প্রথম পাতা

১২ শিক্ষার্থীর জামিন হয়নি

কোটা আন্দোলনের নেত্রী লুমা রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার

১৭ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন

ইডেন কলেজের ছাত্রী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুর নাহার লুমাকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। শুনানি শেষে বিচারক ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেত্রীকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে হওয়া ছাত্র আন্দোলনে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডে নেয়া হলো। অপরদিকে গতকাল পৃথক আদালতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষার্থীর পক্ষে জামিন চাওয়া হলে তা নামঞ্জুর হয়।

সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে হওয়া ছাত্র আন্দোলনে লুমা ফেসবুকের মাধ্যমে উস্কানি দেন। গত ৪ঠা আগস্ট লুমা ফেসবুকে দুটি পোস্ট দেন। তা হত্যা ও ধর্ষণের যে গুজব ছড়ানো হয়েছিল তাকেই সমর্থন করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কিছু কথা স্বীকার করেছেন। বিস্তারিত জানতে তার ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে ৩ দিন মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডে তাকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

জানা যায়, এর আগে সাইবার ক্রাইম ইউনিট কর্তৃক রমনা থানায় দায়ের করা তথ্য-প্রযুক্তি আইনে ৫৭ (২)/৬৬ ধারায় দায়ের করা এক মামলায় ইডেন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের এই ছাত্রীকে আসামি করা হয়। বিষয়টি জানার পর সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ক্ষিদ্রচাপরি চর এলাকায় দাদার বাড়ি চলে যান লুমা। সেখান থেকে গত বুধবার ভোরে ঘুমন্ত লুমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। যদিও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে গত বুধবার দিবাগত রাত ১০টায়। তারপর গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। লুমা গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার বাঐখোলা গ্রামের মৃত প্রফেসর আবদুল কদ্দুস সরকারের মেয়ে। তার দাদার বাড়ি সিরাজগঞ্জে।

এদিকে গতকাল একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেপ্তার হওয়া ১২ শিক্ষার্থীর জামিন চেয়ে আদালতে আবেদন করা হলে তা নামঞ্জুর হয়। যাদের পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়েছিল তারা হলেন, শাখাওয়াত হোসাইন নিঝুম, শিহাব শাহরিয়ার, সাবের আহমেদ উল্লাস, আজিজুল করিম অন্তর, রাশেদুল ইসলাম, মো. হাসান, মুসফিকুর রহমান, রিদুয়ান আহমেদ, রেজা রিফাত আহমেদ, সীমান্ত সরকার, ইফতেখার হোসাইন ও মাসাদ মুর্তুজা বিন আহাদ। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট লস্কর সোহেল রানা ও অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কেশব রায় চৌধুরী শুনানির পর তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। বাড্ডা ও ভাটারাসহ একাধিক থানায় দায়ের করা পৃথক মামলায় তারাসহ ২২ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এখন কারাগারে। ইতিপূর্বে গত ৭ ও ৯ই আগস্ট তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনে সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও উস্কানির অভিযোগে ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, সাউথ-ইস্ট, ব্র্যাক, আইইউবি ও আইইউবিএটি’এর এসব শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের শিক্ষার্থীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দা পুলিশ।

শিক্ষার্থীদের মুক্তি চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বিবৃতি: নিরাপদ সড়ক, কোটা সংস্কারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের ওপর ‘অমানবিক নিপীড়ন’ বন্ধে সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ জন শিক্ষক। বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে ওই আন্দোলনে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তিও দাবি করেন তারা। বিবৃতিতে শিক্ষকরা বলেন, ‘গত কয়েক মাস যাবত রাষ্ট্র কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন ইস্যুতে বেশকিছু নিপীড়নের ঘটনা সম্মন্ধে আপনারা সবাই অবগত আছেন। গত ২৯শে জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলনকে উপলক্ষ করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্র নেতৃবৃন্দের ওপর নির্মম আক্রমণ চালানোর মধ্যে দিয়ে এই নিপীড়নের সূত্রপাত হয়। শুধু আক্রমণ নয়, এই আক্রমণে আহত ছাত্রদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করা হয়। এদেরকে গোপনে চিকিৎসা নিতে হয়েছে, সরকারি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছে, এমনকি রাষ্ট্রীয় রোষাণলের হাত থেকে বাঁচার জন্য কিছু প্রাইভেট হাসপাতাল পর্যন্ত এদের চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে। শিক্ষার্থীদের ওপর এই ধরনের রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বাংলাদেশের ইতিহাসে অভূতপূর্ব।

বিবৃতিতে বলা হয়, কোটা আন্দোলনের এই নির্মম অধ্যায়ের রেশ কাটতে না কাটতেই নিরাপদ সড়ক আন্দোলন শুরু হয় দুই স্কুল শিক্ষার্থীর সড়ক দুর্ঘটনায় করুণ মৃত্যুর কারণে। স্কুল শিক্ষার্থীদের এই সুশৃঙ্খল আন্দোলন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে ব্যাপকভাবে আন্দোলিত করে। কিন্তু কিছুদিন পরেই আমরা দেখতে পাই স্কুল-কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের ওপরে কোটা আন্দোলনের নির্মমতার পুনরাবৃত্তি ঘটে। এই নিপীড়নের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা মাঠে নামলে তাদের ওপরেও অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে। শুধু তাই নয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ জন এবং বুয়েটের একজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে হাজতে পাঠানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা থানা ঘেরাও করে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। সংবাদপত্র থেকে বুধবার আমরা জানতে পারছি, ‘আন্দোলনে উস্কানির অভিযোগে ৫১ মামলায় ৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা সংবাদপত্রের চিত্রে দেখেছি গ্রেপ্তারকৃত ছাত্র-ছাত্রীদের কোমরে দড়ি বেঁধে দাগী আসামিদের মতো আদালতে নিয়ে আসা হচ্ছে। এসব অত্যন্ত গর্হিত মানবাধিকার লংঘন এবং একটি ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রয়াস। এই ছাত্রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো এরা লাঠিসোটা, ইটপাটকেল দিয়ে রাস্তার গাড়ি ভাঙচুর করে এবং পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। কিন্তু এই গ্রেপ্তারকৃত ছাত্ররা কীভাবে এই গুরুতর অপরাধগুলোর সঙ্গে জড়িত তার প্রমাণ এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী গণমাধ্যমকে সরবরাহ করেনি। অথচ অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি নিরাপত্তা বাহিনীকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অপরাধী এবং অপরাধের প্রমাণ গণমাধ্যমে সমপ্রচার করতে। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রদের মতো নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রদের বিরুদ্ধে ওই ধরনের কোনো প্রমাণ সাধারণ জনগণের কাছে প্রকাশিত হয়নি।’

‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় কিছু সংবাদকর্মী, বিশেষ করে ফটোসাংবাদিকরাও নির্মমভাবে আক্রমণের শিকার হন। এই আক্রমণকারীদের ছবি, পরিচয় জাতীয়  দৈনিকগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হলেও এখন পর্যন্ত কাউকেই আইনি প্রক্রিয়ায় আনা হয়নি। শুধু তাই নয়, কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়ক এই দুই আন্দোলনেই আমরা দেখছি যে যে ছাত্ররা পুলিশ এবং সরকারি ছাত্র সংগঠন দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছে, আহত হয়েছে, নিগৃহীত হয়েছে তাদেরকেই আবার সম্পূর্ণ বেআইনি প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করে নাজেহাল করা হয়েছে এবং হচ্ছে। পক্ষান্তরে যেই সরকারি ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা এই ভয়ঙ্কর নিপীড়ন সংঘটিত করেছে, তাদের বিস্তারিত পরিচয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরেও এখন পর্যন্ত একজনের বিরুদ্ধেও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এই ধরনের নির্লজ্জ পক্ষপাতমূলক আচরণ অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং গর্হিত অপরাধ। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে এবং শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের ওপর ধারাবাহিকভাবে সংঘটিত এহেন হামলা ও নিপীড়নে আমরা ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত।

বিবৃতিতে শিক্ষকরা বলেন, আমরা আমাদের সন্তানতুল্য এসব শিক্ষার্থীর প্রতি আইনের সঠিক প্রয়োগ চাই এবং অন্ততপক্ষে ঈদের আগে জামিনে তাদের মুক্তি চাই। এই শিক্ষার্থীদের বাবা-মা আত্মীয়-স্বজনের হাহাকার আমরা প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমে জানছি, পড়ছি এবং এগুলো আমাদের তীব্রভাবে ব্যথিত করছে। তাই আমরা অবিলম্বে আমাদের ছাত্রদের ওপর এই অমানবিক নিপীড়নের সমাপ্তির জন্য সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আহ্বান জানাচ্ছি।’

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় অভিভাবকরা
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ শিক্ষার্থীর ঈদ কি কারাগারেই কাটবে? গ্রেপ্তারের পর থেকে কয়েক দফা জামিন আবেদন করেছেন তাদের আইনজীবীরা। কিন্তু আদালত প্রতিবারই তাদের জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।

বারবার জামিন আবেদন খারিজ হওয়াতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের স্বজন ও সহপাঠীরা এ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, আন্দোলনে হেলমেট বাহিনীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। শিক্ষার্থীদের কারাবাস দীর্ঘ হলেও হেলমেট বাহিনীকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিচার করা হচ্ছে না। তারা মুক্তভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা।

অপরদিকে কোটা আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ৭ নেতারও ঈদও জেলেই করতে হতে পারে। তাদের জামিনের বিষয়ে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় গত ৬ই আগস্ট নর্থ সাউথ, ইস্ট ওয়েস্ট, সাউথ ইস্ট, ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় ওই ২২ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। তারা সবাই ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, সাউথ ইস্ট, ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদেরকে আটক করে বাড্ডা ও ভাটারা থানায় করা দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। এরমধ্যে বাড্ডা থানার মামলায় ১৪ ছাত্রকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- রিসালাতুল ফেরদৌস, রেদোয়ান আহমেদ, রাশেদুল ইসলাম, বায়েজিদ, মুশফিকুর রহমান, ইফতেখার আহম্মেদ, রেজা রিফাত আখলাক, এএইচএম খালিদ রেজা, তারিকুল ইসলাম, নূর মোহাম্মাদ, সীমান্ত সরকার, ইকতিদার হোসেন, জাহিদুল হক ও হাসান। ভাটারা থানার মামলার আসামি ৮ শিক্ষার্থী হলেন আজিজুল করিম, মাসাদ মরতুজা বিন আহাদ, ফয়েজ আহম্মেদ আদনান, সাবের আহম্মেদ, মেহেদী হাসান, শিহাব শাহরিয়ার, সাখাওয়াত হোসেন ও আমিনুল এহসান।

আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন ফারুক মানবজমিনকে বলেন, শিক্ষার্থীদের জামিনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। গত শুনানিতে আমি আদালতে ওই শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও শারীরিক অসুস্থতার কথা তুলে ধরেছি। আমি মনে করি আদালত  শিক্ষার্থীদের জন্য একটু আন্তরিক হলেই তাদের জামিন সম্ভব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, শিক্ষার্থীরা এমন কোনো বড় অপরাধ করেনি যার জন্য তাদেরকে এভাবে বিচারের আওতায় আনতে হবে। থানায় যে মামলা হয়েছে সেখানে শিক্ষার্থী উল্লেখ করা হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগও নাই। তাহলে কেন তাদের জামিন দেয়া হবে না। তিনি বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে আমি তিনটি কথা বলবো। প্রথমত মামলা যখন করা হয়েছে সেটা চলুক। তার সুষ্ঠু তদন্তও করা হোক। কোনো জামিন অযোগ্য মামলায় শিক্ষার্থীদের বিচার করা উচিত নয়। আমি মনে করি তাদের জামিনও হবে মুক্তিও দেয়া হবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীদের যদি বিচার করেন তবে তাদেরও বিচার করেন। যারা পুলিশের সঙ্গে হেলমেট পরে নেমেছিল। আক্রমণ তারাই করেছিল। তাদের তো বিচার হচ্ছে না। তাদের পরিচয়ও খুঁজে বের করছেন না। তাদেরকে শাস্তি না দিয়ে বরং পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। অথচ শিক্ষার্থীদের জামিন পর্যন্ত দিচ্ছেন না। আপনারা কেন এত কড়া অবস্থানে গেলেন। একটা রাষ্ট্র কি তরুণদের বিরুদ্ধে এভাবে যায়। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন কোথাও যেন কোনো অন্যায় না হয়। অকারণে যেন কেউ রাষ্ট্র দ্বারা হেনস্তার শিকার না হয়। বঙ্গবন্ধুর সেই কথাগুলোও আমরা কানে দিচ্ছি না। তৃতীয়ত, আমি একজন শিক্ষক হিসেবে দাবি জানাচ্ছি দয়াকরে শিক্ষার্থীদের স্নেহের চোখে দেখুন। শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি তারা কোনো ক্রমেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না কাউকে। বরং তারা দেশের জন্য অনেক বড় বড় পুরস্কার নিয়ে আসবে। তাদেরকে আপনারা মুক্তি দিয়ে ক্লাসে ফিরিয়ে নিয়ে যান, লালন পালন করুন। প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকে কথা নেন তারা যেন আর কোনো আন্দোলনে শামিল না হয়। দয়াকরে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করবেন না। সামনে ঈদ তাদেরকে ঈদ করতে দিন। তিনি বলেন, আমার সাড়ে চার দশকের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি তারা দেশের জন্য বিপদ হবে না বরং সম্পদ হবে।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক  বলেন, আমি মনে করি অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেয়া হোক। তাদের বিরুদ্ধে কোনো রকম মামলা মোকদ্দমা রাখা ঠিক না। তবে সবই সরকারের ইচ্ছা। আমরা বলতে পারি লিখতে পারি কিন্তু সরকার তো কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। সরকার বলছে, এসব বিষয় নিয়ে কোনো অনুগ্রহ দেখানো যাবে না। তাদের কোনো ক্ষমা নাই। কিন্তু সরকার কেন তাদেরকে অপরাধী সাব্যস্ত করছে, কেনই বা বলছে তাদের কোনো ক্ষমা নাই সেটা নিয়েই প্রশ্ন।

এদিকে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সাত নেতাকে আসন্ন ঈদে কারাবাসে থাকতে হতে পারে। পরিবারের সদস্যদের ছাড়াই হাজতিদের সঙ্গেই তাদের এবছর ঈদ করতে হতে পারে। তারা হলেন, পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, মশিউর রহমান, রাতুল সরকার, জসিম উদ্দিন, ফারুক, তরিকুল ইসলাম ও এপিএম সোহেল। কারণ তাদেরও জামিন আবেদন নাকচ করেছেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত। আদালতের এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামি পক্ষের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেছেন। শুনানির দিন তাদের জামিন হবে কি হবে না সেটিই এখন অপেক্ষার বিষয়। এর আগে ৩০শে জুলাই ৬ জনের জামিন আবেদন নাকচ করা হয়। তার পরে গত সপ্তাহে গাজীপুর থেকে রাতুল সরকার নামে আরেক নেতাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এই সাত নেতা ছাড়া বাকি নেতারাও পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভিসির বাসায় ভাঙচুর, পুলিশকে মারধর, কর্তব্যকাজে বাধা, ওয়াকিটকি ছিনতাই। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা চারটি মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক মানবজমিনকে বলেন, মানবাধিকার দিক থেকে শিক্ষার্থীরা আদালত থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা পাওয়ার কথা। আদালতও এসব বিষয় বিবেচনা করে। কারণ শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার একটা বিষয় থাকে। তার একটা বছর নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার শারীরিক অসুস্থতারও বিষয় আছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status