বিশ্বজমিন

গজনির নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে তালেবানরা

দুই শতাধিক আফগান সেনা নিহত

মানবজমিন ডেস্ক

১৪ আগস্ট ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:২৯ পূর্বাহ্ন

আফগানিস্তানের গজনি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে তৃতীয় দিনের মতো সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছে তালেবান জঙ্গিরা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যুদ্ধে ২০০ এরও অধিক আফগান নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছেন। দেশটির দক্ষিণাঞ্চল রাজধানী কাবুল থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তালেবানরা দাবি করছে গজনি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সরকারপক্ষ এ দাবি অস্বীকার করলেও জানিয়েছে, আরো সৈন্য পাঠাতে না পারলে গজনির নিয়ন্ত্রণ তালেবানদের হাতে চলে যেতে পারে। তবে গজনি থেকে পালিয়ে আসা সাধারণ নাগরিক ও অসমর্থিত সূত্র থেকে ভিন্ন পরিস্থিতির কথা জানা গেছে। তারা বলছে, শহরটির বেশিরভাগ এলাকা তালেবানরা দখল করে নিয়েছে। আফগানিস্তানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী জঙ্গিদের ওপর বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তালেবান যোদ্ধারা সাধারণ জনগণের মধ্যে মিশে থাকায় এ হামলা খুব বেশি সফল হতে পারছে না।

রোববার গজনিতে গত কয়েকদিনের মধ্যে সবথেকে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে তালেবানরা। শহরটিতে এদিন ১০০ এরও অধিক পুলিশ ও সেনাসদস্য নিহত হয়েছে। তালেবানরা এদিন গজনির বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে পুলিশের হেডকোয়ার্টার ও বেশ কিছু সরকারি কার্যালয়। একইসঙ্গে গজনি থেকে ১৪৫ কিলোমিটার দূরের আরজিস্তান জেলা দখল করে নিয়েছে জঙ্গিরা। সেখানেও অনেক বেসামরিক মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ফারিয়াব প্রদেশের আরেকটি সেনাঘাঁটিতে তালেবান হামলায় অবস্থানরত অর্ধেকের বেশি সেনা নিহত হয়েছেন। সেখান থেকে সেনারা জানিয়েছে, অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন না করা হলে তারা আর একরাতও টিকতে পারবে না। এ ঘাঁটি থেকে ২৭৫ কিলোমিটার দূরে জঙ্গল বাঘ নামক স্থানে তালেবানরা আরো ৭ পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে।

এদিকে সরকার যাতে গজনি উদ্ধারে নতুন করে সেনা পাঠাতে না পারে সেজন্য তালেবান যোদ্ধারা শহরটিতে প্রবেশের মহাসড়কে মাইন পুঁতে রেখেছে। এতে শহরবাসী কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। মহাসড়ক এড়িয়ে ক্ষেত-মাঠ পেরিয়ে যারা গজনি থেকে পালাতে পেরেছেন তারা জানিয়েছেন, সেখানে বহু সরকারি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। শনিবারেই তালেবান যোদ্ধাদের গজনির প্রতি মোড়ে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে।

গজনি হাসপাতালের পরিচালক বাজ মোহাম্মদ হেমাত জানিয়েছেন, সেখানে ১১৩টি মৃতদেহ ও ১৪২ জন আহত সেনা সদস্য এসেছে। হাসপাতালটির ধারণ ক্ষমতা শেষ হয়ে এসেছে। বাধ্য হয়ে আহতদের করিডোর ও যেখানেই জায়গা পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। হাসপাতালটি থেকে খুব কাছেই যুদ্ধ চলছে। প্রতি ঘণ্টাই আমরা নতুন নতুন মৃতদেহ ও আহত সেনাদের ভর্তি করছি। এখানকার পরিস্থিতি কল্পনার থেকেও ভয়াবহ। অনেক সেনা সদস্যদের মৃতদেহ শহরের রাস্তায় পড়ে আছে।

তালেবানদের হাতে গজনির পতন হলে তা হবে তাদের জন্য এখন পর্যন্ত সবথেকে বড় বিজয়। আফগান সেনাপ্রধান মোহাম্মদ সারিফ ইয়াফতালি দাবি করেছেন, গজনির পতন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আফগান সেনাবাহিনী তালেবান যোদ্ধাদের হঠাতে প্রবল পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কাবুলে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘শহরটির কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো আফগানবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আফগান যোদ্ধারা মানুষের ঘরবাড়িতে লুকিয়ে রয়েছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে থেকে হামলা চালাচ্ছে।’

ক্রমশই আফগানিস্তানের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। তালেবানরা তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আফগান সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে পরিস্থিতি। তালেবানরা প্রমাণ করেছে, তারা একইসঙ্গে সমগ্র আফগানিস্তান জুড়ে সফলভাবে হামলা চালাতে সক্ষম। অপরদিকে সরকার শুধুমাত্র গজনিতে যুদ্ধ করেও জঙ্গিদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। তালেবান ও সরকার উভয়ের জন্যই গজনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। তালেবানদের উদ্দেশ্য গজনিতে তাদের ঘাঁটি বানিয়ে রাজধানী কাবুলের দিকে অগ্রসর হওয়া। কাবুল থেকে গজনির দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটারেরও কম। পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত, যেটা সফল আক্রমণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গজনি দখল করতে পারলে আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশগুলো রাজধানী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এতে আফগান সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আরো কিছু এলাকার। ২০১৫ সালে কুন্দুজ থেকে বিতারিত হওয়ার পর আর কোনো শহরে তালেবানদের নিয়ন্ত্রণ নেই। গজনি দখল করতে পারলে আফগান সরকারের এতদিনের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status