শেষের পাতা

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতি

বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ঘিরে গণগ্রেপ্তার চলছে

মানবজমিন ডেস্ক

১৬ আগস্ট ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ঘিরে গণগ্রেপ্তার চলছে বলে মন্তব্য করেছে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সরকার ভিন্নমত দমন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে সংস্থাটি নির্বিচারে গ্রেপ্তার বন্ধ, ভিন্নমত প্রকাশের দায়ে আটকদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংস হামলার ঘটনায় দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বুধবার নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

বিবৃতিতে সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের মুখ বন্ধ করার জন্য একটি অস্পষ্ট আইনের ব্যবহার করা  হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট অনুসরণ করে ইতিমধ্যেই কর্তৃপক্ষ সরকারের সমালোচনা করার দায়ে কয়েক ডজন মানুষকে আটক করেছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর আওয়ামী লীগ সমর্থকরা রামদা, লাঠি-সোটা ও রডের পাইপ দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার কোন সমালোচনা সহ্য করছে না। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর চালানো সাম্প্রতিক গণগ্রেপ্তারে আতঙ্কজনক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যা বাকস্বাধীনতাকে ব্যাপকভাবে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত এটা মেনে নেয়া যে, সমালোচনা হলো ক্রিয়াশীল ও সুষ্ঠু গণতন্ত্রের একটি অংশ। সরকারের উচিত আইসিটি আইনের পরিবর্তে এমন আইনের প্রচলন করা যাতে বাকস্বাধীনতা সমুন্নত থাকে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২৯শে জুলাই দ্রুত গতির একটি বাসের ধাক্কায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে আসে। প্রতিবাদী তরুণরা নিরাপদ সড়ক, প্রশাসনের জবাবদিহি ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার দাবি জানায়। পরে তারা নিরাপত্তা বাহিনীর টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেটের শিকার হন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমর্থকরা তাদের ওপর সহিংসতা চালায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর সরকার সমর্থকদের হামলার সময় পুলিশ পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। পরে এই সহিংসতার বিষয়ে যেকোনো ধরনের সমালোচনা বন্ধ করতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। বিপুলসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী থাকেন, শহরের এমন একটি অঞ্চলে অভিযান চালায় ঢাকার পুলিশ। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, পুলিশ সব বাসা-বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা খুঁজতে তারা দ্বারে দ্বারে গিয়ে মোবাইল ফোন চেক করেছে।

আটককৃতদের একজন বিখ্যাত আলোকচিত্রী ও মানবাধিকার কর্মী শহিদুল আলমকে নয় দিন ধরে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, পুলিশ কাস্টডিতে তাকে মারধর করা হয়েছে। ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর দায়ে গত ৪ই আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদের জামিন না-মঞ্জুর করে কাস্টডিতে রাখা হয়েছে। প্রায় সব গ্রেপ্তারই করা হয়েছে ৫৭ ধারায় আইসিটি আইনে। এই ধারাটি অশ্লীল, মানহানিকর বা অপবাদমূলক কোনো প্রচারণা এবং আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে, রাষ্ট্র বা কোনো ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে বা কারো ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করতে পারে এমন প্রচারণা চালানোর দায়ে যেকোনো ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করার অনুমতি দিয়েছে।

এই অস্পষ্ট ও ব্যাপকভাবে বিস্তৃৃত আইন বছরের পর বছর সমালোচনা দমন করতে ব্যবহৃত হচ্ছে। আগে বাংলাদেশ সরকার মেনে নিয়েছিল যে, ওই আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। বলেছিল, বাকস্বাধীনতার লাগাম টেনে ধরার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। এরপরেও তারা এমন কার্যক্রম চালাচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের বিবৃতিতে সাইবার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম শামীমের করা মন্তব্য উল্লেখ করেছে। গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ৫৭ ধারার আইসিটি আইন খুবই অস্পষ্টভাবে বর্ণিত একটি আইন, যা বর্তমানে সমালোচনা বন্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। ওই আইনে দায়ের করা মামলাগুলোর অর্ধেকেরও কমসংখ্যক মামলায় চূড়ান্ত রায় দেয়া হয়। কিছু মামলা পুরোপুরি সাজানো, যা মানুষকে হয়রানি করতে দায়ের করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status