দেশ বিদেশ

চার্জশিটের আগে সরকারি কর্মচারী গ্রেপ্তারে অনুমতি লাগবে

বিশেষ প্রতিনিধি

২১ আগস্ট ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:৪০ পূর্বাহ্ন

চার্জশিট গ্রহণের আগে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত কোনো সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে। এমন বিধান রেখে ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনটি অনুমোদন দেয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এই অনুমোদনের কথা জানিয়ে বলেন, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে দায়ের করা ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। চার্জশিট হওয়ার পরে অ্যারেস্ট করার জন্য অনুমতি লাগবে না।

ফৌজদারি মামলার কোনো ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা এক বছরের বেশি মেয়াদে দণ্ডিত হয় তবে রায়ের দিন থেকে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত হবেন। তিনি বলেন, ফৌজদারি মামলায় এক বছরের কম সময় কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাকে ছোট অফেন্স যেমন- তিরস্কার, বেতন স্থগিতকরণ-অবনমতিকরণ এ রকম ছোট শাস্তি দিতে পারবে। দুর্নীতি দমন কমিশন বর্তমানে ফাঁদ পেতে সরকারি কর্মচারীদের ধরছে, এই আইন কার্যকর হলে সেটি বাধাগ্রস্ত হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাধাগ্রস্ত হবে না, একটু বিলম্বিত হবে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। অর্থাৎ চার্জশিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আমরা ধরে নিই যে চার্জশিট হলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয় তিনি দোষী।

এর আগে তো কাউকে দোষী না নির্দোষ সেটা বলা যাবে না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই আইনে সরকারি কর্মচারী সংক্রান্ত যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনেক বিষয় আছে, যেহেতু আইন বড় হয়ে যায় তাই বিধির জন্য রাখা হয়েছে, বিধি দিয়ে কাভার করা হবে। শফিউল আলম বলেন, খসড়া আইনে বলা হয়েছে মেধা, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হবে।

মেধা, দক্ষতা, জ্যেষ্ঠতা, প্রশিক্ষণ ও সন্তোষজনক চাকরি বিবেচনায় নিয়ে পদোন্নতি দেয়া হবে। শিক্ষানবিশকাল ও চাকরি স্থায়ীকরণ, প্রেষণ ও লিয়েন, বদলি, পদায়ন ও কর্মস্থল নির্ধারণ বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বেতন, ভাতা ও সুবিধা সরকারি গেজেট দিয়ে নির্ধারণ করে দিতে পারবে। বিদ্যমান বিধান ও আদেশ অনুযায়ী ছুটি দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ, ক্যারিয়ার প্ল্যানিং নিয়েও আইনে বলা আছে। কোন কর্মচারীর বিরুদ্ধে সরকারি দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে তাকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করে ক্ষতিপূরণ, অবমাননা, মানহানি বা অন্য কোনো মামলা হলে তিনি সরকারি আইন কর্মকর্তার সহায়তায় বা নিজ দায়িত্বে তা পরিচালনা করতে পারবেন।

এই মামলার খরচ সরকার বহন করবে। তবে দুর্নীতির অভিযোগে হলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে মামলা হলে সেই মামলা চালানোর অর্থ পাবে না। খসড়া আইনানুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের প্রার্থিতা সেবা দিতে হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যদি সেবা দিতে না পারে তবে সেবা প্রার্থীকে তা অবহিত করতে হবে। কোনো কর্মচারী ইচ্ছাকৃত বা অভ্যাসগতভাবে এই ধারার বিধান যদি লঙ্ঘন করে তবে অসদাচরণ ও ক্ষেত্রমতে অদক্ষতা বলে গণ্য হবে। তিনি বলেন, সেবাপ্রার্থী কোনো ব্যক্তির আবেদন না-মঞ্জুর বা প্রত্যাখ্যান হলে বা যুক্তিসঙ্গত সময়ে তা নিষ্পত্তি না করা হলে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করতে পারবেন।

কর্তৃপক্ষ আবেদন বিবেচনায় নিয়ে আদেশ দিতে পারবে। সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে কর্মচারীদের বিষয়ে সাফল্য, উদ্যোগ, উদ্ভাবনী প্রয়াস বা অবদানের জন্য প্রণোদনা, পুরস্কার, স্বীকৃতি বা সম্মানি দেবে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নিয়মিত অফিসে উপস্থিতি না হলে বেতন কাটা যাবে, এটা আগে অর্ডিনেন্সে ছিল। আচরণ ও শৃঙ্খলা আপিল বিধিমালা দিয়ে করা হবে। বিভাগীয় ব্যবস্থা বলবৎ আইন অনুযায়ী চলবে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী কারো কারণে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হলে দায়ী কর্মচারীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে। ক্ষতিপূরণের অর্থ দায়ী কর্মচারীর কাছ থেকে আদায় করতে মামলা করা যাবে। শফিউল আলম বলেন, সংক্ষুব্ধ কর্মচারীদের শাস্তির বিধান প্রেসিডেন্ট কর্তৃক দেয়া হওয়ায় তা আপিলযোগ্য হবে না। প্রেসিডেন্টের কাছে রিভিউ আবেদন করা যাবে। এক বছরের মধ্যে রিভিশন করতে পারবেন।

তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মচারী বিদেশে কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন না। কোনো কর্মচারী বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে তাকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিয়ে চাকরি অবসানের আদেশ দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা করার প্রয়োজন হবে না। আর এই আদেশই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। দ্বৈত নাগরিকত্ব যাদের আছে তাদের বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দ্বৈত নাগরিকত্ব নিতে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়। সরকারি কর্মচারী চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে ৩০ দিনের নোটিশ দিয়ে অবসরে যেতে পারবেন জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার জনস্বার্থে ২৫ বছর চাকরির পর যে কাউকে কারণ না দেখিয়েই অবসরে পাঠাতে পারবে।

চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে চাইলে যেকোনো সময় করা যাবে। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর কোনো ব্যক্তি বিদেশে চাকরি গ্রহণ, ব্যবসা, বিদেশযাত্রা করলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে না। এত দিন অবসরের পরেও এসব করতে হলে অনুমোদন নিতে হতো। কেন আইনটি করা হচ্ছে জানতে চাইলে শফিউল আলম বলেন, আমাদের কোনো আইন ছিল না, তাই নতুনভাবে এই আইনটি করা হচ্ছে। এই আইন প্রণয়নে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাও আছে। এই আইন কার্যকর হলে গুণগত পরিবর্তন হবে। সরকারি চাকরি আইন কার্যকর হলে এ সংক্রান্ত আগের ছয়টি আইন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status