এক্সক্লুসিভ

হামলাকারীরা অধরা

ভালো নেই আহত সাংবাদিকরা

শুভ্র দেব

১৯ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ৯:২১ পূর্বাহ্ন

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় হামলার শিকার সাংবাদিকদের কয়েকজন এখনও পুরো সেরে উঠতে পারেননি। চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরলেও নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে তারা নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ সেবন করছেন। কয়েকজন সাংবাদিক সুস্থ হয়ে কাজে ফিরলেও অনেকেই এখনো রয়েছেন বিশ্রামে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্বপালনকালে হেলমেট পরিহিত সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলার শিকার হন সাংবাদিকরা। গত ৪ ও ৫ই আগস্ট দুই দফা হামলা চালানো হয় তাদের ওপর। আহত সাংবাদিকরা দাবি করছেন, তাদের ওপর হামলাকারীরা হচ্ছেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী।

হামলার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদপত্রে হামলাকারীদের বেশ কয়েকজনের ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। তবে হামলার ১৫দিন অতিবাহিত হলেও এখনো কোনো হামলাকারীকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। ৫ই আগস্ট আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর যখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায় তখন বেধড়ক পেটানো হয় প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আহমেদ দীপ্তকে। রড, লাঠিসোটা দিয়ে তাকে মারধর করে মারাত্মভাবে আহত করা হয়। দীপ্ত মানবজমিনকে বলেন, আমার শরীরে এখনও অনেক ব্যথা আছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন দুই থেকে আড়াই মাস এই ব্যথা থাকবে। গতকালও আমি স্কয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলাম। চিকিৎসকরা আমার শরীর থেকে চারটি সেলাই কেটেছেন। তাদের পরামর্শে ব্যথানাশক ওষুধসহ অন্যান্য ওষুধ নিয়মিত খাচ্ছি।

তবে পুরোপুরি সেরে উঠতে আরো সময় লাগবে। দীপ্ত বলেন, ওইদিন আড়ংয়ের পাশের গলিতে যেখানে এপির ফটোসাংবাদিক আহাদ ভাইকে মারধর করা হয়েছিল তার কয়েকটা বিল্ডিং পরেই আমার অবস্থান ছিল। সেখানে আমিসহ আরো কয়েকজন সাংবাদিক দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন ছাত্রলীগের একটি মিছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে। তখন সেখান থেকে আমরাও দৌড় দিই। এ সময় হামলাকারীদের একজন আমার পায়ে আঘাত করলে আমি মাঠিতে পড়ে যাই। তারপর আরো কয়েকজন মিলে রড, লাঠি দিয়ে আমাকে মারধর করে। দ্বীপ্ত বলেন, আমার হাত, পা, পিঠে, নিতম্বে আরো অনেক স্থানে আঘাত পেয়েছি। রডের আঘাতগুলো অনেক স্থানে ধেবে গিয়ে কালো হয়ে গেছে।
ঘাড় ও কোমরের ব্যথায় এখনও কাতরাচ্ছেন কালের কণ্ঠের ফটো সাংবাদিক তারেক আজিজ নিশক। তিনি বাম কাত হয়ে শুতে পারেন না। চিকিৎসকরা তাকে আরো দুই সপ্তাহ বিশ্রামে থাকার কথা বলেছেন। পাশাপাশি নিয়ম করে ওষুধ সেবন করতে হবে। নিশক মানবজমিনকে বলেন, সেদিন আমি প্রথমে বুঝতে পারি নাই আঘাতটা এত গুরুতর হবে। সহকর্মীরা আমাকে পপুলার হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যাই। সেখানকার চিকিৎসকরা এক্সরে করলে গুরুতর আঘাতগুলো ধরা পড়ে। তারপর থেকে নিয়মিত চিকিৎসা চলছে। হাত-পা, পিঠসহ শরীরের অনেক স্থানে এখনো কালো দাগ আছে। বিশেষ করে কোমর ও ঘাড়ের ব্যথা খুবই কষ্ট দিচ্ছে। নিশক বলেন, ঘটনার দিন আমি বিজিবি সদর দপ্তরের ফটকের পাশের ফুটপাথে অবস্থান করছিলাম। শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে তখন ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল। আমার পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র এক শিক্ষার্থী দাঁড়িয়েছিল। ছাত্রলীগ কর্মীরা তখন তাকে মারধর করতে আসে। সে বারবার বলছিল আন্দোলনের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নাই।

তারপরও তারা তাকে মারধর করে। এ সময় আমার মোবাইল ফোনে কয়েকটা ছবি তোলার চেষ্টা করছিলাম। এই দৃশ্য দেখেই তারা আমাকে মারধর শুরু করে। আমি আমার নিজের পরিচয় দিলে তারা আরো বেশি ক্ষেপে যায়। তারা এত পরিমাণ আঘাত করছিল আমাকে যদি মাথায় হেলমেট না থাকত তবে হয়তো আরো বড় ধরনের কিছু হতে পারত।
অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) ফটো সাংবাদিক এএম আহাদের পুরো শরীরে এখনো ব্যথা। মারধরের সময় তার মাথায় জখম হয়। চিকিৎসকরা সেখানে বেশ কয়েকটি সেলাই করেন। সেই সেলাইগুলো কাটা হয়েছে। তবে তার দুই হাতে এখনও ব্যান্ডেজ রয়েছে। বর্তমানে এপির এই ফটো সাংবাদিক দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, ব্যথা নিয়েই চলছি। তবে ধীরে ধীরে সেরে উঠছি।

প্রতি রাতে ব্যথায় কাতরান নয়া দিগন্তের ফটো সাংবাদিক শরীফ হোসেন। হামলাকারীদের লাঠির আঘাতে তার দুই হাত ও পিঠে মারাত্মক আঘাত লাগে। সেই ব্যথা এখনও সারে নি। কিছুদিন অ্যান্টিবায়োটিক চলার পর এখন শুধু ব্যথানাশক ওষুধ চলছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন পুরোপুরি ব্যথা সারতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। মানবজমিনকে শরীফ হোসেন বলেন, সেদিন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সময় আমার অবস্থান ছিল সায়েন্সল্যাব এলাকার ব্রিজের উপর। ফ্রিলেন্স একজন ফটো সাংবাদিককে হামলাকারীরা বেধড়ক পেটাচ্ছিল। সেই ছবি নিতে গেলে আমাদের গণহারে ধাওয়া করে হামলাকারীরা। তখন সেই ধাওয়ার মধ্যেই আমি পড়ে যাই।

কোমরে ও পায়ের ব্যথা অনেকটা সেরে গেছে বণিকবার্তার ফটো সাংবাদিক পলাশ রহমানের। ল্যাবএইডে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়ার পর বাসায় থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই আছেন। পলাশ মানবজমিনকে বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর যখন হামলা চলে তখন ব্রিজের ওপর আমিসহ আরো কয়েকজন ফটোসাংবাদিক অবস্থান করছিলাম। আমাদেরকে ছবি তুলতে বাধা দেয়া হয়। তখন আমরা ব্রিজের উপর থেকে নামছিলাম। ঠিক তখনই হামলার শিকার হই। আমার সঙ্গের অনেকেই মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিল। তবে আমি নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছিলাম। হামলাকারীরা লাঠি দিয়ে আমাকে কয়েকটা আঘাত করে। এখন অবস্থা অনেকটা ভালো। ব্যথানাশক মলম ও ওষুধ চলছে। দাগগুলোও শুকিয়ে যাচ্ছে।

এ ছাড়াও আন্দোলন চলাকালীন হামলায় আহত হয়েছিলেন- মাবজমিন এর প্রধান ফটো সাংবাদিক শাহীন কাওসার, অনলাইন নিউজ পোর্টাল সারা বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি গোলাম সামদানি, নাগরিক টিভির স্টাফ রিপোর্টার আব্দুল্লাহ শাফি, আমেরিকাভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম জুমা প্রেসের রিমন, প্রথম আলোর সাজিদ হোসেন, নাগরিক টিভির কামরুল হাসান, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডি মর্নিংয়ের আবু সুফিয়ান জুয়েল, জনকণ্ঠের ইবনুল আসাদ জাওয়াদ, ফ্রিলেন্স ফটো সাংবাদিক রাহাত করিম, এনামুল হাসান, মারজুক হাসান, হাসান জুবায়ের ও এন কায়ের হাসিন। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status