অনলাইন

কেন শহীদুল আলমের পাশে ভারতের রঘু রাই?

১৩ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ৯:১২ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ন'দিন আগে যে আলোকচিত্রী শহীদুল আলমকে তার ঢাকার বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তার সমর্থনে পথে নেমেছেন ভারতের আলোকচিত্রী ও সাংবাদিকরা।

ভারতের নামী ফোটোগ্রাফার রঘু রাই ইতিমধ্যেই শহীদুল আলমের মুক্তি দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন।

বিবিসিকে তিনি বলেন, মি. আলম সত্যি কথা বলার কারণেই রাষ্ট্রের রোষানলে পড়েছেন বলে তার বিশ্বাস।

মুম্বাই প্রেস ক্লাব ও শহরের চিত্র-সাংবাদিকদের সমিতিও মি আলমের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।

কিন্তু পাশের দেশের একজন আলোকচিত্রীর জন্য ভারতে কেন এই সমর্থনের ঢল?


গত সপ্তাহেই ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইতে প্রায় শ'দুয়েক সাংবাদিক ও আলোকচিত্রী মুম্বাই প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হয়েছিলেন শহীদুল আলমের নি:শর্ত মুক্তি চেয়ে।

প্রতিবেশী দেশের একজন চিত্র সাংবাদিকের সমর্থনে এ ধরনের আন্দোলন ভারতে বিরল ।

তবে এই আন্দোলনের সুরটা বেঁধে দিয়েছিলেন ভারতের সম্ভবত: সবচেয়ে বিখ্যাত আলোকচিত্রী রঘু রাই।

বন্ধু শহীদুল আলম আটক হওয়ার দুদিনের মধ্যেই তার মুক্তি চেয়ে প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে ফেসবুকে একটি খোলা চিঠি লেখেন মি রাই।


তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "বাংলাদেশ আমাকে ২০১২ সালে সে দেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। আর সেই বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীর অধিকারেই আমি তাকে ওই চিঠি লিখেছি।"

"আসলে কী হয়, একটা দেশের সরকার যখন ক্রমশ জনবিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে এবং মানুষের ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে তাকে - তখনই শাসক সব ধরনের প্রতিবাদের কন্ঠরোধ করতে চায়।

কিন্তু শহীদুল আলমের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভ করে আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, সেটা তো কার্যত দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগ। এই মারাত্মক অভিযোগ নিয়ে কী বলছেন রঘু রাই?

"পৃথিবীর কোথাওই কিন্তু এমন জিনিস ঘটা উচিত নয়।"

 

"দেখুন, সরকার ও বিচারবিভাগ যখন দূষিত হয়ে পড়ে - এবং তারা যখন প্রতিশোধপরায়ণ হতে চায়, তখন তারা যা খুশি করতে পারে। আমার-আপনার সেখানে কিছুই করার থাকে না।"

"আর শহীদুলকে আমি তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চিনি, সে একজন অসাধারণ মানুষ ও অ্যাক্টিভিস্ট - সত্যি কথা বলার জন্য কেন তাকে শাস্তি পেতে হবে এটাই আমি বুঝতে পারছি না", বলছিলেন তিনি।

মুম্বাই প্রেস ক্লাবের সামনে যারা শহীদুল আলমের সমর্থনে জড়ো হয়েছিলেন তারা প্রায় কেউই অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে মি. আলমকে চিনতেন না, কিন্তু তারপরও তার মুক্তির দাবিতে পথে নামতে তারা দ্বিধা করেননি।

কেন তারা ওই পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা ব্যাখ্যা করে মুম্বাই প্রেস ক্লাবের সচিব লতা মিশ্র বিবিসিকে বলছিলেন, "আমি নিশ্চিত ভারতে যদি আজ এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটে তাহলে কিন্তু আমাদের প্রতিবেশী দেশের সাংবাদিকরাও আমাদের পাশে দাঁড়াবেন, সমর্থন করবেন।"

 

"যেভাবে আমাদের দেশগুলোতে সংবাদমাধ্যমকে চাপে রাখার বা কন্ঠরোধ করার চেষ্টা হচ্ছে তাতে সরকারের ওপর পাল্টা চাপ সৃষ্টি করার জন্য এটাই একমাত্র রাস্তা।"

শহীদুল আলম চোরের মতো চুপ না-থেকে নিজেকে সত্যিকারের মানুষ বলে প্রমাণ করেছেন, শায়েরি বলে তুলনা দিচ্ছিলেন রঘু রাই। বলছিলেন, "যো চোরোঁ কা তরহ ইন্তেজার করেঁ, ও ইনসান নেহি হ্যায়, শান নেহি হ্যায়!"

ভারতের বুকার-পুরস্কারজয়ী লেখিকা অরুন্ধতী রায়ও মুখ খুলেছেন শহীদুল আলমের সমর্থনে।

ভারত থেকে এই যে জোরালো প্রতিবাদ উঠে আসছে, সেটাকে বাংলাদেশ সরকার উপেক্ষা করতে পারবে না বলেই তাদের বিশ্বাস।

 সূত্র- বিবিসি
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status