন হাজীরা। সেখানেই রাত্রিযাপন করেন খোলা আকাশের নিচে। গতকাল স্থানীয় সময় সকালে কা’বা শরীফে পরানো হয় গিলাফ বা কিসওয়া।

প্রতি বছর ৯ই জিলহজ পবিত্র হজের দিন এই গিলাফ পরানো হয়। এদিনে মসজিদে হারামে মুসল্লির সংখ্যা কম থাকে। কারণ, হাজিসহ বেশির ভাগ মুসল্লি এদিন থাকেন আরাফাতের ময়দানে। কেউবা হজযাত্রীদের সেবায় থাকেন পথে। তাই এ দিনকে গিলাফ পরানোর দিন হিসেবে বেছে নেয়া হয়। হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দান থেকে ফিরে দেখতে পান মসজিদুল হারামের গায়ে নতুন গিলাফ। এ সময় মসজিদুল হারামের চারপাশে অনুচ্চ, অস্থায়ী একটি বেষ্টনী তৈরি করে নেয়া হয়। নতুন গিলাফ পরিয়ে পুরনোটি নামিয়ে ফেলা হয়। পরে তা কেটে মুসলিম দেশের সরকারপ্রধানদের উপহার দেয়া হয়।

ওদিকে রোববার হাজিরা যখন মিনায় সমবেত হন তখন শুরু হয় ভারি বর্ষণ। সেই বৃষ্টি ও বজ্রপাতকে উপেক্ষা করে ২০ লাখের বেশি হজযাত্রী সমবেত হন মিনায়। প্রায় এক ঘণ্টার মতো ধুলোঝড় হয় সেখানে। এরপরই শুরু হয় ভারি বর্ষণ। তবে কিছু সময় পরে সেখানে নেমে আসে স্বাভাবিকতা। তবে ভারি বর্ষণ ও বজ্রবৃষ্টির ফলে হজযাত্রীরা তাঁবুর ভিতরে অবস্থান করতে বাধ্য হন। সিভিল ডিফেন্স থেকে রোববার সন্ধ্যার দিকে বন্যা হতে পারে বলে সতর্কতা দেয়া হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারি বার্তা সংস্থা ডব্লিউএএম সোমবার স্থানীয় সময় ১২টা ১ মিনিটে টুইট করে জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সব হজযাত্রী নিরাপদে আছেন। সৌদি আরবের জেনারেল মেটেওরোলজিক্যাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি তীব্র বাতাস থাকার কারণে হজযাত্রীদেরকে সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান না করার বিষয়ে সতর্কতা দেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status