শেষের পাতা

রাখাইনে যা দেখে এলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

দীন ইসলাম

১৫ আগস্ট ২০১৮, বুধবার, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে এখনো রয়ে গেছে পোড়া চিহ্ন। পুড়ে যাওয়া কিছু নারকেল গাছে সবুজ পাতা জন্মেছে। তবে ওই সব গাছের ফাঁক দিয়ে দেখা যায় কাঠ পুড়ে কয়লা হয়ে থাকার দৃশ্য। হেলিকপ্টার দিয়ে গেলে এসব চিহ্ন আবছা চোখে পড়বে। কিন্তু সড়ক পথে গেলে স্পষ্টত এসব কিছু দেখা যায়। এবার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত প্রায় ৭০ হাজার একর এলাকায় কোনো ফসল আবাদ হয়নি। গেল সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম মাহমুদ আলীর নেতৃত্বাধীন টিম এসব চিত্র সরজমিন দেখে এসেছে। গত ৮ই আগস্ট রাতে রাখাইন পরিস্থিতি দেখতে মিয়ানমার যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিবসহ প্রত্যাবাসন বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের ১৪ জন সদস্য। ৪ দিনের মিয়ানমার সফরে যান তারা। এ সফরে দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। পাশাপাশি তারা প্রত্যাবাসনে কতটা প্রস্তুত রয়েছেন এ বিষয়টি হেলিকপ্টার ও সড়ক পথে সরজমিন দেখে আসেন। 

সফরের সময় ১০ই আগস্ট প্রতিনিধিদলকে হেলিকপ্টারযোগে রাখাইনের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরিয়ে দেখানো হয়। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচির দপ্তরের একজন সিনিয়র মন্ত্রী ছাড়াও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সাত জন হেলিকপ্টারে করে রাখাইনের পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন। প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকারের প্রস্তুতির বিষয়টি সরজমিন দেখানো হয়। এরপর সড়ক পথে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ড, তৈরিকৃত ট্রানজিট ক্যাম্প এবং বেশিদিন অপেক্ষমাণ স্থাপনা বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে ঘুরিয়ে দেখানো হয়। এ সময় মিয়ানমারের
পক্ষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মংডু জেলার ডেপুটি কমিশনারসহ বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয় মিয়ানমার পক্ষকে। এ সময় তারা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে মিয়ানমার জানিয়েছে, নিজেদের বাড়িঘরে ফিরতে পারবেন রোহিঙ্গারা। ওইভাবেই সবকিছু প্রস্তুত করা হচ্ছে। তারা জানান, প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরুর পর একদিন রোহিঙ্গাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে থাকতে হবে। এরপর বেশ কয়েকদিন একটি স্থায়ী আবাসনে থাকতে হবে। ওই স্থায়ী স্থাপনায় ছবি তোলা, ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহসহ নানা কার্যক্রম চালাবে মিয়ানমার সরকার। এরপর ওই স্থায়ী ক্যাম্পেই দাতা সংস্থা ইউএনডিপি বাড়িঘর নির্মাণের অর্থ তুলে দেবে। ওই অর্থ দিয়েই নিজেদের জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবেন রোহিঙ্গারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাখাইনে মসজিদগুলো এখনো তালাবদ্ধ। এসব মসজিদের আশেপাশে রয়েছে কড়া নজরদারি।

ট্রানজিট ক্যাম্প ও বেশিরভাগ স্থায়ী স্থাপনার নির্মাণকাজ ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। ভারত কিছু ট্রানজিট ক্যাম্প নির্মাণ করে দিচ্ছে। ওই সব ক্যাম্পের কাজ চলমান রয়েছে। এদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রাখাইনের পরিবেশ উন্নয়নের উপর জোর দেয়া হয়। বলা হয়, সব ধরনের সহিংসতা বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া, যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাবাসন কাজ শুরু করতে হবে। ১২ই আগস্ট মন্ত্রী এবং তার সফরসঙ্গীরা ঢাকা ফিরে আসেন। তারা জানান, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এ সফরটি বেশি ফলপ্রসূ হয়েছে। কারণ আগের সফরে মিয়ানমার সরকার সবকিছু কেমন যেন লুকাতে চাইতো। কিন্তু এবার সড়ক পথে ও হেলিকপ্টারযোগে তারা সবকিছু দেখাতে কার্পণ্য করেনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status