এক্সক্লুসিভ

শুভকে হত্যা রোকসানার স্বীকারোক্তি

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

১৮ আগস্ট ২০১৮, শনিবার, ৯:০৪ পূর্বাহ্ন

ফেসবুকে অশ্লীল ছবি ছড়ানোর কারণে সুদূর চীনে বসেই সাবেক স্বামী মাঈন উদ্দিন ওরফে শাহরিয়ার শুভকে খুনের পরিকল্পনা করেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের  শিক্ষার্থী ডা. রোকসানা আক্তার (২২)।
সে মোতাবেক ১৫ই আগস্ট দেশে এসে ১৬ই আগস্ট বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর ফয়’স লেক লেকভিউ আবাসিক হোটেলে শুভকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর মাথাটি ফেলা হয় হোটেলের ডাস্টবিনে, আর দেহ তোষক মুড়িয়ে খাটের উপর ঢেকে রাখা হয়। এরপর ফের বিদেশ পাড়ি দেয়ার প্রস্তুতি নেন ডা. রোকসানা আক্তার। তবে তার আগেই চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হন তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদে ডা. রোকসানা আক্তার পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, ফেসবুকে অশ্লীল ছবি ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষোভ থেকে ছুরি ও চাপাতি দিয়ে শুভকে গলাকেটে হত্যার পর দেহ থেকে মাথাটি পৃথক করেছেন তিনি। এই হত্যার জন্য শুভ’র টাকায় চীন থেকে দেশে আসেন তিনি। এমন তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের খুলশি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. নাসির উদ্দিন।

তিনি জানান, খুনের কাজে ব্যবহৃত একটি ছুরি ও চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে রোকসানার মা নাছিমা আক্তারকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

শুক্রবার সকাল আটটার দিকে আটক করা হয় মা নাছিমা আক্তারকে। বৃহসপতিবার দিনগত রাত দুইটার দিকে ডা. রোকসানা আক্তারকে আটক করা হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরের ২ নম্বর গেট আল ফালাহ গলির মুখ থেকে।
নগরীর ফয়’স লেক এলাকার লেকসিটি মোটেল ম্যানেজার মো. ইলিয়াছ জানান, ডা. রোকসানা আক্তার ও মাঈন উদ্দিন ওরফে শাহরিয়ার শুভ ১৫ই আগস্ট বুধবার দিনগত রাত দেড়টার সময় হোটেলে আসেন। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা একটি কক্ষ ভাড়া নেন।

তিনি জানান, বৃহসপতিবার দুপুরের দিকে রোকসানা একা হোটেল থেকে বের হয়ে ঘণ্টা খানেক পর ফিরে আসেন। এরপর রাত নয়টা থেকে সাড়ে নয়টার দিকে ডা. রোকসানা আবার তড়িঘড়ি করে বের হচ্ছিলেন। এ সময় কোথায় যাচ্ছেন জিজ্ঞাসা করলে রোকসানা জানান, একটি টেইলার্সে কিছু ড্রেস সেলাই করতে দিয়েছি, সেগুলো আনতে যাচ্ছি। কাল শুক্রবার, কিছুক্ষণ পর দোকান বন্ধ করলে আর নিতে পারবো না।
মো. ইলিয়াছ জানান, রাত ১২টার দিকেও যখন ডা. রোকসানা ফিরেনি, তখনই পুলিশকে খবর দিই। আর পুলিশ এসে বাহির থেকে তালাবদ্ধ কক্ষটি খুলে লাশ উদ্ধার করে।

খুলশি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নাসির উদ্দিন বলেন, রাতে খবর পেয়ে হোটেলে গিয়ে কক্ষটি খোলা হয়। এরপর সিআইডি, পিবিআই, ডিবি ও এসবিকে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে র‌্যাবও ঘটনাস্থলে আসে। এরপর সকল সংস্থার প্রাথমিক কার্যক্রম শেষে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে তিনটার দিকে লাশ থানায় আনা হয়।
তিনি জানান, এই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মো. জাফর উদ্দিন বাদী হয়ে রোকসানা আক্তার পপিকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন।
নিহতের বড় ভাই মো. জাফর উদ্দিন বলেন, রোকসানা আক্তার পপি সমপর্কে মামাতো বোন। তারা ভাড়া বাসা নিয়ে থাকে নগরীর ২ নম্বর গেট আল ফালাহ গলির রশিদ ভবনে। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানার মেহেদী নগর গ্রামে। তার বাবার নাম আবু আহম্মদ।

তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি ছাগলনাইয়া জয়পুর বালুর চর এলাকায়। গ্রামের বাড়িতে যাওয়া আসার সুবাধে স্কুল জীবনেই শুভ’র সঙ্গে প্রেমের সমপর্কে জড়িয়ে যায়। ২০১২ সালে আমাদের কাউকে না জানিয়ে তারা দুইজন কোর্টে গিয়ে বিয়ে করে।

জাফর বলেন, বিয়ের খবর জানাজানি হওয়ার পর পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় রোকসানার মা নাছিমা বেগম। এরপর থেকে রোকসানার জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য শুভকে একের পর এক হুমকি দিতে থাকে। ২০১৪ সালে নাছিমা বেগম রোকসানাকে বাধ্য করে শুভকে তালাক দিতে। এরপর রোকসানাকে ডাক্তারি পড়তে পাঠিয়ে দেয়া হয় চীনে।
জাফর বলেন, গত দেড় থেকে দুই মাস আগে রোকসানা আবার শুভকে ফোন করা শুরু করে। পরে দেশে আসবে বলে টাকা চায়। শুভ দেশে আসা-যাওয়ার বিমান টিকিট ও তার কেনাকাটার জন্য দুই লাখ টাকা পাঠিয়ে দেয়। সে টাকা পেয়ে দেশে এসে মাত্র একদিনের মাথায় খুন করে শুধু তার জীবন থেকে নয়, পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে।
জাফর বলেন, শুভ জয়দেবপুর সরেজমিন উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পর্যন্ত পড়েছে। জয়দেবপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সমপাদক ছিল শুভ। স্থানীয়ভাবে সে একজন বালু ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।

থানায় দায়ের করা মামলায় মো. জাফর উদ্দিন উল্লেখ করেছেন, গত ১৫ই আগস্ট হযরত শাহজাহালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামে রোকসানা। বিকাল তিনটার দিকে শুভ রোকসানাকে রিসিভ করে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়।
রাত দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশির ফয়’স লেকসিটি মোটেল ফাইভের দ্বিতীয় তলার ২০৩নং কক্ষ ভাড়া নিয়ে ওঠে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শুভকে ঘুমের মধ্যেই ধারালো ছুরি ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। এরপর মাথা হোটেল কক্ষের রক্ষিত ডাস্টবিনে এবং দেহ তোষক দিয়ে মুড়িয়ে খাটের উপর ঢেকে রাখে।
শাহরিয়ার শুভর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, চীনে থাকাকালে পপি মীরসরাই এলাকায় অপর এক যুবকের সঙ্গে সমপর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ খবর পেয়ে শাহরিয়ার শুভ ২/৩ দিন আগে শুভ পপির ওই প্রেমিককে খুঁজতে যায় চট্টগ্রামের একটি কোচিং সেন্টারে। সেখানে পপির সেই প্রেমিককে হুমকি-ধমকি দিলে পপি শুভর সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশে আসে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status