এক্সক্লুসিভ

গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি ও পুলিশি নির্যাতনের তদন্ত চেয়ে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের খোলা চিঠি

মানবজমিন ডেস্ক

১৬ আগস্ট ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৪০ পূর্বাহ্ন

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার আন্দোলনকারীদের মুক্তি ও তাদের পুলিশি নির্যাতনের তদন্ত দাবি করেছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের উদ্দেশে লেখা এক খোলা চিঠিতে সংস্থাটি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময় নাগরিক অধিকারের তীব্র লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এর সমাধানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিধি অনুসারে পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা। পাশাপাশি সংকট সমাধানের জন্য চিঠিতে পাঁচ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।  

চিঠিতে বলা হয়, ২৯শে জুলাই দ্রুতগামী একটি বাসের ধাক্কায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে ঢাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ৪ঠা আগস্ট বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। অভিযোগ উঠেছে, ওই দুর্ঘটনায় আরো তিন শিক্ষার্থী নিহত ও একজন গুরুতর আহত হয়েছে। সরকার দুর্ঘটনায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা গোপন করছে। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের সহিংসতার শিকার হয়েছে। ২০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। পরে এদের কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ৫ই আগস্ট ঝিগাতলা ও সায়েন্স ল্যাব অঞ্চলে হওয়া সহিংসতায় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের অন্তত চার সাংবাদিক ও সাতজন ফটো-সাংবাদিক আহত হয়েছেন। কিছু হামলাকারী হেলমেট পরিধান করলেও সাংবাদিকরা তাদের কয়েকজনকে ছাত্রলীগ কর্মী বলে শনাক্ত করেছেন।

আন্দোলনকে ঘিরে ঢালাও গ্রেপ্তার, বিশেষ করে আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। আন্দোলন নিয়ে আল-জাজিরায় একটি সাক্ষাৎকার দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে বাড়ি থেকে তুলে নেয়া হয়। পরে তার বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় আইসিটি আইনে মামলা দেয়া হয়। যা প্রায়ই বাংলাদেশের সমালোচক, মানবাধিকার কর্মী ও অন্য ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। শহিদুল অভিযোগ করেছেন, পুলিশ কাস্টডিতে তাকে মারধর করা হয়েছে।

ফেসবুকে সরকার-বিরোধী পোস্ট ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দেয়ার কারণে সিরাজগঞ্জে সাখাওয়াত হোসেন শাকিল নামের এক আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকেও ৫৭ ধারায় আইসিটি আইনে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এছাড়া আন্দোলনকারী ২২ শিক্ষার্থীকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। আরো পাঁচজনের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করায় তারা এখন জেলে বন্দি রয়েছেন।
গত কয়েক মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপরেও হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। যেসব শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকরা এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন, তারাও টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। পরে কয়েকজন আন্দোলনকারী ছাত্রকে আটক করা হয়। এখন এদের অন্তত ছয়জন জেলে বন্দি রয়েছে। আইনজীবীদের  দেয়া তথ্য অনুসারে, পুলিশি হেফাজতে তাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল কোভেন্যান্ট অন সিভিল এন্ড পলিটিক্যাল রাইটস (আইসিসিপিআর), কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চার অ্যান্ড আদার ক্রুয়েল, ইনহিউম্যান অর ডিগ্রেডিং ট্রিটমেন্টের আওতায় বাংলাদেশের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার ও তাদের ওপর নির্যাতন চালানো তার স্পষ্ট লঙ্ঘন। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন মনে করে, আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের সহিংসতা জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক মূল নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
গত মে মাসে অনুষ্ঠিত মানবাধিকার পরিষদের বৈশ্বিক পর্যালোচনায় বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন বিষয় উত্থাপন করা হয়। তখন বাংলাদেশ সরকার ইতিবাচক সাড়া দেয়। এজেন্ডা-২০৩০ অনুসারে, নাগরিক স্বাধীনতার সুরক্ষা বিধান বাংলাদেশের অন্যতম অঙ্গীকার। এসব নীতির   পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ৪
লঙ্ঘনের অর্থ হলো, বাংলাদেশ এসডিজিতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
পরিস্থিতির উত্তরণে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন পাঁচ দফা সুপারিশ করেছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি। প্রথমত, মানবাধিকারের চর্চা করার দায়ে আটককৃত সকল আন্দোলনকারী, বিশেষ করে আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এবং আটকদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা বলেছে সংস্থাটি। দ্বিতীয়ত, আন্দোলনকারী ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশ ও অন্য বেসরকারি ব্যক্তিদের আক্রমণের ঘটনায় নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও কার্যকর তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবি তুলেছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। তৃতীয়ত, ৫৭ ধারার আইসিটি আইনের মতো যেসব আইন বাক-স্বাধীনতা রোধ করে সেগুলো পুনর্বিবেচনা ও সংস্কার করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। চতুর্থত, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও অন্য অ-রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিদের এই বার্তা দেয়া যে, তাদের কোনো সহিংসতা সহ্য করা হবে না। পঞ্চমত, আন্দোলনকারী, নাগরিক সমাজ ও অধিবাসীদের জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করা, যাতে কোনো ধরনের হয়রানি, গ্রেপ্তার ছাড়াই মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সভা-সমাবেশের অধিকার থাকবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status